ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকগুলোর স্বনির্ভরতা আবশ্যক

প্রকাশিত: ১২:১৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ব্যাংকগুলোর স্বনির্ভরতা আবশ্যক

অর্থনীতি : সদ্য মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আর কোন রিফাইন্যান্স করা হবে না।’ এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন? শামস-উল-ইসলাম : সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপকে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানাই। সব ব্যাংকেরই তার নিজের পায়ের ওপর দাঁড়ানো উচিত। ভর্তুকি বা সাহায্য নিয়ে যেমন কোন জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না ঠিক তেমনি একটি প্রতিষ্ঠানও দয়া দাক্ষিণ্যের ওপর টিকে থাকতে পারে না। প্রত্যেককে তার নিজ নিজ সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বোঝা হয়ে সমাজে টিকে থাকার মধ্যে গর্বের কিছু নেই। বর্তমান সরকারের পরিকল্পনামতো ব্যাংকে ভর্তুকি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্র এসব ব্যাংকের আয়ের কিছু উৎস তৈরি করে দিতে পারে। সরকার যদি ব্যাংকিং সেক্টরকে ডি-সেন্ট্রালাইজড করে অর্থাৎ যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে সে কাজগুলো শুধু সোনালী ব্যাংক করে থাকে। এর পরিবর্তে যদি বিভাগ অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত একেকটি ব্যাংককে এক এক বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয় তবে প্রত্যেকেরই আয়ের উৎস বাড়ে। দিন শেষে প্রত্যেকেই স্বনির্ভরতা লাভ করতে পারবে। তখন এই ব্যাংকগুলোকে কারও মুখাপেক্ষি হতে হবে না। পাশাপাশি একটি মৃদু প্রতিযোগিতা থাকবে। বছর শেষে কার মুনাফা কত বেশি। এখানে একটি বিষয় বলতে চাই বিগত ছয় বছর ধরে আমরা কোন ক্যাপিটাল সরকার থেকে নিচ্ছি না। কিছু ঘাটতি আমাদেরও রয়েছে। তবে আমরা অগ্রণী ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি এবং এটাতে সফল হব ইনশাআল্লাহ। অর্থনীতি : সরকারী ব্যাংকগুলোর সেবাদানের বিষয়ে জনগণের মধ্যে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, আপনি কী মনে করেন? শামস-উল-ইসলাম : বর্তমানে অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। আজ জনগণের ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কাস্টমার দিন দিন বাড়ছে। সেবাদানে গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনীতি : বর্তমান সরকার বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নে শতকরা ২ ভাগ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে, এই উদ্যোগকে আপনি কীভাবে দেখছেন? শামস-উল-ইসলাম : এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। এই মহৎ উদ্যোগের ফলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিজ দেশে টাকা পাঠাতে বিপুল উৎসাহী হচ্ছে। টাকার প্রণোদনার পাশাপাশি তারা নিজেদের সম্মানিত বোধ করছেন। তারা মনে করছেন রাষ্ট্র তাদের একটা স্বীকৃতি দিয়েছে। অর্থনীতি : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে অর্থনৈতিক মুনাফার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয় নিয়ে কিছু বলুন। শামস-উল-ইসলাম : অর্থনৈতিক মুনাফার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাকে আমাদের মানতে হবে। যেমন বছর তিনেক আগে হাওড় অঞ্চলে আকস্মিক বন্যাকবলিত হওয়ার পর আমরা অর্থাৎ অগ্রণী ব্যাংকই প্রথম ওখানে গিয়ে তাদের শতকরা ৫০ ভাগ কম সুদে ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং রিকভারি পলিসিতেও এনেছে অনেক শিথিলতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে অগ্রণী ব্যাংকও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। অর্থনীতি : একজন এমডি হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান অবস্থান নিয়ে কিছু বলুন? শামস-উল-ইসলাম : আমি দায়িত্ব নেয়ার ২ বছর ১০ মাস পর ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩ শতাংশ। পূর্বের ৪৭ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬৮ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রিম বৃদ্ধি হয়েছে ২৫ হাজার ১৭৪ কোটি থেকে ৪৩ হাজার ৫২৬ কোটি অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ। পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩১ কোটি টাকা থেকে ২০১৬, ১৭ ও ১৮ সালে যথাক্রমে ৫৫৫, ৮১৩ ও ৮৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ৩২৪ শতাংশ। ফরেন রেমিটেন্স একটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিগত কয়েক বছর ধরে ফরেন রেমিটেন্স আহরণে রাষ্ট্র মালিকানা ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম স্থান ধরে রেখেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সরকারের প্রতিটি শাখা-প্রশাখাকে ডিজিটাল করতে হবে। জনগণ যেন অনলাইন সুবিধা নিতে পারে সর্বত্র। আজ একবিংশ শতাব্দীতে যখন সবকিছুই অনলাইনভিত্তিক সেখানে প্রচলিত সনাতনী ব্যাংকিং ব্যবস্থা অকার্যকর। ২০১৬ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের শাখাসমূহে নামমাত্র অনলাইন সুবিধা প্রচলিত ছিল। আজ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র অগ্রণী ব্যাংকের সকল শাখা অর্থাৎ ৯৫৩টি শাখাই রিয়েল টাইম অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন ও সেবা প্রদান করছে। এতে করে জনমনে এই ব্যাংকটি নিয়ে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। সাধারণ জনগণ অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে আগ্রহী হচ্ছেন। ব্যাংকটির আরেকটি সফলতার কথা না বললেই নয়। রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক সর্বপ্রথম ও একমাত্র ব্যাংক হিসেবে অফ্শোর ব্যাংকিং ইউনিট কার্যক্রম চালু করেছে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই ইউনিটের মোট বিনিয়োগ ১২ হাজার ৪২৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার। অর্থনীতি : আপনিই তো প্রথম বঙ্গবন্ধু কর্নার করার চিন্তা করেছিলেন, এ বিষয়ে কিছু বলুন? শামস-উল-ইসলাম : যার জন্য আজ আমরা এদেশ পেলাম তাঁর স্মৃতি ধরে রাখাটা আমাদের দায়িত্ব। সিলেট বিভাগে জিএম থাকা অবস্থায় আমি মৌলভীবাজারের জোনাল অফিসে গিয়ে দেখি অনেক বড় জায়গা। সেখানেই প্রথম বঙ্গবন্ধু কর্নারের আইডিয়া দিই। নিজে একটা বুক সেলফ ও বঙ্গবন্ধুর ওপর কিছু বই ডোনেট করি এবং ২০১০ সালে তৈরি করি বঙ্গবন্ধু কর্নার। এরপর আনসার ভিডিপি ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় সেখানেও তৈরি করলাম ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’। অগ্রণী ব্যাংকের ষষ্ঠ তলায় স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ৪০০-এর বেশি বইসহ বঙ্গবন্ধু কর্নার। আজ আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত যে সারাদেশে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপিত হচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে আমি একেবারে ভিন্নধর্মী একটি গ্রন্থ রচনা করি। বইটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার, নন্দিত উদ্ভাবন।’ সবশেষে আমি বলতে চাই, আমি দুটি দায়মুক্তি পেলাম। এক হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ করতে পেরে আর দ্বিতীয়টি ‘অগ্রণী ব্যাংক পরিবার : মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ গ্রন্থটি প্রকাশ করতে পেরে।
×