ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারি বর্ষণে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ভেসে গেছে ২৫০ ঘের

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ১৮ আগস্ট ২০১৯

ভারি বর্ষণে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ভেসে গেছে ২৫০ ঘের

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে আড়াই শ’ মৎস্য ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। শতাধিক গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। খালের অবৈধ বাঁধ ও পাটা দিয়ে মৎস্য চাষ করার কারণে জলাবদ্ধতা আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে। বলেশ্বর, পানগুছি, মধুমতি, ভৈরবসহ সব নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শরণখোলা, যাত্রাপুর, মোরেলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভায়ও তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে ৩ পৌরসভা ও ৯ উপজেলার নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বাগেরহাট পৌরসভার খারদ্বার, বাসাবাটি, হাড়িখালী, নাগেরবাজার, পুরাতন বাজার, মুনিগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া পৌরসভার সামনের সড়ক, শালতলা মোড়, মিঠাপুকুর পারের সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছ। শুধু বাগেরহাট পৌরসভা নয় মোরেলগঞ্জ ও মোংলা পৌরসভায়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বাগেরহাট সদর, মোংলা, রামপাল, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার বেশকিছু রাস্তাঘাট, মৎস্য ঘের ও সবজির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুপুরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা আরও চিন্তিত হয়ে পড়ছে। মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে জেলায় কমপক্ষে আড়াই শ’ মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মুশফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু পানির কারণে আমাদের এলাকার জনসাধারণের চলাচলে খুব সমস্যা হচ্ছে। বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। এক প্রকার পানি বন্দী হয়ে পড়েছি। কাড়াপাড়া এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, মুনসুর আলী বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার ঘেরসহ আশপাশের কয়েকটি ঘের ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। খালের অবৈধ বাঁধ ও পাটা দিয়ে মৎস্য চাষ করার কারণে পানি সহজে নামছে না। ফলে জলাবদ্ধতা আরও মারাত্মক হয়ে উঠেছে। কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের দুলাল ম-ল বলেন, টানা বর্ষণে বরাজের পানের গোড়ায় পানি জমেছে। বিকেলের মধ্যে পানি না নামলে বেশিরভাগ পানই মরে যাবে। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। সবজি চাষী রুহুল মল্লিক বলেন, টানা বর্ষণে বেগুন, পুঁইশাকসহ বেশকিছু সবজির গোড়া পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে এখনই বৃষ্টি থেকে গেলে ক্ষতি কিছুটা পোষানো যাবে। বাগেরহাট পৌরসভার কাউন্সিলর আবুল হাশেম শিপন বলেন, ঘুম থেকে উঠেই ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের জন্য নিজেই কাজ শুরু করি। পৌরসভার পক্ষ থেকেও অনেক কর্মী এ কাজে নিয়োজিত ছিল। আশা করি বৃষ্টি কমলে দ্রুত পানির ভোগান্তি থেকে মুক্ত পাবে মানুষ। বাগেরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র তালুকদার আব্দুল বাকী বলেন, পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরাসনে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য জরিপ শুরু করা হয়েছে। আশা করছি এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগামীতে পৌরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। বাগেরহাট সদর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, দুই থেকে আড়াই শ’ মৎস্য ঘের ভারি বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্য ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আরও ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
×