ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম টেস্টে শঙ্কায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  চট্টগ্রাম টেস্টে শঙ্কায় বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ চট্টগ্রাম টেস্টে এ মুহূর্তে নিশ্চিতভাবেই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৪৮ রানে পিছিয়ে থাকায় শঙ্কাতেও আছে বাংলাদেশ। রশীদ খান (৪/৪৭) এমন স্পিন জাদুই দেখিয়েছেন তাতেই ডুবছে সাকিবের দল। আজ তৃতীয়দিনে টেস্টের আসল চিত্র ফুটে উঠবে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৭৪ বলে অপরাজিত ৪৪) ও তাইজুল ইসলাম (৫৫ বলে অপরাজিত ১৪) শেষ মুহূর্তে গিয়ে হাল না ধরলে বাংলাদেশ তো প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ১৯৪ রান করে দ্বিতীয়দিন শেষ করতেই পারত না। প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তান যে ৩৪২ রান করেছে, তাতেই মহাবিপদে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এরপর যখন ৮৮ রানে ৫ উইকেট পড়ে গেল এবং ১০৪ রান হতেই ৬ উইকেটের পতন ঘটল, তখনই ভয় ঢুকে যায়। ফলোঅনেই না পড়ে যায় বাংলাদেশ। তা এড়িয়ে গেলেও দুই শ’ রানের কাছে যেতে পারবে বাংলাদেশ তা নিয়েও ছিল সংশয়। কিন্তু মোসাদ্দেক ও তাইজুল মিলে নবম উইকেটে ৪৮ রানের জুটি গড়ে দ্বিতীয়দিন শেষ করেন। দ্বিতীয়দিনেই বাংলাদেশ যে অলআউট হওয়ার বিপত্তিতে পড়েছিল তা থেকে মোসাদ্দেক ও তাইজুল রক্ষা করেন। এখন টেস্টের যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও, শঙ্কা থাকলেও শেষ মুহূর্তে আশার আলো দেখা মিলতেও পারে। যদি কোনভাবে মোসাদ্দেক ও তাইজুল এবং নাঈম ইসলাম মিলে দলকে ২৫০ রানে নিয়ে যেতে পারেন, তাহলে আফগানিস্তান থেকে ১০০ রানে পিছিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। উইকেটে বল যেভাবে নিচু হচ্ছে, ঘূর্ণি জাদুর দেখা মিলছে, তাতে আফগানদের দ্বিতীয় ইনিংস ১৫০ রানের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারলে আলোর রেখা মিলতে পারে। তখন বাংলাদেশের সামনে টেস্ট জিততে ২৫০ রানের টার্গেট পড়বে। সেই রান করে বাংলাদেশ জয়ের বন্দরে পৌঁছেও যেতে পারে। কিন্তু এর বিপরীত হলে প্রথম ইনিংসে আড়াই শ’ রানও যদি করা না যায়, আফগানদেরও দ্বিতীয় ইনিংস দেড় শ’ রানের মধ্যে বেঁধে রাখা না যায় তাহলে বাংলাদেশ যে ডুবে আছে সেই অবস্থাতেই থাকবে। তখন হারের যে শঙ্কা দেখা যাচ্ছে সেই ফলই ভোগ করতে হবে। কি হতে পারে চট্টগ্রাম টেস্টে তা আজই পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। দ্বিতীয়দিনে বোলিংয়ে দুর্দান্ত করেছেন বাংলাদেশ বোলাররা। তাইজুল ইসলাম তো প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয়দিনেও শুরুতে ২টি উইকেট তুলে নেন। এরপর সাকিবও ২ উইকেট শিকার করে ফেলেন। আফগানরা প্রথমদিনের হাতে থাকা ৫ উইকেটে ২৭১ রানের বেশি করতে পারেনি। