ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাজিদ আল ইসলাম

চিকিৎসায় পাঁচ চমকপ্রদ প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ১৩:১২, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

চিকিৎসায় পাঁচ চমকপ্রদ প্রযুক্তি

প্রাচীনকাল থেকে আজকের আধুনিক যুগে আসতে যতই সময় গড়িয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তির বন্ধন তত গাঢ় হয়েছে। তাই তো এখন চিকিৎসা ও চিকিৎসকরা হয়ে উঠছেন আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। আজকে আমরা জানব এমন পাঁচটি চিকিৎসা প্রযুক্তি নিয়ে যা আমাদের জীবন ও স্বাস্থ্যকে আরও বেশি নিরোগ রাখতে সহায়তা করবে। ক্যান্সার চিকিৎসায় ন্যানোটেকনোলজি ক্যান্সার চিকিৎসায় ন্যানোথেরাপির ব্যবহার ক্যান্সার চিকিৎসাকে করেছে আরও সহজ এবং তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল। প্রথাগত ক্যান্সার চিকিৎসায় এটা কল্পনা করা অসম্ভব ছিল। ন্যানো প্রযুক্তি একই সঙ্গে যেমন পেশেন্ট আউটকামকে উন্নত করেছে, সেই সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কম খরচে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতেও সহায়তা করছে। মেডিক্যাল ন্যানো ডিভাইস এবং ম্যাটেরিয়ালের ব্যবহার এখন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অজৈব ন্যানো পার্টিকেলগুলোকে বিভিন্ন অজৈব পদার্থ যেমন সোনা, রুপা ইত্যাদি থেকে পৃথক করা হয় এবং এদের ব্যাপ্তি নির্ধারণ করা হয় ১-১০০ ন্যানোমিটারের মাঝেই। ইজরায়েলের বার ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল বানিয়েছেন ‘ন্যানোবট’। এটি কোন সমস্যা যুক্ত কোষকে টার্গেট করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে পারে। বার ইলানের প্রফেসর আইডো বাচেলেটের নেতৃত্বে দলটি ডিএনএ রোবট বানিয়েছে যারা বারোটি ভিন্ন ধরনের সেল টাইপ আলাদা করতে পারে। রোবটটির মাধ্যমে টিস্যু ও স্নায়ু পুনর্নির্মাণের চেষ্টাও গবেষক দলটি করে যাচ্ছেন। প্রায় একই রকম চিন্তা নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার জোসেফ ওয়াং এবং সাদিক ইসেনার বানিয়েছেন ‘মাইক্রোক্যানন’। যেটা এ্যান্টি ক্যান্সার ড্রাগ প্রয়োগে টিউমার কোষকে ধ্বংস করে দিতে পারবে। এটি এক ধরনের ন্যানো বুলেট। যেটা ড্রাগস বহন করে শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম। ‘আল্ট্রাসনিক ওয়েভ’ ব্যবহারের মাধ্যমে ন্যানো পার্টিকেলগুলোকে গাইড করে উপযুক্ত স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য, সেখানে গিয়ে ড্রাগস নিঃসরণ এবং আক্রান্ত কলাকে ওষুধের প্রতি বন্ধুত্বসবল আচরণ তৈরিতে সাহায্য করবে। এটার দৈর্ঘ্য মাত্র পাঁচ মাইক্রোমিটার যা গ্রাফিন অক্সাইড এবং স্বর্ণনির্মিত। এক মাইক্রোমিটার দৈর্ঘ্যরে সিলিকা পার্টিকেল যুক্ত তরল পদার্থ ধারণকারী পারফ্লুরোকার্বন প্রোপালেন্ট হিসেবে বানানো হয়েছে। এটাকে বাষ্পায়িত করে আল্ট্রাসনিক ওয়েভকে ত্বরান্বিত করা হয়। যা কিছু মাইক্রোবাবল উৎপন্ন করে যেটা খুব দ্রুতই ন্যানো বুলেটকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। চোখের সুরক্ষায় কনট্যাক্ট লেন্স অপথ্যালমোলজি অর্থাৎ চোখের চিকিৎসায় অভাবনীয় উন্নতি ঘটছে। ‘জনসন এ্যান্ড জনসন’ পৃথিবীর সর্বপ্রথম ট্রানজিশন কনট্যাক্ট লেন্স বাজারে আনার অনুমতি পেয়েছে। ট্রানজিশন গ্লাস বহু বছর আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসলেও এ্যাকুভ ওয়েসিসের মতো কনট্যাক্ট লেন্স এবারই প্রথম যেটাতে ট্রানজিশন লাইট ইনটেলিজেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই সর্বপ্রথম কনট্যাক্ট লেন্স যেটা মাত্রাতিরিক্ত আলোকময় পরিবেশে নিজে থেকেই অন্ধকারচ্ছন্ন হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক এমন এক ধরনের কনট্যাক্ট লেন্স উদ্ভাবন