ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় সাধারণ মানুষই সচেতন হয়ে এডিস তাড়াচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:০৩, ৩১ আগস্ট ২০১৯

 বগুড়ায় সাধারণ মানুষই  সচেতন হয়ে  এডিস তাড়াচ্ছে

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় ডেঙ্গু রোগবাহিত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে (প্রতিরোধে) নগরীর সাধারণ মানুষই বেশি সাবধানতা অবলম্বন করেছে। বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থার ভূমিকা প্রথমদিকে সক্রিয় ছিল। পরে তা থিতিয়ে গিয়ে লোক দেখানো অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আবার কোন সংস্থার ভূমিকা শুধুই শোডাউন ও ফটোসেশন। এদিকে এডিস হামলা থেকে রক্ষা পেতে ধুপ, এক ধরনের স্প্রে, ক্রিম, ম্যাটের বিক্রি বেড়েছে। তবে বেশি দামে। দিন কয়েক আগে দেখা যায় পৌরসভা ভবনের ভেতরে কয়েকটি ড্রামে পানি জমে আছে। লোকজন দেখতে গেলে ড্রাম থেকে পানি ফেলে উল্টে রাখা হয়। পুলিশ বিভাগ শুরুতে নগরীর কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় প্রায় ৫০টি ছোট বড় ফগার মেশিনে ডিজেল পেট্রোলের ধোঁয়া (কুয়াশা) সৃষ্টি করে উড়ন্ত এডিস মশা তাড়িয়ে দেয়। পুলিশ বিভাগ থেকে একটি সেল ফোন নম্বর দিয়ে (টোল ফ্রি নয়) বলা হয় কোন এলাকার মানুষ সহযোগিতা চাইলে ফগার দিয়ে স্প্রে করে আসবে। ব্যস এই পর্যন্তই। জেলা প্রশাসন নগরীর কেন্দ্রস্থলে অনেক ফগার মেশিন এনে স্প্রে করে সাধারণ মানুষকে জানিয়েছে তারা বসে নেই। পৌরসভার ভাবটা এমন- মশক নিধনের দায়িত্ব তো তাদের। এখন পৌর এলাকার চিত্রটি দেখা যাক- পৌর অফিসের মধ্যে উন্মুক্ত ড্রাম উল্টে রাখা হয়েছে। নগরীর যে এলাকার মধ্যে পৌরভবন এবং পৌরপিতার (মেয়র) বাসভবন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার কার্যালয় সেই জলেশ^রিতলা এলাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। জলেশ^রিতলা এলাকাটি অভিজাত। শহীদ আব্দুল জব্বার সড়কের দুই ধারে, কালিবাড়ির আশপাশে অত্যাধুনকি শপিংমল, দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের শোরুম, কাস্টমার কেয়ার সেন্টার, কোচিং সেন্টার, স্কুল হেলথ ক্লিনিক, চায়নিজ রেস্তরাঁ ও ফাস্টফুডের ঝলমলে দোকান এবং শতাধিক বহুতল ভবন। এবার অন্য এলাকার চিত্র- সূত্রাপুর গোহাইল রোড, রিয়াজ কাজী লেন, খান্দার, সেউজগাড়ি, ঠনঠনিয়াসহ কয়েকটি এলাকার ড্রেন পরিষ্কার হয়নি। ফগার মেশিনে স্প্রে করা হয়নি। কবি নজরুল ইসলাম সড়কে ড্রেনের স্লাব তুলে রাখা হয়েছে কয়েকদিন হয়। নোংরা হয়ে আছে। স্টেশন রোডের ধারে বিআরটিসি বহুতল মার্কেটের পাশের জলাশয় মশক প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে আছে। কোন গরজ নেই। পুলিশ অফিসে রাখা বাজেয়াফত করা গাড়ির ভেতরে এডিসের অভায়াশ্রম হয়ে আছে। খোঁজ-খজর করে জানা যায়, হাতেগোনা প্রতিষ্ঠান এবং নগরীর মানুষ নিজ উদ্যোগেই এডিস মশা তাড়িয়ে দিতে বহুমুখী ব্যবস্থা নিয়েছে। উচ্চবিত্তরা ছোট ফগার মেশিন কিনে স্প্রে করছে। মধ্যবিত্তরা সন্ধ্যায় ধুপের ধোঁয়া দিচ্ছে। কেউ ম্যাট ও বিভিন্ন ধরনের স্প্রে কিনে সকাল সন্ধ্যায় স্প্রে করছে। শিশু-কিশোর তরুণদের অনেকে এক ধরনের ক্রিম পায়ের নিচের অংশে ব্যবহার করছে। এই ক্রিমের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। পৌরসভার সচিব জানিয়েছেন, মশক নিধনে এ পর্যন্ত প্রায় ২১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। স্প্রে করা হয়েছে ১২৫ লিটার। ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে প্রায় ১৬শ’ কেজি। বড় অটো চার্জার ফগার মেশিনসহ সাতটি ফগারে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। ২৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার লিটার পেট্রোল ও ৬শ’ লিটারের বেশি অকটেন কুয়াশা স্প্রে করে উড়ন্ত এডিস তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রায় এক লাখ সচেতনতার লিফলেট রিবতরণ করা হয়েছে। পৌর মেয়র মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন ডেঙ্গু ঠেকাতে আরও কিছু অর্থ পাওয়া গেছে। এডিসসহ সকল মশা নিয়ন্ত্রণে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। জেলার সিভিল সার্জন গাউসুল আজিম চৌধুরী জানিয়েছেন গত এক মাসে সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ৮২৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসাধীন আছেন ৭৯ জন। সরকারী হাসপাতালসহ সকল রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে।
×