ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাড়া-মহল্লায় আতঙ্ক

রাজশাহীতে তৎপর কিশোর গ্যাং

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

রাজশাহীতে তৎপর কিশোর গ্যাং

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হঠাৎ করেই বেড়েছে কিশোর অপরাধীদের অপতৎপরতা। উঠতি বয়সেই ‘কিশোর গ্যাং’ চক্রে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনেকে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরোনোর আগেই বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা। এসব কিশোর গ্রুপের সদস্যরা পাড়া-মহল্লায় দলবেঁধে ঘোরে। স্কুল-কলেজের সামনে আড্ডা দেয়। এছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া, তরুণীদের উত্ত্যক্ত করা, দলবেঁধে মাদক সেবন, ব্ল্যাকমেলিং ও চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইয়েও জড়িয়ে পড়ছে। চলতি মাসে রাজশাহীর কয়েকটি উপজেলায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৫ কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে কিশোরীও রয়েছে। তবে, রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ে যুক্ত কতটি গ্রুপ আছে তার কোন তথ্য নেই পুলিশের কাছে। পুলিশ বলছে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকা- প্রকাশের পর বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। কিশোরদের কর্মকা-ের ওপর দৃষ্টি রাখছে স্থানীয় প্রশাসন। সাদা পোশাকেও তাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে গ্রামের পাড়া-মহল্লায় সন্ধ্যার পর দোকানে দোকানে আড্ডা দেয়া কিশোররাই মূলত নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আস্কারা পেয়ে উঠতি বয়সের ছেলেরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেলার পুঠিয়া থানা পুলিশ কিশোর অপরাধ চক্রের এক নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার বিকেলে চাঁদাবাজির মামলায় তার জবানবন্দী রেকর্ড করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। এর আগে দুর্গাপুর উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গণধোলাই দিয়েছে এলাকাবাসী। তারা চলন্ত ভ্যানগাড়ি থেকে মোবাইল ছিনতাই করছিল। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে বেশ কিছু কিশোর গ্রুপ গড়ে উঠছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় তারা দাপট দেখাচ্ছে। কোন ঘটনায় পুলিশ তাদেরকে আটক করলেও আটকের পরে স্থানীয় নেতারা তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার পুঠিয়ায় গ্রেফতার হওয়া কিশোরীর নাম সাকিলা খাতুন (২২)। স্বামী পরিত্যক্তা ওই কিশোরীর দুই বছরের একটি সন্তান রয়েছে। আর দুর্গাপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গণধোলাইয়ের ঘটনায় পুলিশ জানায়, তাদের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানায় মামলা রয়েছে। দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খুরশীদা বানু কনা বলেন, দুর্গাপুর উপজেলার গোপালপাড়ার বাসিন্দা সোহাগ তাহেরপুর বাজার থেকে ভ্যানযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় তিন যুবক সোহাগের পিছু নিয়ে ফাঁকা জায়গায় এসে তার মোবাইলটি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দ্রুত পুঠিয়ার দিকে পালিয়ে যায়। দ্রুত ভ্যানযাত্রীরা উজাল খলসি বাজারে ফোন করে মোটরসাইকেলটির গতি রোধ করতে বললে স্থানীয়রা তাদের ধরে ফেলে। এসময় স্থানীয়রা গণধোলাই দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। এর আগে গত ৬ অক্টোবর পুঠিয়া উপজেলায় হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে কিশোর গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আগের রাতে দুই যুবক ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে বসে গল্প করছিল। পরে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েক সদস্য সেখানে গিয়ে তাদের এলোপাতাড়ি মারপিট করে। সেখান থেকে শামীমকে পাশের পরিত্যক্ত একটি বিল্ডিংয়ে নিয়ে এক তরুণীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও পরিবারের কাছে দেখানো ছাড়াও পুলিশে দেয়ার ভয় দেখিয়ে শামীমের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে চক্রটি। একপর্যায়ে শামীম কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে পুঠিয়া থানায় অভিযোগ করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই চক্রটির তিনজনকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ ধরনের কর্মকা- চালিয়ে আসছিল। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, নগরীর মধ্যে এ পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের খোঁজ মেলেনি। তবে কিছু কিশোর অপরাধী আছে। তারা যেন কোন অঘটন না ঘটাতে পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম বলেন, এসব গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আগের তুলনায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ জানান, কিশোর অপরাধীদের বিষয়ে পুলিশ এখন অনেক বেশি তৎপর। যেখানেই এ ধরনের খবর পাওয়া যাচ্ছে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেফতার হচ্ছে।
×