ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় কাদের

১৫ আগস্টের খুনীদের পুরস্কৃত না করলে জিয়াও খুন হতো না

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২৬ আগস্ট ২০১৯

 ১৫ আগস্টের খুনীদের পুরস্কৃত না করলে জিয়াও খুন হতো না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধু এবং দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন জিয়াউর রহমান। আর বিশ্বাসঘাতকতা করে জিয়া নিজেও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রবিবার ঢাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকারীদের যদি সেসময় পৃষ্ঠপোষকতা করা না হতো, খুনীদের বিচারের পথ বন্ধ করতে যদি ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা না হতো, তাহলে ১৯৮১ সালে আরেকটি হত্যাকান্ড হতো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের খুনীরা যদি পুরস্কৃত না হতো তাহলে জেনারেল জিয়াকেও আর একটি খুনী চক্র খুন করার দুঃসাহস পেত বলে আমার মনে হয় না। যে বুলেট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে এতিম করেছে, সেই একই বুলেট খালেদা জিয়াকে বিধবা করেছে। এই হত্যাকান্ডের রাজনীতির পরিণতি সবার জন্য খারাপ। ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা জেনারেল জিয়াকে খুন করতে যায়নি। তার আপন লোকেরাই তাকে হত্যা করেছে। জিয়া পরিবারের বিশ্বাসঘাতকতাই অনেকের মাঝে বিশ্বাসঘাতকতা উস্কে দিয়েছে। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ঘাতকদের আমরা চিনি। পেছন থেকে কারা তাদের সহযোগিতা করলো, পৃষ্ঠপোষকতা করল, বিদেশে চলে যেতে সাহায্য করল, তাদেরও আমরা চিনি। হত্যাকারীদের যে সহযোগিতা করেছে আর যে পৃষ্ঠপোষকতা করছে উভয়ই সমান অপরাধী। তাদের রক্ষা করার জন্য সংবিধানে পর্যন্ত আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই ইতিহাস আমরা কি করে ভুলে যাব? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড এবং ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড একই সূত্রে গাঁথা। ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে প্রাইম টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান স্বীকারোক্তিতে বলেছেন যে, হাওয়া ভবনের নির্দেশেই এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। সত্যকে এড়ানোর উপায় নেই। ইতিহাসের প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার ছিলেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার। শেক্সপিয়র যেটিকে নৃশংসতম হত্যাকান্ড বলেছেন। আমি বলব, শেক্সপিয়র বেঁচে থাকলে ’৭৫-এর হত্যাকান্ডকে সবচেয়ে নৃশংসতম বলতেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা- ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর দেশের রাজনীতিতে অভেদ্য দেয়াল গড়ে উঠেছে। এই দুটি ঘটনায় রাজনীতিতে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। এখন একদল আরেক দলের সামাজিক অনুষ্ঠানে পর্যন্ত যেতে বাধা পায়। জন্ম-মৃত্যুতেও যেতে পারে না। এমনকি কথা বলাবলিও বন্ধ থাকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষা করে খুনীদের বিচার বন্ধ করতে গিয়ে যে অলঙ্ঘনীয় দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল তা আরও উঁচু হয়েছে ২১ আগস্টের হামলার পর। এরপরও কর্ম-সম্পর্ক সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উদারতা কি কম দেখিয়েছেন? নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের পরিচালক, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। শত্রুপক্ষ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে- নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ॥ শত্রুপক্ষ দেশে ও বিদেশের মাটিতে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শত্রু পক্ষরা দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে। রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ও সচেতনতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যতই বাধা আসুক না কেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করব। রাজধানীর মিরপুর গোলচত্বরে রবিবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মিলাদ ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নতিই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ। জাতির পিতার আদর্শে বাংলাদেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাকে বার বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে; কিন্তু মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপা ও জনগণের ভালবাসায় তিনি রক্ষা পেয়েছেন। আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা সারা দুনিয়ায় বিশ্বনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাঙালী জাতির জন্য তিনি বয়ে এনেছেন অশেষ সম্মান। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম রহমতউল্লাহ এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর নেতা এম সাইফুল্লাহ সাইফুল, কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ জনি, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মনির হোসেন বিপুল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পি, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মনির, শফিকুল ইসলাম আখের, আমিনুল ইসলাম মুন্না প্রমুখ।
×