ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোরে মুশফিকও বেহাল

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

ইন্দোরে মুশফিকও বেহাল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ভারত সফরে প্রথমবারের মতো দুই ম্যাচের পূর্ণ টেস্ট সিরিজ। সেই সিরিজে বাংলাদেশ দলে নেই অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও অপরিহার্য ওপেনার তামিম ইকবাল। তাই নতুন অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ ও অভিজ্ঞতম মুশফিকুর রহিমের ওপরই মূল ভরসা দলের। দু’জন বৃহস্পতিবার ইন্দোরে শুরু হওয়া প্রথম টেস্টের প্রথমদিন হালও ধরেছিলেন দলীয় ৩১ রানে ৩ উইকেট পতনের পর। মুশফিক সর্বোচ্চ ৪৩ রানের ইনিংস খেলেছেন ৩ বার জীবন ফিরে পেয়ে। ভারতের বিপক্ষে বর্তমান দলের সবচেয়ে সফলতম ব্যাটিং পারফর্মার ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরে ঘনীভূত করেছেন বাংলাদেশের বিপদকে। অথচ বরাবরই মুশফিক বিপদের মুখে হাল ধরে দলকে টেনে তোলেন। এবার তা পারেননি মুশফিক, তাই দল মাত্র ১৫০ রানেই প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে। বাংলাদেশের হয়ে ভারতের বিপক্ষে সর্বাধিক ৩৮৬ রান আছে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের। তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন মুশফিক এদিন। এখনও দ্বিতীয় স্থানে আছেন মুশফিক ৩৮০ রান নিয়ে। মুশফিক উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন কিনা তা দীর্ঘদিনের আলোচনা। কারণ টেস্ট ম্যাচে দীর্ঘ সময় এই কষ্টকর দায়িত্ব পালনের পর আবার দলের ব্যাটিংস্তম্ভ হিসেবে ব্যাট হাতেও বড় কোন অবদান রাখতে হয়। এ জন্যই মুশফিকের ওপর চাপ কমাতে অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। এবার ভারত সফরে সাকিব ও তামিম থাকবেন না। তাই মুশফিকের ওপর থেকে উইকেটরক্ষকের দায়িত্বভারও সরিয়ে নেয়া হয়। চাপমুক্ত হয়ে যেন ব্যাটিংয়েই পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন তিনি তার পুরোপুরি ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছে। ইন্দোর টেস্টে তার পরিবর্তে লিটন কুমার দাস উইকেট কিপিং করছেন। ভারতের মাটিতে এর আগে একটাই মাত্র টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ দল। ১২৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন প্রথম ইনিংসে। তার সেই শতকেই ৩৮৮ রান করেছিল দল প্রথম ইনিংসে। সেবার অবশ্য তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছিলেন সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তারা অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। ভারতের বিপক্ষে এর আগে ৪ টেস্টের ৭ ইনিংসে ৩৩৭ রান করেছিলেন তিনি। ৫৬.১৬ গড়ে এই রান করতে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মুশফিক। সে কারণে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সেরা পারফর্মার তিনি ভারতের বিপক্ষে। তারচেয়ে বেশি গড় ভারতের বিপক্ষে আর কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের নেই। শুধু রানের দিক থেকে মোহাম্মদ আশরাফুল এগিয়ে। ভারতের বিপক্ষে ৬ টেস্টের ১১ ইনিংস ব্যাট চালিয়ে আশরাফুল ৪২.৮৮ গড়ে ৩৮৬ রান করেছেন। তার ২টি অর্ধশতক ও ১টি অর্ধশতক রয়েছে এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ইন্দোরে প্রথম ইনিংসেই ছিল মুশফিকের। কিন্তু সেই সুযোগটা প্রথম ইনিংসে কাজে লাগাতে পারেনি মুশফিক। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ৬৭ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে নেমেছিলেন দলের বিপদের মুহূর্তে। এমন মুহূর্তে অনেকবার একা লড়ে দলকে বাঁচিয়েছেন এবং ভাল অবস্থানে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এবার পারলেন না। সাধারণত চার নম্বরেই ব্যাট করতে নামেন মুশফিক। কিন্তু ইন্দোরে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে তাকে ৫ নম্বরে পাঠায় টিম ম্যানেজমেন্ট। ব্যাট হাতে নামার জন্য খুব বেশি অপেক্ষায় থাকতে হয়নি মুশফিককে। কারণ দলীয় ৩১ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ দল। অধিনায়কত্ব পাওয়া মুমিনুলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। ৩৬ টেস্ট খেলা এই ফরমেটের স্পেশালিস্ট হিসেবে বিবেচিত মুমিনুল। তাছাড়া এবার বাড়তি দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি, অধিনায়ক দলের। তার সঙ্গে ৬৭ টেস্ট খেলা মুশফিকের জুটিটা দলকে বিপদ থেকে টেনে তুলে দারুণ এক অবস্থানে নিয়ে যাবে এমনটাই বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। তারা দারুণভাবে শুরুও করেছিলেন। যদিও প্রথমদিকেই তিনবার ক্যাচ তুলে দিয়ে এবং একবার ইশান্ত শর্মা আবেদন না করায় এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান মুশফিক। শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি। উমেশ যাদবের বলে একবার এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে একবার ক্যাচ তুলে বেঁচে গেছেন মুশফিক যথাক্রমে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের কাছে। অথচ দু’জনই দুর্দান্ত স্লিপ ফিল্ডার। তার এ দুই সময়ে ছিল ৩ ও ১৪ রান। এছাড়া ব্যক্তিগত ৪ রানের সময় ইশান্তের একটি ডেলিভারি তার উরুতে লাগার কারণে উচ্চতা থাকায় আপীলও সেভাবে করেননি ও রিভিউ নেননি। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে এলবিডব্লিউ ছিলেন মুশফিক। এরপর অবশ্য তিনি মুমিনুলের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন। বিশেষ করে ভীতিকর স্পিনার অশ্বিনের বিপক্ষে বেশ সাবলীল ছিলেন দু’জনই। তাকে দারুণ একটি ছক্কাও হাঁকান মুশফিক। তখন মনে হচ্ছিল বরাবরের মতোই এবার দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেবেন তিনি। আর যেহেতু তিনবার বেঁচে গেছেন, তাই নিঃসন্দেহেই বড় হবে ইনিংসটা। কিন্তু তা হয়নি। মুশফিকের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি ভেঙ্গে যায় মুমিনুল বিদায় নিলে। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে হয়েছে মাত্র ১৬ রানের জুটি। রিয়াদের বিদায়ের পর লিটনের সঙ্গে ২৫ রানের জুটি গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু বেশিদূর আর যেতে পারেননি। ১০৫ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৪৩ রানে বোল্ড হয়ে গেছেন মোহাম্মদ শামির বলে। দলীয় রান তখন ১৪০। শেষ ভরসা হিসেবে মুশফিক বিদায় নেয়ার পর আর মাত্র ১০ রানে বাকি ৪ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ভারতের বিপক্ষে ২টি শতক থাকলেও বাকি ৬ ইনিংসে কোন অর্ধশতক হাঁকাতে পারেননি। ইন্দোর টেস্টের প্রথমদিন বিপদের মুহূর্তেও সে রকম ইনিংস পাওয়া গেল না মুশফিকের ব্যাট থেকে। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান হিসেবে আশরাফুলকে পেছনে ফেলতে এখনও ৭ রান প্রয়োজন তার। সে জন্য আপাতত দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। প্রথম ইনিংসে দলকে ভাল অবস্থানে নিতে পারেননি মুশফিক, দ্বিতীয় ইনিংসে কি পারবেন আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচাতে?
×