ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়-সম্ভাবনা দুটোই দেখছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ২০ নভেম্বর ২০১৯

ভয়-সম্ভাবনা দুটোই দেখছে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুক্রবার কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে শুরু হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফ্লাডলাইটের আলোয় গোলাপি বলে ডে-নাইট টেস্ট ম্যাচ ঘিরে তৈরি হয়েছে বাড়তি আগ্রহ। দু’দলের ক্রিকেটারদের মাঝে রোমাঞ্চ যেমন রয়েছে তেমনি আছে সংশয়ও। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে ১১টি ডে-নাইট টেস্ট হয়েছে সেখানে পেসারদেরই ছিল বেশি দাপট। এমনকি মরুর দেশ আরব আমিরাতের চিরায়ত স্পিন কন্ডিশনেও ছড়ি ঘুরিয়েছেন ফাস্ট বোলাররা। মূলত নির্মাণশৈলী ও সান্ধ্যকালীন খেলার কারণে গোলাপি বল থেকে বাড়তি সুইং, আচমকা বাউন্স আর অতিরিক্ত গতি পেয়ে থাকেন পেসাররা। ইন্দোরের প্রথম টেস্টে ভারতের বিধ্বংসী পেস আক্রমণের কোন জবাব খুঁজে পায়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। সেখানে ইডেনে কী হবে? স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ভয় এবং সম্ভাবনা দুটোই দেখছেন। ইন্দোরে প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেছেন, গোলাপি বলে স্কিড, পেস এবং বাউন্স ও টার্ন থাকবে। যা পেসারদের পাশাপাশি স্পিনারদেরও কিছুটা সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে এক্সট্রা টার্ন। মিরাজ বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, গোলাপি বল স্কিড করতে পারে। একটু বাউন্স, একটু টার্নও থাকতে পারে। অনুশীলনে আমরা দেখেছি, স্পিনাররাও কিছুটা সাহায্য পাচ্ছে। বাড়তি বাউন্স থাকছে। সিমের পজিশন ঠিক থাকলে বেশ ভাল কাজ করে। অনেক সময় সিমের পজিশন ঠিক রাখা যায় না। স্পিনারদের জন্য ভয়টা এখানেই।’ দেশে মিরাজের রেকর্ড দুর্দান্ত, বাইরে ততটাই বিবর্ণ এই অফস্পিনার। জানালেন দেশের বাইরে নিজের রেকর্ড উজ্জ্বল করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সর্বোপরি গত বেশ কিছু ম্যাচ ধরেই দেশের বাইরে বোলিংটা ভাল হচ্ছে না আলোচিত অফস্পিনারের। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা খুব সহজেই তার ওভারে রান তুলছেন ইচ্ছেমতো। যে কারণে উইকেটও পাচ্ছেন না খুব একটা। এটি বন্ধ করতে রানের চাকা থামিয়ে রাখা বোলিংয়ের দিকেই বেশি মনোযোগ মিরাজের। তিনি বলেন, ‘শেষ ম্যাচে (ইন্দোর টেস্টে) দেখুন, ওরা কিন্তু অনেক আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছে। অনেক ভাল ভাল লেংথের বলও ভাল খেলেছে। আমি চেষ্টা করছি রানের গতিটা কমিয়ে রাখতে। এটা করতে পারলে উইকেট পড়ার সুযোগটা বেশি থাকে। ব্যাটিং-বোলিং দুটোতেই কিভাবে আরও ভাল করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করছি। মুশফিক ভাই বলেছেন, পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আমি পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’ গোলাপি বলে অনুশীলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ ওপেনার ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমার মনে হলো এই বলে সুইংটা একটু বেশি করে। স্বাভাবিক লাল বলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হতে একটু সময় লাগে। কিন্তু গোলাপি বলে যতটুকু খেললাম তাতে মনে হয় যে উজ্বলতাটা দ্রুত কমে। তবে যতক্ষণ উজ্জ্বলতা থাকবে সুইংটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে।’ দেশ ছাড়ার আগে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানিয়েছিলেন, দু’দলই যেহেতু প্রথমবারের মতো ডে-নাইট টেস্ট খেলবে, তাই খুব বেশি ভাবছেন না তিনি। অথচ এখন বলছেন একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে ভাল হতো, ‘খুব ভাল হতো যদি গোলাপি বলে ফ্লাডলাইটের আলোয় একটা দু’দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারতাম। আমাদের হয়তো নির্দিষ্ট করে সূর্যাস্ত এবং আঁধার নামার মাঝের সময়টাতেও ব্যাট করতে হবে। এ সময় গোলাপি বল দেখতে খুব সমস্যা হয়। আশা করছি ছেলেরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে।’ দিনের বেলায় স্বাভাবিকভাবে টেস্টের জন্য লাল বল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ওই বল অন্ধকারে দেখা কঠিন। বিশেষত যখন সেটা আকাশে ওঠে। তাই ২০০০ সাল থেকেই গোলাপি বলে ডে-নাইট টেস্টের প্রাথমিক পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির মাথায় আসে। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে গোলাপি বল তৈরি করা হয়, সেটি দিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। হয় ব্যাপক গবেষণা। ২০১৫ সালের ১৭ নবেম্বর প্রথমবারের মতো এ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে প্রথম ডে-নাইট টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ৩ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। এ বছরের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে ডে-নাইট টেস্ট খেলার প্রস্তাব পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতি না থাকায় বিসিবি সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এবার বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ভারতের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে বিসিবি। একদিকে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ, তার ওপর প্রথমবরের মতো গোলাপি বলের অভিজ্ঞতা, দুই মিলিয়ে ইডেন টেস্ট নিয়ে রয়েছে বাড়তি আগ্রহ। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতীয়রাও রয়েছে সংশয়ের দোলাচলে। ইন্দোরে প্রথম টেস্ট চলাকালেই এ নিয়ে কথা বলেছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, সহ-অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে, পেসার উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামি। সুপার কোহলি মনে করেন, শুরুতে দেখে-শুনে খেলতে হবে। এটি যেহেতু লাল বলের মতো নয়, তাই সিম অনেক বেশি নাড়াচাড়া করবে, সুইংয়ের সময় ব্যাটসম্যানদের বড় পরীক্ষা দিতে হবে। তবে মানিয়ে নিতে হবে । কারণ টেস্ট ক্রিকেটকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে নতুন উপায় অবলম্বনের বিকল্প নেই।
×