ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

জুতা রফতানি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

 জুতা রফতানি  বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশে তৈরি জুতার বড় বাজার এখন যুক্তরাষ্ট্রে। বাজারটিতে দীর্ঘদিন ধরে সর্বোচ্চ পোশাক রফতানি করে আসছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। আর কয়েক বছর ধরে জুতা রফতানিতেও ভাল করছেন এ দেশের রফতানিকারকরা। ফলে বছরের ব্যবধানে দেশটিতে জুতা রফতানি দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বৈশ্বিক জুতার বাজার প্রায় ২২৫ বিলিয়ন ডলারের। বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি জোড়া জুতা উৎপাদন করে এ বাজারের শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। তবে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। পর্তুগালভিত্তিক জুতা প্রস্তুতকারকদের সংগঠন পর্তুগিজ ফুটওয়্যার, কম্পোনেন্টস, লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন (এপিআইসিসিএপিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী জুতা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার ইয়ারবুকের সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৬ কোটি মানুষের দেশে ৩৫ কোটি জোড়ার বেশি জুতা উৎপাদন করা হয় বাংলাদেশে। কিন্তু এই উৎপাদিত বিশাল জুতার মধ্যে সব জুতা হালাল নয়, এখানে সকল চামড়া হালাল প্রাণীর নয়। ভাল মানের জুতা কিংবা হালাল জুতা সামগ্রী পরিধান করলে যে কোন স্কিনের অসুখ থেকে নিরাপদ থাকা যায় বলে দাবি করছে ইউএস-বাংলা ফুটওয়্যারের ব্র্যান্ড ভাইব্রেন্ট। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের জুতা রফতানি কমলেও ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, কম্বোডিয়া, ব্রাজিল ও বাংলাদেশের বেড়েছে। বাজারটিতে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে কেবল বাংলাদেশের জুতা রফতানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল এ্যান্ড এ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ কোটি ৬২ লাখ ডলার মূল্যের ৪৬ লাখ ২১ হাজার জোড়া জুতা রফতানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ডলারের ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার জোড়া জুতা। সেই হিসাবে এবার রফতানি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চামড়ার জুতাই বেশি রফতানি হয়। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রফতানি হওয়া ১২ কোটি ৬২ লাখ ডলারের মধ্যে ১১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারেরই চামড়ার জুতা রফতানি হয়েছে। বাজারটিতে জুতা রফতানিতে দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ভাল করছে। ২০১৭ সালে ১১ কোটি ৩৩ লাখ এবং গত বছর ১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলারের জুতা রফতানি হয়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল এ্যান্ড এ্যাপারেলের-অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জুতার বাজার আড়াই হাজার কোটি ডলারের বেশি। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১ হাজার ৯৬২ কোটি ডলারের জুতা আমদানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তারা। তার মধ্যে চীন রফতানি করেছে ৯৬৯ কোটি ডলারের জুতা। অবশ্য গত বছরের একই সময়ে দেশটি রফতানি করেছিল ১ হাজার ৬১ কোটি ডলারের জুতা। তার মানে চলতি বছর চীনের রফতানি কমে গেছে ৯২ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে জুতা রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশটি রফতানি করেছে ৫১০ কোটি ডলারের জুতা। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তাদের রফতানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ার জুতা রফতানি বেড়েছে প্রায় ১০ কোটি ডলারের। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটি রফতানি করেছে ১২৬ কোটি ডলারের জুতা। তারপর ইতালি ১১৪ কোটি, ভারত ৩৪ কোটি, কম্বোডিয়া ৩৩, মেক্সিকো ২৯, স্পেন ১৭, ডমিনিকান রিপাবলিক ১৫, ব্রাজিল ১৫ কোটি ডলারের জুতা রফতানি করেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা চীন থেকে কিছু ক্রয়াদেশ অন্য দেশে সরাচ্ছে। তা ছাড়া ভিয়েতনামেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই টিম্বারল্যান্ড, মেসিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে জুতা কিনছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলো চামড়াবিহীন জুতা আমদানি করে বেশি। এ্যাপেক্স, বে, লেদারেক্স ফুটওয়্যারসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান জুতা রফতানির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের জুতা রফতানির ৬০-৬৫ শতাংশের বেশি যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। তারপরই ১৭-১৮ শতাংশ জুতা রফতানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
×