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। প্রথমদিনে যে ৫ উইকেটে ২৭১ রান করেছিল তাই আফগানিস্তানকে ভাল সম্বল এনে দেয়। আসগর আফগান শেষ পর্যন্ত ৯২ রান করতে পারেন। রহমত শাহ’র (১০২) পর টেস্টে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান হতে পারেননি আসগর। আর আফসার জাজাইয়ের ব্যাট থেকে আসে ৪১ রান। একটা সময় তো ৩২০ রান করাই আফগানিস্তানের কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু রশীদ খান এমনই ধুন্ধুমার ব্যাটিং করা শুরু করেন যে ৬১ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৫১ রান করে দলকে শেষ পর্যন্ত ৩৪২ রানে নিয়ে যান। বাংলাদেশের ঘাড়ে মহাবিপদ তখনই জড়ো হয়। সেই বিপদ থেকে উদ্ধার হতে ওপেনার তামিম ইকবাল টেস্টে না থাকায় সাদমান ইসলামের সঙ্গে সৌম্য সরকারের ওপর ভরসা করা হয়। দুইজনই ব্যর্থ হন। সাদমান রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরেন। সৌম্যের ব্যাট থেকে ১৭ রানের বেশি আসেনি। এরপর লিটন কুমার দাস (৩৩), মুমিনুল হক (৫২), সাকিব আল হাসান (১১), মুশফিকুর রহীম (০), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৭) মতো ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিংয়ে থাকা মানে ভরসা থাকা। কিন্তু কেউই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। যে কোন একজন ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেললেই হতো। কিন্তু এক মুমিনুল ছাড়া এ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেউই ঘূর্ণির ফাঁদ থেকে বাঁচতে পারেননি। লিটনও চেষ্টা করেন। কিন্তু বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। রশিদ তো অসাধারণ বোলিং করেন। ব্যাট হাতে দলের ভরসা হয়ে ওঠার সঙ্গে বল হাতে দেখিয়ে দিলেন তিনি কতটা পারদর্শী। রানের খাতা খোলার আগে সাদমান, দলের ৩৮ রানে সৌম্য আউটের পর রশীদের ভেল্কি যে শুরু হয় তা লিটন, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহকে আউট করেই শেষ হয়। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের আউট করে রশিদ তো বাংলাদেশ ইনিংসের মাজাই ভেঙ্গে দেন। ১০৪ রানে যে ৬ উইকেটের পতন ঘটে, রশীদই চার উইকেট শিকার করে নেন। রশীদের ঘূর্ণিতে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এমন অবস্থায় ফলোঅন এড়াতে যে ১৪২ রানের বেশি করতে হবে তা করতে পারবে কিনা বাংলাদেশ তা নিয়ে খানিক শঙ্কা তৈরি হয়। মুমিনুল হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হওয়ার আগে দলকে ১৩০ রানে রেখে যান। সেখান থেকে মোসাদ্দেক ও মেহেদী মিরাজ মিলে দলকে ১৪৬ রানে নিয়ে গিয়ে ফলোঅন এড়ান। কিন্তু এমন মুহূর্তে মিরাজও (১১) আর এগিয়ে যেতে পারেননি। ব্যর্থতার মিছিলে নিজের নাম লেখান। ১৪৬ রানেই ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দল যে আর কোন উইকেট না হারিয়ে ১৯৪ রান করে দ্বিতীয়দিন শেষ করে সেই সম্ভাবনা একেবারেই ছিল না। কিন্তু মোসাদ্দেক ও তাইজুল মিলে সেই কাজটি করেন। তাইজুল তো এতটা ধৈর্য ধরে ব্যাটিং করেন যেন পেশাদার ব্যাটসম্যান তিনি। যারা ব্যাটিংয়ে সিদ্ধহস্ত তাদের দেখিয়ে দেন কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়। মোসাদ্দেক তো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের হাল ধরেন। এ দুই ব্যাটসম্যান আজ তৃতীয়দিনের খেলা শুরু করবেন। যদি তারা দ্বিতীয়দিনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন তাহলে ভাল কিছু মিলতে পারে। এরপর আফগানদের অল্পতে বেঁধে রাখা গেলে ফলও নিজেদের দিকে আনা সম্ভব। তা নাহলে চট্টগ্রাম টেস্টে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তাতেই ঘুরপাক খাবে বাংলাদেশ।
×