ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণিল ও আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণিল ও আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাঙালীর বিজয়ের ৪৮তম বছর পূর্তিতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য ও আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় সোমবার প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য এই কুচকাওয়াজে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখা ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অগ্রযাত্রার কথা অতিথিদের জানানো হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় রাষ্ট্রপতি প্যারেড স্কোয়ারে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল মোঃ মাহফুজুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আরিফুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সেনা নৌ ও বিমানবাহিনী বিএনসিসি বিজিবি পুলিশ র‌্যাব আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা সুসজ্জিত এই কুচকাওয়াজে অংশ নেন। বিজয় দিবস প্যারেড-১৯ এর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি সাভার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আকবর হোসেন ও উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদ। নীল রঙের স্যুট ও সাদাশার্ট পরা রাষ্ট্রপতি খোলা জীপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও পরে অভিবাদন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, তিন বাহিনীর প্রধানরা অভিবাদন মঞ্চে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন। কুচকাওয়াজে বিভিন্ন বাহিনীর সর্বমোট ২৪ কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে সালাম প্রদান করে। কুচকাওয়াজ অংশগ্রহণকারী সম্মিলিত যান্ত্রিক বহরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৯ আর্টিলারি ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রকিব উদ্দিন খান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন মিশনের প্রধান এবং বিশিষ্টবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অভিবাদন মঞ্চের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল প্রতিকৃতি রাখা হয়। এর দু’পাশে ছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দু’পাশে জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের ৭ বীরশ্রেষ্ঠর ছবি রাখা হয়। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কয়েক হাজার মানুষ দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। কুচকাওয়াজে আর্মি, নেভাল এভিয়েশন ও র‌্যাব ফ্লাইপাস্ট করে রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানায়। কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নতুন সংযোজিত বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম প্রদর্শিত হয়। পদাতিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের পর অত্যাধুনিক রণসাজে সজ্জিত দল রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়। এ ছাড়া ওয়ার ডগ ও সম্মিলিত অশ্বারোহী কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সুসজ্জিত গাড়িবহর কুচকাওয়াজে উন্নয়নের কথা প্রদর্শন করে। এ ছাড়া বিমান বাহিনীর কে-৮ ডব্লিউ, এফ-৭ বিজিওয়ান, ইয়াক ১৩০ ও মিগ-২৯বি যুদ্ধ বিমানের এরোবেটিক ডিসপ্লে দর্শকদের মুগ্ধ করে। এ ছাড়া দুঃসাহসিক প্যারাকমান্ডোদের ফ্রি ফল জাম্প অপারেশন ডিসপ্লে কুচকাওয়াজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। বিমান বাহিনীর অংশগ্রহণে রাষ্ট্রপতিকে ‘ফ্লাইং স্যালুট’ দেয় যুদ্ধ বিমান মিগ-২৯। যুদ্ধ বিমানগুলো বর্ণিল ধোঁয়া উড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়। ফ্লাইপাস্টের নেতৃত্ব দেন এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ সাঈদ হোসেন। সবশেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে ৬শ’ সদস্যের সম্মিলিত বাদকদল রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়। এবারের কুচকাওয়াজে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্যান্ড কন্টিনজেন্ট অংশ নেয়। এর নেতৃত্ব দেন সুবেদার লক্ষ্মীধর মহাপাত্র। এছাড়া কুচকাওয়াজের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জাতীয় পতাকা, রাষ্ট্রপতির পতাকা ও বিভিন্ন বাহিনীর পতাকাসহ প্যারাসুট জাম্প। কুচকাওয়াজ শেষে বর্ণিল ‘ডে ফায়ারওয়ার্কস’ প্রদর্শিত হয়। কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারেডে অংশ নেয়া কন্টিনজেন্ট কমান্ডারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
×