ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যা মামলা

চূড়ান্ত পর্বে রাষ্ট্র পক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

চূড়ান্ত পর্বে রাষ্ট্র পক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ১১ সেপ্টেম্বর ॥ ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার নিষ্পত্তির চূড়ান্ত পর্বে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। বুধবার যুক্তিতর্ক শুরু করেছেন। আগামী তিন কার্যদিবস রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক শেষে করতে লাগবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করলে বাদীপক্ষ অংশ নেবেন। পরে আসামি পক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক শুরু করবেন। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের বিচারক রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন। আদালত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মুলতবি করেছেন বিচারক। বিচার শুরুর ৪৭ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষী সশরীরে আদালতে এসে সাক্ষ্যপ্রদান করেন। মামলার অভিযোগ পত্রে ৯২ সাক্ষীর নাম দিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই। বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ধার্য তারিখ বুধবার সকালে ফেনী করাগার থেকে ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হয়। দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ মামুনুর রসিদের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত আলিমের আরবী পরীক্ষা প্রথমপত্র দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচদিন পর গত ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে সোনাগাজীতে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য ॥ কোর্ট রিপোর্টার জানান, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দীর ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর মামলায় সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহারকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে নুসরাতের মা ও তার ছোটভাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। বুধবার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে। সাক্ষ্যে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে নিয়ে আমরা থানায় গিয়েছিলাম। এরপর নুসরাতকে ওসি তার রুমে ডেকে নিয়ে যায়। ওসির রুমের ভেতরে আমাদের ঢুকতে দেয়নি। এর কিছু সময় পর নুসরাত বের হয়ে এসে জানায়, তার কথা কেউ একজন ভিডিও রেকর্ড করেছে। তিনি আরও বলেন, ভিডিওটি ৩০ মিনিট পরে ওসি মোয়াজ্জেম মিডিয়াতে ছেড়ে দেয়। নুসরাতের ছোটভাই রাশিদুল হাসান রায়হান জবানবন্দীর সময় আদালতকে বলেন, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মোয়াজ্জেম রুমে আপুকে ডেকে নেয়। আমাদের বাইরে থাকতে বলে। ওসির রুম থেকে বের হওয়ার পর কান্না করতে করতে আপু বলে, ওসি মোয়াজ্জেম তার মুখোশ খুলে আপত্তিকর প্রশ্ন করে। মামালা দায়ের করার পর থানা ত্যাগ করে আমরা চলে আসি। গত ১২ এপ্রিল আমার ফেসবুক দেখলাম আপুকে আপত্তিকর কিছু প্রশ্ন করা হচ্ছে। মামলা করার পর ওসি মোয়াজ্জেম সেদিন আইনের সহায়তা দিলে আজ আপুকে পরপারে যাওয়া লাগতো না। এদিন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ তাদের জেরা করেন। এ নিয়ে পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছে আদালত। গত ২৪ জুন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে জেল কোড অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত ১৬ জুন বিকেলে হাইকোর্ট এলাকা থেকে আটক হওয়ার পর ওসি মোয়াজ্জেম শাহবাগ থানা পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। এরপর ১৭ জুন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় বিচারিক আদালত। সোনাগাজীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি থানায় অভিযোগ দিতে আসার পর তাকে আপত্তিকর প্রশ্ন করা ও ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে।
×