ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে উদ্বেগ

অপরাধ তৎপরতায় অশান্ত হচ্ছে রাজশাহী

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২২ আগস্ট ২০১৯

অপরাধ তৎপরতায় অশান্ত হচ্ছে রাজশাহী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ যৌন হয়রানি, ছিনতাই, খুন আর নানা অপরাধমূলক তৎপরতা হঠাৎই অশান্ত হয়ে উঠেছে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে নগর রাজশাহী। একের পর এক ঘটছে নানা ঘটনা। নারীদের যৌনহয়রানি ও উত্ত্যক্ত করার সঙ্গে বাড়ছে ছিনতাই এবং খুনও। স্কুল-কলেজ ছেড়ে পদ্মাপার, পার্ক ও মোড়ে মোড়ে অনৈতিক আড্ডা ও অশ্লীলতায় নিত্যব্যাপার হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবক মহলে। সামাজিক রীতি-নীতিতে হারাচ্ছে শ্রদ্ধাবোধ। নানা কারণে রাজশাহীতে বাড়ছে কিশোর অপরাধ। এলাকায় প্রভাব বিস্তার, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে বড় অপরাধে। ‘কিশোর গ্যাং’র অপরাধমূলক কর্মকা-গুলো ডালপালা মেলছে বলে মনে করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি রুয়েট শিক্ষককে মারধর, অটোরিক্সায় ওঠার পর রুয়েট ছাত্রীকে যৌনহয়রানি ও কলেজছাত্র খুনের ঘটনা উদ্বেগ ছড়িয়েছে নগরজুড়ে। অনেক সময় চোখের সামনে ঘটনা ঘটলেও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ আক্রান্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। দুর্বৃত্তদের সামনে রুখে না দাঁড়িয়ে, প্রতিরোধ না করে নীরব দর্শকের মত নানান ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে দেখছেন। তবে এই ভীতির রাজ্যটা ভেঙ্গে মানুষকে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন খোদ রাজশাহীর জেলা প্রশাসক। এদিকে অনেক সময় নানা ঘটনার তোলা ছবি ও ভিডিও ভাইরালও হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে যা অপরাধ এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে এর মাঝখান থেকে ঝরে যাচ্ছে অনেক তরুণ-তরুণীর প্রাণ। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা সরাসরি পুলিশের কাছে না গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। পুলিশের ওপর আস্থা না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে মনে করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। রুয়েট শিক্ষকের স্ত্রীকে যৌনহয়রানি প্রতিবাদ করায় শিক্ষককে মারধর, রুয়েট ছাত্রীকে অটোরিক্সায় তুলে লাঞ্ছিত করা, ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পথে সিটি কলেজছাত্র খুনের সমসাময়িক এমন ঘটনাগুলো এখন ‘টক অব দ্য সিটি’। পাড়া-মহল্লার সাধারণ চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় এখন সবাই সরব ‘আইনশৃঙ্খলা’ পরিস্থিতি অবনতির আলোচনা আর সমালোচনায়। উদ্বেগজনক হলেও সত্য যে, রাজশাহীজুড়ে গত এক মাসে এমন ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। যৌনহয়রানি ছিনতাইসহ নানান অপরাধ কর্মকা-ের অধিকাংশতেই জড়িত হয়ে পড়েছে কিশোর অপরাধীরা। অসাধু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তার যেন রাজশাহীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মহানগর পুলিশের কাছে কিশোর অপরাধীদের তালিকা দিয়ে খোদ এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘অতি সম্প্রতি সময়ের ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন। আমি চাই না রাজশাহী ‘বরগুনা’ হোক; প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা হোক। শান্তির এ নগরটি সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হোক। আমার এই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার কথা এরই মধ্যে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছি’। এদিকে, নগর পুলিশের দাবি ভুক্তভোগীরা তাদের কাছে গেলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এর পরও অনেকে তাদের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। অবশ্য সেইটি দেখেও অনেক সময় আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা। রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি সময়ের এসব ঘটনা তারা তদন্ত করে দেখছেন। কোন ঘটনা ঘটলে সিসিটিভির ফুটেজ ও স্থানীয়দের সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করছে এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসছেন। তবে সামাজিক অস্থিরতা ও আস্থাহীনতার কারণেই মানুষ লাঞ্ছিত হয়েও পুলিশের কাছে যাচ্ছে না বলে সমস্যা চিহ্নিত করেছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। এর বিপরীতে ভুক্তভোগীরা যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পাতায় যাচ্ছেন। সেখানে জনমত তৈরি করে প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নিচ্ছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু বলেন, কমবেশি অনেকের কাছেই পুলিশের কাছে গিয়ে সেবা না পাওয়ার একটা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আশ্রয় নিচ্ছেন। এটা এখন মানুষের সেন্টিমেন্ট হিসেবে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রাবি শিক্ষক শেখ শামীমা সুলতানা বলেন, বিচার হবে কী হবে না এমন প্রশ্নে এখনও অনিশ্চিতায় ভোগেন ভুক্তভোগী মানুষ। এটি একটি কারণ হতে পারে যে মানুষ ওখানে না গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন। তবে তার কাছে মনে হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটা এখন আসলে একটা বড় হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে তথ্যের জন্য। তাই সামাজিক অপরাধ রোধে পুলিশকে আরও নিবিড়ভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করার পরামর্শ এই বিশ্লেষকের।
×