ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্গীতজ্ঞ মোবারক হোসেন খানের ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ১০:১৪, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

  সঙ্গীতজ্ঞ মোবারক  হোসেন খানের  ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী আয়েত আলী খাঁর ছেলে সঙ্গীতব্যক্তিত্ব মোবারক হোসেন খান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। রবিবার সকালে ঘুমের ভেতর চলে গেছেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। এ খবর নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে অধ্যাপক রিনাত ফৌজিয়া খান। বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তার বাবা। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা ছিল তার। রবিবার ভোরে তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইয়াসমীন খেয়াল করেন মোবারক হোসেন খানের শরীর নিথর হয়ে আছে, হাত দিয়ে দেখেন শরীর ঠান্ডা। তাই ঠিক কখন মারা গেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে ভোরের কোন এক সময় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। আপাতত তার মরদেহ রাখা হয়েছে বারডেমের হিমঘরে। ছেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর জানাজা ও দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মোবারক হোসেন খান ১৯৩৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী। মা উমার উন-নেসা। তার চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মোবারক হোসেন খান সবার ছোট। তার বড় তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর ও রাজিয়া, বড় দুই ভাই প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আবেদ হোসেন খান ও বাহাদুর হোসেন খান। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী বড় দুই ভাই সঙ্গীতে নিমগ্ন ছিলেন। বাবা চেয়েছিলেন, মোবারক হোসেন খান সঙ্গীতের পাশাপাশি যেন পড়াশোনা করেন। এ জন্য সঙ্গীতে দীক্ষা নেয়ার আগে তিনি মাইনর স্কুলে প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ নেন। দেশ বিভাগের আগে থেকেই গান শেখানোর জন্য তার বাবার কুমিল্লার যাতায়াত ছিল। ’৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তারা সপরিবারে সেখানে চলে যায়। মোবারক হোসেন খান কুমিল্লা জেলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। ’৬২ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে মোবারক হোসেন খানের কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক হিসেবে ৩০ বছর কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন। লেখালেখি সূত্রে পরিচয় হয় কবি আল মাহমুদের সঙ্গে। আল মাহমুদ ছিলেন তখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক। তার মাধ্যমে ১৯৮০ সালে শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন তার প্রথম সঙ্গীতবিষয়ক বই ‘সঙ্গীত প্রসঙ্গ’। বিভিন্ন পত্রিকায় তার সঙ্গীতবিষয়ক লেখা নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় বই ‘বাদ্যযন্ত্র প্রসঙ্গ’। এর পর তিনি রচনা করেন ‘সঙ্গীত মালিকা’। বইটিও প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। পরে তিনি সঙ্গীত ও শিশুবিষয়ক পঞ্চাশটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ’৯২ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। মোবারক হোসেন খান জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের বড় বোন সঙ্গীতশিল্পী ফৌজিয়া ইয়াসমীনকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা রিনাত ফৌজিয়া সঙ্গীতশিল্পী আর দুই ছেলে তারিফ হায়াত খান ও তানিম হায়াত খান। মোবারক হোসেন খান একুশে পদক পেয়েছেন ১৯৮৬ সালে। পেয়েছেন স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৪) ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০২)।
×