ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভালুকায় খাদ্য সঙ্কটে বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯

 ভালুকায় খাদ্য সঙ্কটে বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন  প্রজাতির পশুপাখি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা, ময়মনসিংহ, ৬ ডিসেম্বর ॥ খাদ্যের অভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি। নির্বিচারে বনজ ও ফলদবৃক্ষ কর্তন, ফসলি ও জলাভূমি ভরাট করে অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা নির্মাণ, প্লাবনভূমি দখলে নিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মৎস্যচাষ করা ইত্যাদি কারণে পশুপাখি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি হবিরবাড়ী বনে খাদ্যাভাবে প্রায় ২ হাজার বানরের দুরবস্থা দেখে স্থানীয় শিল্পপতি হাজী শহিদুল ইসলাম দয়াপরবশ হয়ে তার লোকজনের মাধ্যমে দু’একদিন পর পর বানরগুলোকে খাবার হিসেবে খাবার সরবরাহ করছেন। বানর দলের জন্য মুড়ি, পাউরুটি, বিস্কিট, কলাসহ নানা ধরনের খাবার দেয়া হয়। খাবার খেতে দলবেঁধে হবিরবাড়ি বিট অফিসের কাছে সকাল-সন্ধ্যায় বানরদল ছুটে আসে। বানরের পাশাপাশি শেয়াল, বিভিন্ন পাখিও এখন ওই অফিসের পাশে অবস্থান করে। এলাকাবাসী জানান ওই বনে শত শত বানর এখনও বসবাস করে কিন্তু বন এলাকায় কোন খাদ্য না পেয়ে এরা দলবেঁধে কৃষকের বিভিন্ন ফসল নষ্ট করে। শিল্পপতি হাজী শহিদুল ইসলাম খাবার দেয়ায় বানর দল এখন কৃষকদের ফসল কম নষ্ট করছে। এলাকার প্রবীণ লোকেরা জানান খাল-বিল, নদী-নালা, ফল-ফলাদি ও বনজ বৃক্ষের আচ্ছাদনে সমৃদ্ধ ভালুকায় বহু প্রজাতির পশুপাখি সব সময় চোখে পড়ত। মেছোবাগ, বনো শূয়র, সজারু, বন বিড়াল, খেকশিয়াল, বাগডাসা, খরগোশ, কাঠবিড়ালী, বেজি, গুঁইসাপ, মুখপুড়া হনুমান, বানর ইত্যাদিতে ভরপুর ছিল ঝাড় জংলা গাছপালা। অথচ মনুষ্যসৃষ্ট নানা জটিলতায় আজ হারিয়ে গেছে এসব প্রাণীর বেশির ভাগই। গাছে গাছে ভূতুম পেঁচা, শকুন, লালচিল, গাংচিল, ঈগল, হলদে পাখি, কাঠকুড়ালী, বানাশ পাখি, বাদুর, ইষ্টিকুটুম, টিক্কা ময়না, টিয়া, বাবুই, বুলবুলি, ঘুঘু, সাদা বক, কানিবক, সারস, ডাহুক, কালেম, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, হটটিটি, বলাকা ইত্যাদি আরও কত নাম না জানা পাখি। কিছু পাখি খালবিলের পোকামাকড় ছোট-বড় মাছ খেয়ে বাঁচত আর কিছু গাছের ফলমূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বেঁচে থাকত। বর্তমানে জল জঙ্গল কোথাও পশুপাখির নিরাপদ আবাস স্থল ও খাদ্যের পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় ক্রমশ এরা প্রকৃতি হতে হারিয়ে যাচ্ছে। মৎস্য খামারে একটা দুটা মাছ খায় বলে জালপেতে ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি মারা হচ্ছে। অথচ এসব বিষয়ে কোন নজরদারি নেই। বনের পশুপাখি সংরক্ষণে স্থানীয় বন বিভাগের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ ছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত কালো পানি খাল বিল ও নদী নালায় ফেলার কারণে পশুপাখির খাদ্য পোকা মাকর মাছসহ জলজ প্রাণী বিনষ্ট হওয়ায় পশু পাখির ক্ষতি সাধন হচ্ছে।
×