ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাহিদ সাদেক ;###;বিচিত্র তথ্য

নির্বাচনী ইশতেহারে কচুরিপানা

প্রকাশিত: ১২:১৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নির্বাচনী ইশতেহারে কচুরিপানা

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯৩৭ সালে বাংলার নির্বাচনে সব দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাকে কচুরিপানার অভিশাপমুক্ত করার অঙ্গীকার ছিল। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক নির্বাচনে বিজয় লাভ করে তার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে সবাইকে নিয়ে কচুরিপানা দূর করার কাজে হাত দেন। কচুরিপানা! কচুরি ফুল! প্রকৃতির অপরূপ দান। যার ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়, পুকুর, জলাশয় কিংবা দীঘি। পুকুরভরা কচুরি ফুল, যেন প্রদীপ ভাসছে পানির ওপর- এমন সৌন্দর্য বাংলার গ্রামাঞ্চল ছাড়া আর আছে কোথায়? গ্রামের সহজ-সরল মানুষের মাটি-ঘনিষ্ঠ জীবনযাত্রার এটি জীবন্ত ছবি। ধারণা করা হয়, কচুরিপানার অর্কিড-সদৃশ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ব্রাজিলীয় এক পর্যটক আঠারোশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন। তারপর তা এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে ১৯২০ সালের মধ্যে বাংলার প্রায় প্রতিটি জলাশয় কচুরিপানায় ভরে যায়। নদ-নদীতে চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। উপরের পানিপৃষ্ঠ ঢেকে যাওয়ায় সূর্যালোক না পেয়ে পানির নিচের জলজ উদ্ভিদ প্রজাতি মারা যায় এবং অক্সিজেন ঘাটতির কারণে মাছ মারা যেতে থাকে। কচুরিপানা শুধু জলাশয়গুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, নিচু জমিতে ধান এবং পাটের আবাদস্থলের পানি জমা জমিতেও ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার কচুরিপানা হ্রাসে বাংলার জলাভূমি আইন, বাংলার মিউনিসিপ্যালিটি আইন, বাংলার স্থানীয় সরকার আইন এবং বাংলার স্থানীয় গ্রাম সরকার আইন সংশোধন করে। ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা আইন জারি করা হয়, যার মাধ্যমে বাড়ির আশপাশে কচুরিপানা রাখা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযানে অংশ নেয়াকে নাগরিক কর্তব্য ঘোষণা করা হয়। আক্রান্ত এলাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কচুরিপানা দমনে কার্যকর অভিযান চালান। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনেও সকল দলের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাকে কচুরিপানা মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি ছিল। এই নির্বাচনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পরপরই ‘কচুরিপানা উৎখাত কর্মসূচী’ হাতে নেন। অবশেষে ১৯৪৭ সাল নাগাদ কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তা একেবারে বিলুপ্তি ঘটেনি।
×