ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আগারওয়াল-রোহিত জুটির রেকর্ডে ভারতের দাপট

প্রকাশিত: ১২:০১, ৪ অক্টোবর ২০১৯

আগারওয়াল-রোহিত জুটির রেকর্ডে ভারতের দাপট

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথমবার টেস্টে ওপেনিং করার সুযোগ পেয়েই কাজে লাগিয়েছেন রোহিত শর্মা। রঙ্গিন পোশাকের ক্ষুদ্র পরিসরের ক্রিকেটে নিয়মিত ইনিংস উদ্বোধন করলেও বিশাখাপতœমে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তিনি তরুণ মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে নিয়ে শুরু করেন ইনিংস। আর হাঁকান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭৬ রানের ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে কোন উইকেটে সর্বাধিক ৩১৭ রানের জুটির রেকর্ড গড়ে তিনি সাজঘরে ফিরে যাওয়ার পর তাকে ছাড়িয়ে গেছেন আগারওয়াল। ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পাওয়া কর্নাটকের এ ডানহাতি ওপেনার বৃহস্পতিবার প্রথম টেস্টের দ্বিতীয়দিন হাঁকিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। ভারতের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে ডাবলে পরিণত করে তিনি আউট হন ২১৫ রানে। দুই ওপেনার সবমিলিয়ে ১২ ছক্কা হাঁকিয়েছেন যা টেস্ট ইতিহাসে আর কোন ওপেনার করতে পারেননি। এমনসব রেকর্ডের কারণেই ভারত ৭ উইকেটে ৫০২ রানের বিশাল সংগ্রহ তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। দ্বিতীয়দিন শেষে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৯ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে। ৪৬৩ রানে এগিয়ে আছে ভারত। বিশাখাপতœমে প্রথমদিন ছিল বৃষ্টির বাগড়া। যার কারণে ৫৯.১ ওভার খেলা হয়েছে মাত্র। তবে তাতেই রোহিত-আগারওয়াল প্রথমবার ওপেনিংয়ে জুটি বেঁধে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। বিনা উইকেটে ২০২ রান ছিল ভারতের প্রথমদিনের স্কোর। রোহিত ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ১১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। কিছুটা ধীরস্থির আগারওয়াল ৮৪ রান নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির। দ্বিতীয়দিনের শুরু থেকেই তাদের ওপর প্রোটিয়া বোলিং কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। আগের দিনের মতোই সাবলীল ভঙ্গিতে ব্যাট চালিয়ে গেছেন তারা। দিনের শুরুতেই ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পেয়ে যান ২৮ বছর বয়সী আগারওয়াল। জুটি বড় হতে শুরু করে। দু’জনেই এগোতে থাকেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু লাঞ্চ বিরতির মাত্র আধাঘণ্টা আগে ঘটে যায় বিপত্তি। বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রোহিত। তিনি ২৪৪ বলে ৩৬ চার, ৬ ছক্কায় ১৭৬ রান করেছিলেন। ২৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে তার সেরা ইনিংস ১৭৭ রানের। অথচ ৫০ ওভারের ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩টি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো রোহিত নিয়মিত ওপেনার হিসেবে ২৬৪ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়া ইনিংসও খেলেছেন। কিন্তু টেস্টে তার সুযোগটা কমই ছিল এতদিন। কারণ মূলত ৬ নম্বরেই ব্যাট করেছেন। এবারই প্রথম তাকে ওপেনিংয়ে নামানোর পরই টেস্ট ওপেনার হিসেবেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করলেন। তবে ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেলেন না। এই প্রথম প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ভারতের দুই ওপেনার একই সঙ্গে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। তবে সেটি আরও বড় কোন রেকর্ড হতো রোহিত ডাবল সেঞ্চুরি পেয়ে গেলে। তবুও ৩১৭ রানের উদ্বোধনী জুটি হয়েছে। