ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সকল আয়োজন সম্পন্ন-তবু কাজ শুরু হচ্ছে না

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২০ অক্টোবর ২০১৯

সকল আয়োজন সম্পন্ন-তবু কাজ শুরু হচ্ছে না

সমুদ্র হক ॥ সকল আয়োজন ঠিকঠাক থাকার পরও বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়নি। কথা আছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বগুড়া বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমানের পাশাপাশি বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া আকাশপথে বাংলাদেশ বিমান ও প্রাইভেট বিমান সংস্থার ফ্লাইট চলবে। এ জন্য বর্তমানের ৩ হাজার ৫০০ ফুট রানওয়েকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের (টেকঅফ এ্যান্ড ল্যান্ডিং) জন্য অন্তত এই পরিমাপের রানওয়ে দরকার। বিমানবাহিনী প্রধান বগুড়া সফরকালে জানিয়েছিলেন সিভিল এভিয়েশনের (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) মাধ্যমে বগুড়ায় যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানবহিনীর কোন আপত্তি নেই। এরপর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কয়েক দফা সম্মেলনে বগুড়ার ডিসি বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী ফ্লাইটের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। সম্মেলনে বগুড়া বিমানবন্দরের কথা তুলে ধরলে অন্যান্য জেলার ডিসিরা সমর্থন দেন। এ ছাড়াও বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান বগুড়া বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশনের অধীনে বিমান চলাচলের যৌক্তিক গুরুত্ব তুলে ধরেন সংসদে। বছর দুয়েক আগে বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা জানিয়েছে, সরকারী আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ভৌগোলিক ও বাণিজ্যিক অবস্থান বিবেচনায় বগুড়া বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৮৭ সালে। ৯০’র দশকের শুরুতে সদর উপজেলার এরুলিয়া মৌজায় ১শ’ ১০ একর ভূমির ওপর ৬শ’ ফুট চওড়া ও সাড়ে তিন হাজার ফুট রানওয়ের পাশাপাশি টার্মিনাল অফিস, আবাসিক ভবন নির্মিত হয়। ওই সময় ব্যয় হয় ২২ কোটি টাকা। এক পর্যায়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বিমানবন্দরটি বিমান বাহিনীর কাছে ন্যস্ত করে। বিমানবাহিনী সেখানে রাডার স্টেশন স্থাপন করে সামরিক বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে। প্রায় দুই দশক ধরে বগুড়া বিমানবন্দর এভাবেই চলছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আকাশ পথে যোগাযোগে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বগুড়া বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ওঠা নামায় গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এ ক্ষেত্রে কোন আপত্তি করেনি। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিমানবাহিনী বিষয়টির সম্ভাব্যতা যাচাই করে আকাশপথে সাধারণের যোগাযোগের পক্ষে মত দেয়। জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্র জানায়, বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়েকে ৭ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে। এর সঙ্গে জ্বালানি রিজার্ভার, যাত্রীদের সুবিধা, মালামাল ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য অন্তত একশ’ একর ভূমি প্রয়োজন। বিদ্যমান রানওয়ের পশ্চিমে জমি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সূত্র জানায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া আছে। মন্ত্রণালয় থেকে এখনও চিঠি আসেনি। বগুড়ার সুধীজন বলেন, ষাটের দশকে হেলিকপ্টারে আকাশপথে বগুড়ার সঙ্গে ঢাকা যোগাযোগ ছিল। বগুড়ার বনানীতে হ্যালিপ্যাডে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন ও অবতরণ করত। চল্লিশ আসনের হেলিকপ্টারে জনপ্রতি ভাড়া ছিল হেলিপ্যাড চার্জসহ ৫০ টাকা। কপ্টার সার্ভিস ছিল লাভজনক। কয়েকদিন আগে টিকেটে কাটতে হতো। পঞ্চাশ বছরে বগুড়া আরও উন্নত হওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠানামার সার্বিক অবস্থা বিরাজ করছে। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য রয়েছে আধুনিক স্টেডিয়াম। কয়েকটি ফোরস্টার হোটেল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারগুলো এখন বগুড়ায় হচ্ছে। দেশের প্রাচীন নগরী মহাস্থানগড়ে পর্যটক আগমনের সংখ্যা বেড়ে পর্যটকভূমিতে পরিণত। শীঘ্রই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। বগুড়ার লোকজন ঢাকায় দ্রুত যোগাযোগে আকাশপথের ভাবনা নিয়ে আছে।
×