ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়া পৌর মেয়রের যমুনায় অবৈধ বন্দর

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

বেড়া পৌর মেয়রের যমুনায় অবৈধ বন্দর

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৪ নবেম্বর ॥ নদীকেন্দ্রিক মালামাল পরিবহন ও পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালামাল খালাস, শ্রমিক ও পণ্য ওঠানামা কার্যক্রম পরিচালনায় বিআইডব্লিউটিএ একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী হলেও সকল নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে অবৈধ নৌবন্দর পরিচালনা করছেন বেড়া পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল বাতেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখায় যমুনা নদীর শাখা হুরাসাগর নদে বন্দর নির্মাণ করে পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করলেও প্রশাসন অবৈধ এ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অবৈধ এ বন্দর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাঘাবাড়ি নৌ বন্দরের দূরত্ব হচ্ছে ১০ কিলোমিটার। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মালবাহী নৌযানগুলো বৃশালিখার অবৈধ ঘাটে নোঙ্গর করায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন ঘুওে দেখা গেছে, বন্দর পরিচালনার জন্য হুরাসাগর নদের পাড়ে বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেন একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে ঘাটের সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে বৃশালিখা বেসরকারী রাজঘাট। ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় আলহাজ আবদুল বাতেন। পাশেই ঘাটে নোঙ্গর করা ১০টি মালবাহী জাহাজ থেকে সিমেন্ট, কয়লা, ও বিভিন্ন খাদ্যশস্য নামানো হচ্ছে। পরে ট্রাকে করে এসব পণ্য নেয়া হচ্ছে গন্তব্যস্থলে। কথা হয় পোটন ট্রেডার্স নামের পণ্য পরিবহন সংস্থার প্রতিনিধি সোহরাব হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান বাঘাবাড়ি বন্দরে একটি জাহাজ আনলোড করলে তাদের অবশ্যই সরকার নির্ধারিত টোল দিতে হতো যা এই বৃশালিখা ঘাট থেকে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে তারা সহজেই অনেক কম খরচে বৃশালিখা ঘাটে পণ্য আনা নেয়া করতে পারছে। তিনি আরও জানান বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে শ্রমিক সঙ্কটসহ নানা জটিলতায় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে অনেক বেশি সময় লাগে। বেড়া বৃশালিখা ঘাটে সে সমস্যা নেই। সোহরাব সরকারী নৌ বন্দর এড়িয়ে বৃশালিখা ঘাটে পণ্য খালাসে কত টাকা সাশ্রয় করেছেন তা জানাতে রাজি হননি। বৃশালিখা ঘাটে পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তিই ঘাটটিতে পণ্য নামাতে কত টাকা পরিশোধ করতে হয় তা নির্দিষ্ট করে বলেননি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের( বিআইডব্লিউটিএ) অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম এ ঘাট পরিচালনাকে অবৈধ বলে মত দিয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত আইনে কেবল বিআইডব্লিউটিএ নৌবন্দর পরিচালনায় বৈধ কর্তৃপক্ষ। বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের নিকটবর্তী এলাকায় তারা সরকারী বা বেসরকারী কোন সংস্থাকে নৌবন্দর পরিচালনায় অনুমোদন দেননি। স্থানীয় সরকার খেয়া পারাপারের জন্য ঘাট ইজারা দিতে পারে কিন্তু পণ্যবাহী জাহাজ নোঙ্গর করে বৃশালিখা ঘাটে যেভাবে বন্দরের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে তা অবৈধ। তিনি আরও বলেন, বাঘাবাড়ি ঘাটে নোঙ্গর করা প্রতিটি মালবাহী জাহাজকে প্রতি টন মাল খালাসের জন্য ৩৪.৫০ টাকা দিতে হয়। বৃশালিখা ঘাটের কারণে সরকারী কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। রফিকুল ইসলাম আরও জানান অবৈধ ঘাটটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে কয়েকদফা লিখিত অনুরোধ জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী জানান, বৃশালিখা ঘাটটি বেড়া পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত হয়। এটা উপজেলা প্রশাসনের বিষয় নয়। আমরা ঘাটটির বিষয়ে অবগত নই। বেড়া পৌর মেয়র আবদুল বাতেন বৃশালিখা ঘাট কোন মতেই অবৈধ নয় দাবি করে বলেন, স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে ঘাট থেকে অর্জিত রাজস্ব অবশ্যই স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ পাবে। বৃশালিখা ঘাট পৌর এলাকার মধ্যে তাই পৌরসভা সেখান থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করছে। এখানে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদনের কোন প্রয়োজন নেই।
×