ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৩০ আগস্ট ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ গত মঙ্গলবার ছিল কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম প্রয়াণবার্ষিকী। তিনি যেমন দ্রোহের কবি, তেমনি প্রেমের। অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভাস্বর ব্যক্তিত্ব। কী অবলীলায় বলতে পেরেছিলেন: ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম?’ ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?/কা-ারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র...। একই কবিকে বলতে শুনিÑ আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!/বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর...।’ এতকাল পরও তাঁর লেখাগুলো নাড়া দেয়। যেন সমকালে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন তিনি। মহা প্রয়াণের দিনে নজরুলের কবিতার অনুরাগীরা একই দর্শনে বিশ্বাসীরা কবিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। প্রতিবারের মতোই ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল সমাধি। সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পালন করা হয়েছে নানা কর্মসূচী। তবে এসব কর্মসূচীর দুর্বলতম দিক এই যে, আনুষ্ঠানিতার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়। সে তুলনায় হৃদয়াবেগ যৎসামান্য। এ কারণেই হয়তো নজরুলের সাম্যের সমাজ, মানুষের পৃথিবী ক্রমেই দুর্লভ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় কবির সৃষ্টির আলোয় অবগাহন করা এবং তার দর্শনকে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলন ঘটানো জরুরী। আমরা কি ভেতর থেকে তা উপলব্ধি করব না? আগস্ট প্রায় শেষ হলো। আগামীকাল শনিবার বিদায় নিচ্ছে শোকের মাস। মাসের একেবারে প্রথম দিন থেকেই জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছে। রাজধানী শহর ঢাকায় এখনও চলছে সভা সেমিনার। আলোকচিত্র ও চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। মঞ্চস্থ হচ্ছে নতুন নাটক। বিশেষ করে মুজিববর্ষ সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগস্টে যেন তার একটা রিহার্সাল হয়ে গেল। তবে ঢাকার দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কুৎসিত। শোক প্রকাশের কথা বলা হলেও, পাড়ার উঠতি নেতারা এসব পোস্টারে নিজেদের নির্লজ্জ প্রচার চালিয়েছে। ভুল বানানে লেখা। অর্থহীন বাক্য। দেখে অরুচি হয়। দেয়াল এবং ফ্লাইওভারের পিলারগুলোতে এসব পোস্টার লাগিয়ে কী যে নোংরা একটা অবস্থা করা হয়েছে! জাতির জনকের প্রতিকৃতি কোথাও ছেঁড়া। কোথাও বাঁকা হয়ে ঝুলে আছে। অর্ধেক খসে পড়া পোস্টারে কে দেখতে চান বঙ্গবন্ধুকে? অথচ এসব বন্ধে কোন উদ্যোগ নেই। মুজিবের জন্মশতবর্ষে বহু উৎসব অনুষ্ঠান হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু আমি বলি, তার আগে যেখানে সেখানে জাতির জনকের পোস্টার সাঁটানো বন্ধ করুন। আর নেয়া যাচ্ছে না। তার পর শতবর্ষের বাকি কাজ করুন। কেউ কি শুনবেন এই আবেদন? আছেন কেউ? ডেঙ্গু প্রসঙ্গে আসা যাক, এবার বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। মেয়র আতিকুল ইসলাম মচকে যাওয়া পা নিয়েই গত কয়েকদিন মাঠে আছেন। বাসা বাড়ির চারপাশের পরিবেশ দেখার চেষ্টা করছেন তার কর্মীরা। কিন্তু অভিজ্ঞতা ভাল নয়। মেয়র বারবারই বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের কাজে সহায়তা করুন। কিন্তু সে তুলনায় কম মানুষই সহযোগিতা করছেন। তার মানে, নিজের বাসায় এডিস চাষ হবে। আর দায় অন্যের? অন্যকে দোষ দোষ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করবেন আপনি। এটা তো হতে পারে না। ভেবে অবাক লাগে, অনেক বাসার আশপাশে পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। এডিসের লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানা করা হচ্ছে। জরিমানার ভয়ে গেট খুলতে চাচ্ছে না বাড়ির মালিকরা। