ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে চলছে অবাধে পাখি শিকার

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২২ আগস্ট ২০১৯

 শেরপুরে চলছে অবাধে পাখি শিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ২১ আগস্ট ॥ শেরপুরে বিল, ছোট নদী ও জলাশয় এলাকাগুলোতে চলছে অবাধে বকসহ অন্যান্য পাখি শিকার। ফলে বন্যা শেষে জেগে ওঠা ফসলি জমিসহ জলাশয়গুলোতে খাদ্যের সন্ধানে লোভী মানুষের খাদ্যে পরিণত হচ্ছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা ও আইনী প্রয়োগের অভাবে একদিকে যেমন প্রকৃতি তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে দূর-দূরান্ত থেকে জলাশয়গুলোতে দল বেঁধে পাখি আসাও হ্রাস পাচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার সকালে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের হস্তক্ষেপে জীবন ফিরে পেয়েছে এক ডজন বক। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার ফেরুষা এলাকায় ও গড়েরগাঁও মোড় বাজারে অভিযানে নেমে তিনি শিকার করা ওই বকগুলো উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত করেন। একই সময়ে শিকারিদের বাড়ি থেকে জব্দ করা শিকারের সরঞ্জামাদি ধ্বংস করা হয়। পরে শিকারিদের পালিত বকগুলোও অবমুক্ত করে দিয়ে ভবিষ্যতে আর বক শিকার করবে না মর্মে অঙ্গীকারের শর্তে বক শিকারিদের মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। জানা যায়, সাম্প্রতিক বন্যা শেষে নকলাসহ জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয়, ছোট নদী এবং জেগে ওঠা ফসলি জমিতে বেড়ে যায় বকসহ নানা প্রজাতির পাখির আনাগোনা। তারা ওইসব জলাশয় ও জমিতে আটকে পড়া মাছ ও ছোট জলজ প্রাণীর শিকারে দল বেঁধে নামতে থাকে। এতে বেড়ে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্য। কিন্তু বক-পাখিদের ওই বিচরণে এক শ্রেণীর অসাধু লোক বিশেষ কৌশলে বক শিকারে মরিয়া হয়ে ওঠে। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, নকলার ফেরুষা, গড়েরগাঁও, উরফা, জালালপুর, চন্দ্রকোণা, বানেশ্বরদী, টালকী, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, গৌড়দ্বার, গনপদ্দী, বাড়ইকান্দি ও ডাকাতিয়াকান্দার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদীর তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমিতে সকালে কলাগাছ ও চাও গাছের পাতা দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা ঘরের ভেতরে বসে নিজের পালিত বক উড়িয়ে মুক্ত বকগুলোকে শিকার করছে একদল শিকারি। এছাড়া বিষটোপ, চিকন প্লাস্টিকের সুতার মাধ্যমে তৈরি ফাঁদ এবং ছোট মাছ বা ব্যাঙ বড়শিতে গেঁথেও অবাধে চলছে বক শিকার। ফেরুষা এলাকার জাহাঙ্গীর, আলমগীর ও ঝাডু এবং বাড়ইকান্দির আশরাফ, ছামিদুল, টুক্কা, তালেব, লালমিয়া, ফকিরসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু বক শিকারি নিয়মিত বক শিকার করছেন। তার প্রতি জনে দৈনিক ৫ থেকে ১০টি বক শিকার করে থাকেন। শিকারিরা জানান, এখন প্রতিটি বক ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই ধরনের চিত্র শেরপুর সদর, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন জলাশয় এলাকায়। ফলে প্রতিদিন জেলায় গড়ে প্রায় ৫শ’ বক শিকার হচ্ছে চলতি বন্যা পরবর্তী সময়ে। অন্যদিকে অবাধে বন্যপ্রাণী শিকার ও নিধনে উদ্বেগ প্রকাশ করে শেরপুর বার্ড ক্লাবের সভাপতি সুজয় মালাকার ও সাধারণ সম্পাদক ফকির শহীদুজ্জামান বলেন, এমনিতেই আমাদের খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়গুলো ক্রমেই কমে যাচ্ছে। যেগুলো রয়েছে সেগুলোও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাচ্ছে। তাই বকসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বন্যপ্রাণী আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। এ বিষয়ে জেলা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয় উভয়ই অপরাধ। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে কিছু কিছু এলাকায় বক শিকার হওয়ায় তা বন্ধে প্রশাসনসহ আমাদের অভিযান চলছে।
×