ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গান আর কথামালায় শুরু হলো রাধারমণ সঙ্গীত উৎসব

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

গান আর কথামালায় শুরু হলো রাধারমণ সঙ্গীত উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঞ্চ থেকে মাইকে সম্মেলক কণ্ঠে ভেসে আসছে রাধারমণের কালজয়ী গান ‘সজনী তোরা জল আনিতে যাবেনি’, ‘জলের ঘাটে দেইখ্যা আইলাম’ ইত্যাদি। শিল্পীরা নিবেদিত প্রাণে গাইছে, শ্রোতারা নীরবতায় শুনছে সেসব গান। রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার বিকেলে এমনই এক ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয় ‘রাধারমণ সঙ্গীত উৎসব-২০১৯’। মরমি লোককবি রাধারমণের এক শ’ চারতম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নবমবারের মতো তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করেছে রাধারমণ সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাট্যজন সৈয়দ হাসান ইমাম, পি এস সি’র চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোস্তাক আহমদ দীন, লোকসঙ্গীত শিল্পী আকরামুল ইসলাম ও জালালাবাদ এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জগলুল পাশা। প্রদীপ প্রজ্বালন ও স্পন্দনের শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন রাধারমণ সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সহ-সভাপতি নৃপেন্দ্র দেবনাথ। শুভেচ্ছা বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিশ্বজিৎ রায় বলেন, দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানান ধরনের কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন লোক কবি রাধারমণ। তবে তার পরিচিতি বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে ধামাইল গানে। তিনি নিজের মেধা ও দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। বাংলা সঙ্গীতের এই মরমি গুণী শিল্পীকে আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। আমরা গুটিকয়েক মানুষ এই শিল্পীর গানকে কোন রকমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। অনেক চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে নবমবারের মতো এ উৎসবের আয়োজন করতে পেরেছি। আপনারা জানেন, আজ যে সময় আমরা এই উৎসবের আয়োজন করেছি ঠিক একই দিনে আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ফোক ফেস্ট। সেখানে কোটি কোটি টাকা দিয়ে এই আয়োজন করা হয়। অথচ রাধারমণের মতো একজন ব্যক্তির নামে উৎসবের আয়োজনে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন না। অনেক কষ্ট করে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে আমাদের এই উৎসবের আয়োজন করতে হয়। এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্পীরা আসেন তাদের নিজ খরচে শুধু রাধারমণের গানের টানে। আলোচকরা বলেন, এই উৎসবের মাধ্যমে রাধারমণের গানের প্রসার যেমন ঘটবে, তেমনি যারা তার গান গাইতে চান তাদের একটা বড় প্লাটফর্ম তৈরি হবে। রাধারমণের যত গান আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেগুলো সংগ্রহ করা উচিত। এতে যেসব ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে সেগুলোকে সঠিকভাবে গাওয়ার উপযোগী করে তোলা খুবই জরুরী। আমরা রাধারমণকে বৈষ্ণব বাচক বা বাউল বাচক ঠেলাঠেলিতে ফেলতে নারাজ। তার রচনায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির যে প্রকাশ রয়েছে সে বিষয়টির প্রতিও সবার এগিয়ে আসা উচিত। রাধারমণ বনেদি কায়স্থ পরিবারের সন্তান হয়েও সকল জাত-পাত ভুলে মানুষকে ভালবেসেছেন, সকলের মনে আনন্দের বার্তা পৌঁছতে চেয়েছেন। তার রচনার সমগ্রতা বিচারের পথ এখনও উন্মুক্ত হয়নি। আমাদের দেশ উদার মূল্যবোধ ও সম্প্রীতির দেশ। সে বিশ্বাসকে ঋজু করে বলা যায় আগামীতে এ উৎসব আরও বৃহৎ হবে। আলোচনার পর সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় মরণোত্তর সিলেটের আঞ্চলিক গানের বরপুত্র হিসেবে খ্যাত বিদিতলাল দাস ও অধ্যাপক মৃদুলকান্তি চক্রবর্তীকে। এছাড়া অতিথি সম্মাননা প্রদান করা হয় শিলচর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সংগঠক সন্তোষ চন্দকে। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এ পর্বের শুরুতে রাধারমণের ‘সজনী তোরা জল আনিতে যাবেনি’ ও ‘জলের ঘাটে দেইখ্যা আইলাম’ গান দুটি সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে রাধারমণ সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রের শিল্পীরা। দলীয় গানে আরও অংশ নেন নির্ঝরিনী একাডেমির শিল্পীরা। নৃত্যাক্ষ সংগঠনের শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল দলীয় নৃত্য। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী চন্দনা মজুমদার, শাহনাজ বেলী, নারায়ণচন্দ্র শীল, আবুবকর সিদ্দিক, অণিমা মুক্তি গমেজ, সন্দীপন, নওশিন লায়লা, বিমানচন্দ্র বিশ্বাস, লাভলী দেব, সুতপা রায়, বাউল মনির, খায়রুল ইসলাম, কানিজ খোন্দকার মিতু, দীপ বিশ্বাস, সুমনা দাশ ও সৃজ্যোতি রায়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল ৫টায়। এদিন একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী জামালউদ্দিন হাসান বান্না, শামীম আহমেদ, অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, বিন্দু সুত্রধর, লিংকন দাস, প্রবীর, টুম্পা দাস, মাহবুব আলম, স্বপন দেবনাথ, পান্না দত্ত, রজত দত্ত, স্বপ্না দেবনাথ, লাকী রায়, বাউল আমীর আলী ও বাউলানী সাহানা বেগম। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে মরমি লোকগীত শিল্পীগোষ্ঠী ও গীত শতদলের শিল্পীরা। বিবিয়ানা ডিগ্রী মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় থাকবে ধামাইল নৃত্য। উৎসবের শেষ দিন আগামীকাল শনিবারের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল ৫টায়।
×