ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে ঢাকার দুই সিটির অভিযান অব্যাহত

প্রকাশিত: ১১:০২, ২৮ আগস্ট ২০১৯

এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে ঢাকার দুই সিটির অভিযান অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধনকর্মীগণ চিরুনি অভিযানের তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার পুরনো ৩৬টি ওয়ার্ডে মোট ১০ হাজার ৪৬০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে মোট ২৪৮টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পায়। অভিযানে মোট ৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদিকে ১৪১টি বাড়ি-প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে চারটিতে এডিস মশার লার্ভা, তিনটিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ ও দুটি বাড়িতে নোংরা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ পাওয়া গেছে। এসব কারণে ডিএসসিসির পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ এ অভিযান চালিয়ে এই ৯ বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে মোট ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে সংস্থাটি। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, লার্ভা পাওয়া এসব বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় লেখা স্টিকার লাগানো হয়। এ ছাড়া ৬ হাজার ৬৮৩টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী স্থান/জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী এ সকল স্থান ধ্বংস করা হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরগণ চিরুনি অভিযান সক্রিয়ভাবে তত্ত্বাবধান করছেন। গত ২৫ আগস্ট থেকে ৩দিনে ৩৬টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩১ হাজার ৯১৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে মোট ৮০৪টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১৪ হাজার ৮১৯টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী স্থান/জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বারিধারায় নির্মাণাধীন নাভানা আজিজা প্লাজার প্রতিনিধিকে ১ লাখ টাকা এবং আপন রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রতিনিধিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়। এর আগে পূর্বের দেয়া সিডিউল অনুযায়ী রাজধানীর বারিধারায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাসায় মশক নিধন ও এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং মশক নিধনকর্মীরা গেলেও তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। চলমান চিরুনি অভিযান পরিচালনার জন্য ডিএনসিসির টিম গেলেও বাড়িতে কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়নি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর লোকজন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং কাউন্সিলর জাকির হোসেন তাদের পরিচয় দিলেও প্রবেশে বাধা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ ও অনুমতির জন্য সময় চান সেই কর্মকর্তা। এ সময় প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষার পর ওই কর্মকর্তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি বলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন। এরপর সেখান থেকে চলে আসেন মশক নিধনে যাওয়া কর্মকর্তারা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসা টার্গেট করে সেখানে যাইনি। পার্ক রোড এবং এ্যাম্বাসি রোডে অভিযান শুরু করি। অভিযান চালানোর সময় অন্য বাসাগুলোর পরই সিরিয়ালে মন্ত্রীর বাসা আমাদের সামনে আসে। আমরা প্রবেশ করতে চাইলেও পারিনি। এদিকে ডিএসসিসির মশক নিধন অভিযান সম্পর্কে জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জনকণ্ঠকে জানান, মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান ধানম-ির ১নং রোড পরিদর্শন করেন। সেখানে ৯/এ নং হোল্ডিংয়ে সেন্ট্রি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে পরিত্যক্ত টায়ারে প্রচুর লার্ভা পাওয়া যায়। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৪৭টি টায়ার বাজেয়াপ্ত করেন তিনি। এ এলাকার ৩৫টি বাড়ি পরিদর্শন করেন তিনি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোনিয়া হোসাইন ৪২ নং ওয়ার্ডের ২৪টি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এর মধ্যে তিনটিতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় তিনি ১০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ জাহিদ হাসান ৫৭নং ওয়ার্ডে মশা নিধনে অভিযান চালিয়ে ৩০টি বাড়ি পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে দুটি বাড়িতে নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় ৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন তিনি। ৭ ও ৪৯ নং ওয়ার্ডের মোট ৩২টি বাড়ি পরিদর্শন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সামসুল হক। এর মধ্যে তিনটিতে লার্ভা পাওয়ায় ১২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উদয়ন দেওয়ান ৩৮নং ওয়ার্ডের ২০টি বাড়ি পরিদর্শন করেন। তবে কোন লার্ভা পাননি তিনি। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, এডিস মশার লার্ভা নিধনে গত ২২ জুলাই থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মোট ৮০ হাজার ৫০০টি বাসায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এতে সাতজনকে কারাদ- এবং ৩৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
×