ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য

খাদ্য প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারই শুধু নয়, যাপিত জীবনের নৈমিত্তিক চাহিদাও বটে। স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় হরেক রকম ওজর আপত্তি শোনা যায়। কিছু দিন আগে তরল পাস্তুরিত দুধের কোম্পানিগুলোকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মানের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়। সে সাবধান বাণী আসে হাইকোর্ট থেকে। সাধারণ মানুষের আবশ্যকীয় চাহিদায় যদি ভেজাল কিংবা স্বাস্থ্য ঝুঁকির ব্যাপার সামনে এসে যায়, তাহলে দেশ ও জনগোষ্ঠীর প্রতি দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। খাদ্যপণ্যে মারাত্মক ফরমালিন মেশানো নিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক আপত্তিজনক ঘটনা ভোক্ত শ্রেণীকে সচকিত করলেও যারা এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের বোধোদয় এখন অবধি হয়নি। চলমান এমন ভেজাল পণ্য সঙ্কটকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয় ‘ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য : চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনার মাধ্যমে। কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটি (সিসিএস)-এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসম্মত বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগকে গুরুত্ব দিয়ে সভায় বক্তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন বক্তব্যে উঠে আসে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ আরও অনেক সংস্থা যথার্থ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এখানে মূল সমস্যা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপারগতা, ব্যবসায়িক বিভিন্ন সংগঠন কিংবা হোটেল- রেস্তরাঁর মালিকরা ভ্রাম্যমাণ আদালতে অনেক অর্থদ-ে শাস্তি পেলেও যথার্থ বিচার বলতে যা বোঝায় সেটা হওয়া আসলেই মুশকিল। শক্ত সিন্ডিকেট কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালীরা হরেক রকম অপকৌশলে পার পেয়ে যায়। এমন বড় বড় সংগঠনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করা না গেলে উত্তরণের উপায় অনিশ্চিত থাকবেই। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয় খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশানো প্রমাণ হলে সে যেই হোক না কেন তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আসতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে কোন অনিয়ম, দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। সংশ্লিষ্টদের আইনের বিধি অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য সাজা পেতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছে সে সব সংস্থাকে আরও নতুন আঙ্গিকে জনবান্ধব কর্মসূচীতে ঢেলে সাজাতে হবে। উন্নত বিশ্বের খাদ্য নিরাপদ সংস্থার আদলে বাংলাদেশকেও গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে আমেরিকার এফডিএর মতো নিরাপদ খাদ্য প্রতিষ্ঠানকে সামনে রেখে আমাদেরও সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টাকে নতুন উদ্যমে তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে মালিক পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। মূল কথা হলো নিরাপদ খাদ্য তৈরিতে করণীয় অনেক কিছুরই ঘাটতি রয়েছে, যেগুলো চিহ্নিত করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরী। এ ছাড়া সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দৌর্বল্য কিংবা ত্রুটিবিচ্যুতি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান করতে পারলেই উপস্থিত সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের পথ সহজ হবে।
×