ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

বিশ্ববাণিজ্য সহজ করবে মুক্তবাজার অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

বিশ্ববাণিজ্য সহজ করবে মুক্তবাজার অর্থনীতি

২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। তখন অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য সরকার ব্যবসাবাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজ করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সাক্ষরের চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা, ভুটান, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। ২৩ নবেম্বর বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ‘ব্যবসা সহজীকরণ; সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া’ শীর্ষক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন, ‘বিশ্ববাণিজ্য ভাল করতে হলে বাণিজ্যে দক্ষতা অর্জন ও জটিলতামুক্ত বাণিজ্যের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার সেই কাজই করে যাচ্ছে। এছাড়াও দেশের কর্মক্ষম যুবশক্তির প্রায় অর্ধেক নারী। এ বিপুল পরিমাণ নারী জনশক্তিকে পিছনে রেখে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই দেশে মহিলাদের ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের বিপুল কর্মক্ষম জনশক্তি রয়েছে। এদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কারিগরি শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশে এখন পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে উঠেছে। তৈরি পোশাক রফতানিতে চীনের পর ভিয়েতনাম বাংলাদেশের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই ভিয়েতনামকে মোকাবেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ ও দক্ষ করতে হবে।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক ব্লগপোস্টে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর যে দেশ অত্যন্ত দরিদ্র ছিল, সেই দেশের গড় বৃদ্ধির হার এখন ৮ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জন বৈশ্বিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। সেই পর্যায় থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে। ৫ বছরের মধ্যে এই উত্তরণপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নীত হওয়ার মানে হলো দেশের মোট জাতীয় আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি মানবসম্পদ, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বেড়েছে। প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানের চেয়ে দ্রুতগতিতে বড় হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে, এর তিন বছর পর এলডিসিভুক্ত দেশের বাণিজ্য সুবিধাগুলো আর থাকবে না। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে বিশ্ববাণিজ্য প্রসারের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) করার বিকল্প নেই। তাই বাংলাদেশ রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য নতুন বাজার খুঁজছে। রাশিয়াসহ সিআইএসভুক্ত দেশগুলো এবং ব্রাজিলসহ মারকসভুক্ত দেশগুলোতে এ দেশের তৈরি পোশাকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এসব বাজারে তৈরি পোশাক পাঠানো সম্ভব হলে রফতানি আয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। উচ্চ শুল্কহারের কারণে বাংলাদেশ এসব দেশে পণ্য রফতানি করতে পারছে না। তবে আশার কথা হলো যেসব দেশে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেসব জায়গায় রফতানি বাণিজ্য শুরু করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। এর চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবেলা করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। ব্রাজিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিতে চায়, তবে তারা স্থানীয় গরুর মাংস বাংলাদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। জানা যায় এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কেননা আগে দেশের শিল্প ও স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার কারণেই বাংলাদেশে গরুর মাংস আমদানির প্রয়োজন হচ্ছে না। সবদিক বিবেচনা করে বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্টি ৬৮ শতাংশ। ফলে জনসংখ্যা বিবেচনায় আমরা সোনালী সময় পার করছি। এ ধরণের জনমিতিক সুবর্নকাল থাকে ৩০ থেকে ৩৫ বছর। যা একবারই আসে। এ সময় শেষ হবে ২০৪০ সাল নাগাদ। তাই এ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে রফতানি বানিজ্য সম্প্রসারণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রসঙ্গত, কোন প্রতিকূলতা বা বাধা বিপত্তি ছাড়াই একটি দেশের অভ্যন্তরের বা বাইরের যেকোন পণ্য বেচা-কেনার সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখার নামই হলো মুক্তবাজার বা খোলাবাজার। এ বাজারের মূল ভিত্তি হলো পূর্ণ প্রতিযোগিতা। মুক্তবাজার অর্থনীতি কোন বাহ্যিক চাপ, সরকারী বা বেসরকারী কোন বিশেষ হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ এবং যে কোন কৃত্রিম প্রভাব মান্য করে না। এ বাজারের দুটি প্রধান শর্তই হলো-পূর্ণ প্রতিযোগিতার স্বীকৃতি এবং ক্রেতা ও ভোক্তার সার্বভৌমত্ব। এখানে অস্বাভাবিক মুনাফার কোন অস্তিত্ব নেই। ফলে এ বাজারে ক্রেতা শোষণ অন্য যে কোন বাজারের চেয়ে কম হয়। ভোক্তা স্বল্পমূল্যে বিদেশী পণ্য ভোগের সুযোগ পায়। এতে বাণিজ্য ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়। এ বাজারের মূল চালিকা শক্তি ব্যক্তিস্বার্থ। বাংলাদেশ ১৯৯১ সালে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করে। এ বাজারের উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা রয়েছে তা হলো মুক্তবাজার অর্থনীতি দেশের সম্পদসমূহের সুষমবণ্টন নিশ্চিত করে। দেশে নতুন নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টি করে। বিদেশের বাজারেও আমাদের দেশের পণ্যের বাজার সৃষ্টি করে। ফলে রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। আগামীতে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে এ বাজারের সুযোগ-সুবিধা কতটা নিতে পারবে শুধু সময়ের অপেক্ষা।
×