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালিকের বাসভবনের সীমানা প্রাচীর টপকাতে ব্যর্থ হয়েছেন মেয়র আতিক। এইডিস মশা নির্মূলে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযানের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার বারিধারার পার্ক রোডে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছার চেষ্টা করেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। কিন্তু শত চেষ্টা করেও গেট খোলানো সম্ভব হয়নি। মন্ত্রী যেহেতু, বড় ব্যাপার। তার বাসায় যে কেউ ঢুকে গেলে তো চলবে না। রাজা বাদশার বাড়িতে প্রজারা চাইলেই তো আর ঢুকতে পারেন না। এদিন সিটি কর্পোরেশনও পারেনি। সৌজন্যতা দেখিয়ে ফিরে এসেছেন মেয়র। এর পর থেকে ঘটনাটি আলোচনায়। ঢাকার সচেতন মানুষ বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর বাসায় সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রবেশ করতে দিলে সাধারণ নাগরিকরা একটি বার্তা পেতেন। সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করা উচিত। করতে হবে। এমন বার্তা দেয়া যেত স্বাস্থ্য মন্ত্রীর বাসভবন থেকে। সেটি হলো না। ঢাকার চেনা পরিচিত বাড়িওয়ালাদেরও অনেকে এমন অভিযানে নাখোশ বলে মনে হয়েছে। প্রসঙ্গ উঠতেই কাঁঠালবাগানের এক বাড়ির মালিক, নাম আব্দুর রব, বলছিলেন, এ আবার কী শুরু করল সিটি কর্পোরেশন? বাসায় ঢুকে জরিমানা করছে। নতুন অত্যাচার। অবশ্য একই ব্যক্তি পরে বললেন, বাসার সামনের জয়াগাটা পরিষ্কার করালাম আজ। গাছগুলো জঙ্গলের মতো হয়ে গিয়েছিল, ছেঁটে দিয়েছি। বাসা রং করার পর ছাদে কিছু কৌটা রাখা ছিল। সেগুলোতে পানি জমে ছিল। গতকাল খালি করে উল্টে রেখেছি। তা না হলে দেখা যাবে মেয়রের লোকেরা এসে জরিমানা করে দিয়েছে! তার মানে, সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের সমালোচনা করলেই যে মশা দূর হবে না, নিজেদেরও সচেতন হতে হবে, সেটি এখন অনেকে বুঝতে শুরু করেছেন। মুখে স্বীকার না করলেও বুঝতে শুরু করেছেন বলেই মনে হয়। বাকিরা বাধ্য হচ্ছেন বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করতে। এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিনামূল্যে স্প্রে বিতরণ করা হচ্ছে। কর্পোরেশনে উপস্থিত হয়ে এসব স্প্রে সংগ্রহের কথা প্রথমে বলা হলেও, এখন বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে কার্টন ভর্তি স্প্রে নিয়ে বিভিন্ন দোকানে বিলি করছিলেন একদল লোক। কথা প্রসঙ্গে তাদের একজন জানালেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এগুলো পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দোকান মালিক সমিতির মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সবক’টি দোকানে আপাতত একটি করে স্প্রে দেয়া হচ্ছে। মশা নিধনে সকলকে তৎপর করতে এই ধরনের ব্যবস্থা সহায়ক হবে বলে মনে করছে মালিক সমিতিও। গরমের কথা বলে শেষ করা যাক। ভাদ্রের গরম একদমই কমছে না। শহর ঢাকা যেন তপ্ত কড়াই। একটু আধটু বাতাস বইছে বটে। কখনও সখনও নরম রোদ। কিন্তু ভ্যাপসা গরম ছিল। আছে। গত বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি নেই। গরমে গা ঘামছে। কেউ কেউ বলছেন, বাসায় ফ্যানের নিচে বসে থেকেও কাজ হচ্ছে না। শরীর ঘামছে। এমনকি রাতে গরম। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে শুধু ভাল থাকা যাচ্ছে। কিন্তু এই সুবিধা পাচ্ছেন শহরের অল্প সংখ্যক মানুষ। বড় অংশটিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, গত বর্ষার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুনে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগস্টে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সুতরাং সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ঢাকাবাসীকে।
×