নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৫ অক্টোবর ॥ ‘দেশের একজন মানুষও ভূমিহীন থাকবে না’ বর্তমান সরকারের এ নীতির সমর্থনে গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রানীশংকৈল উপজেলায় বেহাত হওয়া খাস পুকুরের জমি উদ্ধার করে পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এতে ঠিকানাহীন, গৃহহীন, ভূমিহীন, ছিন্নমূল লোকজন পেয়েছে বাসস্থানের নতুন ঠিকানা।
উল্লেখ্য, রানীশংকৈল উপজেলার মহিষডোবা পুকুর এবং পার্শ্ববর্তী বালিয়াদীঘি দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে ছিল। এখন ওই খাস পুকুরপারে গড়ে উঠেছে নতুন বসতি। এখানে পাঁচ শতাধিক ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার সরকারী টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ পেয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করছেন। মহিষডোবা পুকুরপারের নুতন বাসিন্দা মুফতি হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা আগে নেকমরদ বাজারের বাগানবাড়িতে বসবাস করছিলাম। কিছুদিন আগে সরকার ওই হাটের জমি উদ্ধার করে নেয়। এতে আমরা শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়লে উপজেলা প্রশাসন আমাদের মহিষডোবা ও বালিয়াপুকুরপারে পুনর্বাসন করে।
একইভাবে ঘনশ্যামপুর গ্রামের খাস পুকুরপারে দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জমি পেয়ে আদিবাসীরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন । ইতোমধ্যে সেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য মন্দিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জমি বরাদ্দ পাওয়া আদিবাসী শুকরা পাহান বলেন, আগে মানুষের জমিতে থাকতে গিয়ে বিভিন্নভাবে মানুষের কথা সহ্য করতে হচ্ছিল। জমি পাওয়ায় সেই ভাবনা এখন আর থাকল না। সেজন্য সরকার ও এসিল্যান্ড স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রাউতনগর গুচ্ছগ্রাম, বাসনাহার গুচ্ছগ্রাম, মানিকাদিঘি গুচ্ছগ্রাম, মলানীদিঘি গুচ্ছগ্রাম ও রন্ধনদিঘিপার গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাণীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বর্তমান সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য চলতি বছর ঘনশ্যামপুর, মহেষপুর, ব্রহ্মপুর, করনাইট গ্রামের পুকুরপারের স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েক একর জমিতে ৫৬০ভূমিহীনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সরকারী খরচে বাড়িঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য গুচ্ছগ্রামের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, সরকার চায় দেশের কোন মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে। এই নীতির আলোকে জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় বেহাত থাকা খাস জমি উদ্ধারের কার্যক্রম চলছে।
এরই অংশ হিসেবে রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদহাট এবং বিভিন্ন পুকুরের কৃষি ও অকৃষি মিলে কয়েক একর খাস জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এসব জমিতে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম এবং জমি আছে, ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি।