ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদিবাসীর ভূমি নানা কৌশলে কেড়ে নেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ১৩:১০, ২৮ আগস্ট ২০১৯

আদিবাসীর ভূমি নানা কৌশলে কেড়ে নেয়া হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি নানা কৌশলে কেড়ে নেয়া হচ্ছে। তাদের ভাষার অধিকার সুরক্ষিত নয়। শোষিত, নির্যাতিত ও ভূমিহীন আদিবাসীর অনেকে দেশ ত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যে কর্তব্য ছিল আর বর্তমান আদিবাসীদের যে হাহাকার; বাস্তবতা বেশ বিপরীত। এসডিজির চলমান স্লোগান ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এই নীতি বাস্তবায়নে সবচেয়ে প্রান্তিক আদিবাসী জনগণকে উন্নয়নের আলোয় নিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। সকল আদিবাসীর ভাষা ও পরিচয়কে স্বীকৃতি দানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে হবে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার এ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টসহ (এএলআরডি) ১৫টি সংগঠন আয়োজিত ‘আদিবাসী দিবস: বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভাষার অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, আদিবাসী নেতা ভিক্টর লাকড়া প্রমুখ। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং । আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভাষার অধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ভূমির সঙ্গে আদিবাসী গোষ্ঠীর সম্পর্ক চিরঞ্জীব। আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে, কোন আদিবাসীর দখল করা জমির মালিক তিনি নিজেই, রাষ্ট্র এসব জমির মালিকানা প্রথাকে যথাযথ সম্মান করবে। কিন্তু এখন বলতে দ্বিধা নেই দেশের আইনে যা আছে অনেক সময়ই এর যথাযথ প্রয়োগ করা যায় না। তবে আমাদের দেশে মুসলিম সংখ্যা বাড়ে কিন্তু আদিবাসীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এর কারণ কি? আমাদের এ নিয়ে ভাবতে হবে, মনে রাখতে হবেÑ এ দেশের মালিক আমরা সবাই। সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে আমাদের ’৭২’র সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে। তাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। দেশের একটি গোষ্ঠীকে জোর করেই দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের ভূমির অধিকার, ভাষার অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। অথচ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আমরা মূলত ওই গোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু করার মাধ্যমে নিজেদের বিবেকের কাছে নিজেরাই উদ্বাস্তু হচ্ছি। ভাষার আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত। এর পর পাকিস্তানের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে সব ধর্মবর্ণের মানুষ একটি স্বাধীন দেশের দাবিতে যুদ্ধে অংশ নেন। তারা স্বপ্ন দেখেছিল একটি সমতার রাষ্ট্রের, যেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠা থাকবে। যেখানে কোন ধর্মবর্ণের মধ্যে বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এখন দেখি আদিবাসী গোষ্ঠীকে জোর করেই দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের ভূমির অধিকার, ভাষার অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
×