ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ছে

আল্লাহর দল ভবিষ্যতে আতঙ্কের কারণ হতে পারে

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ৩১ আগস্ট ২০১৯

 আল্লাহর দল ভবিষ্যতে আতঙ্কের কারণ হতে পারে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ জেএমবির মতো সারাদেশে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে জঙ্গী সংগঠন আল্লাহর দল। অদূর ভবিষ্যতে সংগঠনটি বড় ধরনের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইতোমধ্যেই দেশের প্রতিটি থানা পর্যায়ে তারা স্বল্প পরিসরে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্রাম পর্যন্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে তারা। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় এক লাখ। সংগঠনটি সশস্ত্র জিহাদ করতে ছোট পরিসরে কয়েকটি ইউনিট গঠন করেছে। এসব সশস্ত্র ইউনিটকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জঙ্গী সংগঠনটিতে যোগ দেয়া বিভিন্ন বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ব্যাংকে বেনামে সংগঠনটির বিশটি এ্যাকাউন্টে এক কোটির বেশি পরিমাণ টাকা থাকার তথ্য মিলেছে। এসব এ্যাকাউন্ট জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। জঙ্গী সংগঠনটি নাশকতা চালিয়ে সরকার উৎখাত করে দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে এমনটাই জানালেন। বললেন, জেএমবি দুর্বল হওয়ার পর নতুন করে জঙ্গী সংগঠনটি গোপনে সংগঠিত হচ্ছিল। জঙ্গী সংগঠনটির গোড়াপত্তন হয় ১৯৯৫ সালে। জঙ্গী মতিন মেহেদী ওরফে মুমিনুল ইসলাম ওরফে মহিত মাহবুব ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে মতিনুল হকের নেতৃত্বে জঙ্গী সংগঠনটি গঠিত হয়। ২০০৪ সালের শেষে দিকে জেএমবির সঙ্গে সারাদেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) সিরিজ বোমা হামলায় অংশ নেয় জঙ্গী সংগঠনটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে জেএমবির সঙ্গে থাকা আল্লাহর দল পৃথক হয়ে যায়। ২০০৭ সালে মতিন মেহেদী গ্রেফতার হয়। এরপর থেকেই তার অনুসারীরা জঙ্গী সংগঠনটিকে পুনরায় সংগঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই গত ১৮ আগস্ট ঢাকার হাতিরঝিল এলাকা থেকে জঙ্গী সংগঠনটির চার সদস্য ইব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৬), আবদুল আজিজ (৫০), শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) ও রশিদুল ইসলামকে (২৮) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব-৩ এর একটি দল। এদের তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৩ আগস্ট ঢাকার দক্ষিণখান থেকে র‌্যাব-১ সিরাজুল ইসলাম (৪৬), মনিরুজ্জামান মনির (৪০), এসএম হাফিজুর রহমান সাগর (৪৫) ও শফিউল মোযনাবীন তুরিন (২৭) নামের জঙ্গী সংগঠনটির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে জঙ্গীবাদের নানা আলামত মিলে। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান জনকণ্ঠকে জানান, প্রথম দফায় গ্রেফতারকৃত চার জঙ্গী সংগঠনটির সদস্যকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে এবং অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা এড়াতে সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের দলের ভেড়ানোর চেষ্টা করত। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে বলেন, তারা বিভিন্ন বাহিনীর আদলে দল গোছাচ্ছে। ইতোমধ্যেই তারা থানা পর্যায় পর্যন্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। অদূর ভবিষ্যতে তাদের গ্রাম পর্যন্ত নেটওয়ার্ক গড়ার পরিকল্পনা আছে। জেএমবির আদলে তারা সারাদেশে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তাদের সদস্যরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তথ্য আদান প্রদানের জন্য তারা সনাতন পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত চিরকুট ও নিজস্ব লোক ব্যবহার করছে। সারাদেশে তাদের নেতাকর্মী সমর্থক মিলে প্রায় এক লাখ লোক কাজ করছে। তারা ইতোমধ্যেই সশস্ত্র জিহাদ করতে সশস্ত্র ইউনিট গঠন করেছে। তবে সেই সশস্ত্র ইউনিটের সুনির্দিষ্ট কোন সংখ্যা জানা যায়নি। সশস্ত্র ইউনিটগুলোর জন্য তারা অস্ত্র-গোলাবারুদ কিনছিল। জঙ্গী সংগঠনটিতে দেশের সব বাহিনীর সদস্য রয়েছে। তাদের দিয়ে সশস্ত্র ইউনিটগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের। অস্ত্র-গোলাবারুদ কেনার জন্য তারা সারাদেশের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। তাদের দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ইসলামী দল ও জঙ্গী সংগঠন সহায়তা করছে। ইতোমধ্যেই সংগঠনটির বিভিন্ন ব্যাংকে বেনামে থাকা ২০টি এ্যাকাউন্টে এক কোটির বেশি টাকা জমা থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছে। ওইসব টাকা সংগঠনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং অস্ত্র-গোলাবারুদ কেনার জন্য ব্যয় হওয়ার কথা ছিল। জঙ্গী অর্থায়নের এসব টাকার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে শাখাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। জঙ্গী সংগঠনটির প্রথম টার্গেট দলের কারাবন্দী আমীর মতিন মেহেদীকে ছিনিয়ে নেয়া। এরপর সারাদেশে গড়ে তোলা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে সরকার উৎখাত করা। সরকার উৎখাতের পর দেশী-বিদেশী দল ও জঙ্গী সংগঠনের পরামর্শে দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা।
×