ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিকে হেয় করতেই রাজাকারের তালিকা ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বিএনপিকে হেয় করতেই রাজাকারের তালিকা ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপিকে হেয় করতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার না করে এত দিন পর প্রকাশ করেছে, তা কতটুকু সঠিক হয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। সুষ্ঠু তালিকা নির্ধারণ এবং প্রকাশ কেবল মুক্তিযোদ্ধারাই করতে পারেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের দলই সেটা করতে পারে। সোমবার দুপুরে বিজয় দিবসে শেরে বাংলানগরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন। এর আগে সকাল ১০টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখান থেকে ফিরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, এই সরকার তার নিজের রাজনৈতিক প্রয়োজনে হীন উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন তালিকা তৈরি করেছে এবং বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই সমস্ত তালিকা তারা প্রকাশ করেছে। এই এতদিন পরে, ৪৯ বছর পরে এই রাজাকারের তালিকা কতটুকু সঠিক হয়েছে, না হয়েছে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার জন্য যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু সেই চেতনা হরণ করে নেয়া হয়েছে, গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষের স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে। ফখরুল বলেন আমরা এখানে শপথ নিয়েছি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার। এবারের বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রবিবার সরকার প্রথমবারের মতো রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রথম ধাপে এই তালিকায় ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নাম রয়েছে। এই তালিকায় এমন সব ব্যক্তিদের নাম রয়েছে যারা পরবর্তীতে বিএনপি সরকারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের নাম রয়েছে। খালেদা জিয়া ’৯১ সালে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেন আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে। এছাড়া জিয়াউর রহমানের সময়ে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানীদের স্থানীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির সহায়তায় বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সকাল ১০টায় বিএনপির পক্ষ থেকে সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল চেতনা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। দুর্ভাগ্যের বিষয় দেশ আজ সম্পূর্ণ গণতন্ত্রবিহীন হয়ে পড়েছে। মানুষের কোন অধিকার নেই, ভোটের অধিকার নাই। গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হরণ করে নেয়া হয়েছে।’ দুর্নীতি মামলায় দ-িত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকা নিয়েও আক্ষেপ করেন দলটির মহাসচিব। বলেন, দীর্ঘ নয় বছর তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন আপসহীনভাবে। তিন বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন জনগণের ভোটে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে আজকে নির্মমভাবে, অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে তাকে। মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার চেতনায় জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে এ দেশে গণতন্ত্র আবারও মুক্ত হবে। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অলিখিত ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ৯ মাস যুদ্ধ করে এই দিনে একটি স্বাধীন ভূখ- পেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যের কথা ৪৯ বছর পরে এই দেশ সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রবিহীন হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। তাকে আজকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিএনপির নেতাদের মধ্যে মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডাঃ দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল প্রমুখ।
×