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম টেস্টে ওপেনারদের ৮২ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করতে দেখা গেল। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে কোন উইকেটে ভারতের পক্ষে সেরা টেস্ট জুটির রেকর্ড। এর আগে চেন্নাইয়ে ২০০৮ সালে বীরেন্দর শেবাগ ও রাহুল দ্রাবিড় দ্বিতীয় উইকেটে ২৬৮ রান করেছিলেন। তবে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ভারতের সেরা ওপেনিং জুটি ছিল ২০০৪ সালে কানপুরে শেবাগ ও গৌতম গাম্ভীরের ২১৮। সার্বিকভাবে টেস্টে এটি ভারতের পক্ষে তৃতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি। এর আগে ভিনু মানকড়-পঙ্কজ রায় ১৯৫৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে ৪১৩ এবং ২০০৬ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেবাগ-দ্রাবিড় জুটি ৪১০ রান করেছিলেন ওপেনিং জুটিতে। প্রথমবার ওপেনিংয়ে জুটি বেঁধে শেবাগ-কোহলির এই রানটাই সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় স্থানে প্রথমবার জুটি বাঁধা রোহিত-আগারওয়াল জুটি। রোহিত বিদায় নেয়ার পরও থামেননি আগারওয়াল, বরং দ্রুতই ডাবলে পৌঁছুতে আরও ধারালো হয়েছে তার ব্যাটিং। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটিকে ডাবলে পরিণত করেছেন তিনি। ভারতের পক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে এর আগে মাত্র ৩ জন পেরেছেন ডাবলে পরিণত করতে। সে তালিকায় আছেন দিলীপ সারদেসাই (২০০*), বিনোদ কাম্বলি (২২৪) ও করুন নায়ার (৩০৩*)। তবে এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। অনিয়মিত বোলার ডিন এলগারের বলে সাজঘরে ফিরেন ৩৭১ বলে ২৩ চার, ৬ ছক্কায় ২১৫ রানে। দুই ওপেনার ১২ ছক্কা হাঁকিয়েছেন, টেস্ট ইতিহাসে ওপেনারদের পক্ষে এটি সর্বাধিক। এর আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ওপেনাররা ১১টি করে ছক্কা হাঁকিয়ে শীর্ষে ছিলেন। তাদের পেছনে ফেলেছেন রোহিত-আগারওয়াল। আগারওয়াল সাজঘরে ফেরার আগেই অবশ্য চেতেশ্বর পুজারা (৬), অধিনায়ক বিরাট কোহলি (২০) ও অজিঙ্কা রাহানে (১৫) সাজঘরে ফিরেন। পরবর্তীতে দ্রুত রান বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হয়েছে ভারত। রবীন্দ্র জাদেজা ৪৬ বলে ১ ছক্কায় অপরাজিত ৩০ ও ঋদ্ধিমান সাহা ১৬ বলে ২১ রান করেন। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ৫০২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। সবমিলিয়ে তাদের ইনিংসে ১৩টি ছক্কা হয়েছে। টেস্টে ভারতের এক ইনিংসে সর্বাধিক ছক্কা ১৫টি, ২০০৯ সালে ব্র্যাবোর্নে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। মহারাজ ৫৫ ওভারে ১৮৯ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের সেরা বোলার। জবাব দিতে নেমে ভারতীয় স্পিনারদের দাপটে ৩৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয়দিন শেষ করেছে। ডানহাতি অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন একাই নিয়েছেন ২ উইকেট। ৪৬৩ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা প্রোটিয়াদের হয়ে আজ তৃতীয়দিন লড়াই শুরু করবেন ২৭ রানে অপরাজিত ওপেনার এলগার ও ২ রানে অপরাজিত টেমবা বাভুমা। অপর উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার জাদেজা। স্কোর ॥ ভারত প্রথম ইনিংস- ৫০২/৭; ডিক্লে. ১৩৬ ওভার (আগারওয়াল ২১৫, রোহিত ১৭৬, জাদেজা ৩০*; মহারাজ ৩/১৮৯)। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস- ৩৯/৩; ২০ ওভার (এলগার ২৭*; অশ্বিন ২/৯, জাদেজা ১/২১)। *দ্বিতীয়দিন শেষে
×