ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষ দশ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ৪৭ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শীর্ষ দশ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ৪৭ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের শীর্ষ দশ ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এটি মোট খেলাপী ঋণের ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ। এর মধ্যে একক ব্যাংক হিসাবে সবচেয়ে বেশি খেলাপী ঋণ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপী ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে শীর্ষ ঋণ খেলাপী ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে এবি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপী ঋণের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। সূত্র জানায়, নতুন বছরে খেলাপী ঋণ এক টাকাও বাড়বে না, অর্থমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরেও চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দশটি ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ। অথচ গতবছরের (জুন-১৮) জুন পর্যন্ত এই দশ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ছিল ২৫ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ১০ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপী ঋণ। এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে কয়েকটি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ব্যাংকগুলোকে অতিমাত্রায় ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, খেলাপী ঋণ কমার পরিবর্তে এভাবে বাড়তে থাকলে ব্যাংকিং খাত আরও চাপে পড়বে। তাই যেকোন মূল্যে খেলাপী ঋণ উদ্ধার করতে হবে। এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও বেসরকারী ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, খেলাপী ঋণ সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু কয়েকটি ব্যাংকের সমস্যা না বরং পুরো ব্যাংকিং খাতের সমস্যা। তিনি বলেন, সরকার খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরের প্রথম তিন মাসে যেভাবে খেলাপী ঋণ বেড়েছিল, পরের তিন মাসে বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে। তবে আশা করছি আগামী কোয়ার্টারে খেলাপী ঋণ আরও কমে আসবে। শীর্ষ ১০ ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ॥ চলতি বছরের ৩০ শে জুন পর্যন্ত সময়ে দেশের শীর্ষ দশ ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের খেলাপী ২০ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে শীর্ষ ঋণ খেলাপী ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে, এবি ব্যাংকে ৬ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফার্মার্স ব্যাংক) ৩ হাজার ৬১১ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। এছাড়াও আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংক ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংক ১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা ও কমার্স ব্যাংক ৯৯৭ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ রয়েছে। অন্যদিকে, গতবছরের ৩০ শে জুন (অর্থাৎ জুন-১৮) পর্যন্ত সময়ে উল্লেখিত দশ ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের খেলাপী ছিল ৯ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা, এবি ব্যাংক ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৫ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফার্মার্স ব্যাংক) ১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। এছাড়াও আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৪২২ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংক ১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংক ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৯৫০ কোটি টাকা ও কমার্স ব্যাংক ৫৫০ কোটি টাকা। গত এক বছরে শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি খেলাপী ঋণ বেড়েছে এ ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপী ঋণ বেড়েছে সাড়ে চার শ’ শতাংশ।
×