করেছেন যেটা চোখের ভেতরের চাপ এবং গ্লুকোজের পরিমাণ মাপতে পারে। একই রকম ডিভাইস আবিষ্কৃত হয়েছে পার্ডু ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের হাত ধরে। তাদের আবিষ্কৃত কনট্যাক্ট লেন্সটি একইসঙ্গে গ্লুকোজ, পিএইচ মাপা এবং চোখকে পুষ্টি প্রদানের কাজ করতে পারে। জার্মানিভিত্তিক কোম্পানি ‘হিউম্যান অপটিকস’ একটি কাসটমফ্লেক্স আর্টিফিসিয়াল আইরিশ উদ্ভাবন করেছে যেটা সম্প্রতি এফডিএ অনুমোদিত হয়েছে। এটি একটি ফ্লেক্সিবল সিলিকন মেমব্রেন যেটা ভাঁজ করা অবস্থায় থাকে। সামান্য কেটে চোখে স্থাপন করে ডিভাইসটিকে সোজা করা হয়। ক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় দেখা গেছে এই ডিভাইসটি বিভিন্ন ধরনের আইরিশ ডিফেক্টের রোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটি, ইউকে এর গবেষকগণ আবিষ্কার করেছেন থ্রিডি প্রিন্টেড কৃত্রিম কর্ণিয়া। যেটা দাতা কর্ণিয়ার অপ্রতুলতাকে হ্রাস করবে। কৃত্রিম কর্ণিয়াটি এ্যালজিনেট, কোলাজেন এবং স্টেম সেলের সমন্বয়ে বানানো হয়েছে। মস্তিষ্ক প্রদাহের চিকিৎসায় ইলেকট্রনিক এসপিরিন যারা মাইগ্রেন, মাথাব্যথা অথবা অন্যান্য কারণে দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণাদায়ক মাথাব্যথা কিংবা মুখম-ল ব্যথায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য ‘দুই বেলা এসপিরিন’ পদ্ধতি প্রায় অকার্যকর। তথাপি এই স্নায়ুগুচ্ছের ওপর কাজ করে ‘লং টার্ম’ কাজ করবে এমন পদ্ধতি খুঁজে পাননি। সম্প্রতি ‘অটোনমিক টেকনোলজিস’ এর অধীনে ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশনে এমন একটি টুল ব্যবহার করা হয়েছে যেটা মাথাব্যথা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্নায়ুগুচ্ছের সিগন্যালকে ব্লক করতে পারবে। এই সিস্টেমটি চিপ আকারে মাথার ব্যথাপ্রবণ অঞ্চলে বসানো থাকবে। যেটা স্নায়ুগুচ্ছের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত থাকবে। এটি একটি রিমোট কন্ট্রোল পদ্ধতি, যেখানে ব্যথা শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গেই চিপ থেকে আসা সংকেতগুলো স্নায়ুগুচ্ছকে উত্তেজিত করবে এবং ব্যথা হবার জন্য দায়ী নিউরোট্রান্সমিটারগুলোকে ব্লক করে দেবে। খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণে টুথ ট্র্যাকারের ব্যবহার টাফটস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং এর একদল গবেষক এমন এক ধরনের সেন্সর উদ্ভাবন করেছেন যেটা দাঁতে স্থাপনের মাধ্যমে আপনাকে আপনার সঠিক খাদ্যভাস নিয়ে ধারণা দিতে পারবে। ২০১৮ সালের মার্চে এই ডিভাইসটি আসে। এটি আপনার গ্রহণকৃত সোডিয়াম, গ্লুকোজ, এ্যালকোহলকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং প্রাপ্ত ডাটাগুলোকে তারবিহীন মাধ্যমে স্থানান্তর করতে পারে। যদিও এই ধরনের ডিভাইস এবারই প্রথম নয় তবে অন্যান্যগুলো থেকে এবারেরটা যথেষ্ট ভাল। আশা করা যায় যে, এই ডিভাইসটি ব্যবহারে চিকিৎসকরা তাদের রোগীদের চিকিৎসায় আরও বেশি উপকৃত হবেন। হৃৎপি- সুরক্ষায় ‘ড্রাগ ডেলিভারি’ প্রযুক্তি কয়েক বছর আগেও ‘ড্রাগ ডেলিভারি’ বলতে বোঝানো হতো মুখ দিয়ে গ্রাস করা পিলকে। এমআইটি গবেষকদের হাত ধরে একটি ‘স্মার্ট ব্লুটুথ পাওয়ারড ইলেকট্রনিক পিল’ আবিষ্কৃত হয়েছে যেটা মুখ থেকে পাকস্থলী অবধি যেখানে যেখানে মেডিসিন দরকার সেখানেই পৌঁছাতে পারে। এমনকি এটি নিজ থেকে ভেঙ্গেও যেতে পারে এবং কোন অঙ্গে লুকানো ছাড়াই দেহ থেকে বের হয়ে আসতে পারে। হৃৎপি-ের চিকিৎসায় সাধারণত ইনজেকশন ব্যবহারের মাধ্যমে মেডিসিনকে আক্রান্ত এলাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু আমেরিকা এবং আয়ারল্যান্ডের একটি যৌথ গবেষণা দল এমন একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেছে যেটা নিজে মেডিসিন বহন করে আক্রান্ত অঞ্চলে ডেলিভারি দেবে।
×