ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদেও পদ্মা সেতুর কাজ চলবে

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১০ আগস্ট ২০১৯

  ঈদেও পদ্মা সেতুর কাজ চলবে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ আসন্ন ঈদেও পদ্মা সেতুর কাজ চলমান থাকবে। বর্তমানে সেতুতে দেশী-বিদেশী প্রায় দু’হাজার লোক কাজ করছে। এদের মধ্যে স্থানীয় কিছু শ্রমিক ছুটিতে গেলেও অন্যরা সেতুর কাজ চালিয়ে যাবে। বর্ষা চলে যাচ্ছ। বর্ষা চলে গেলে পুরোদমে সেতুর কাজ আবার শুরু হবে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর ২৯৪ পাইল বসে গেছে। পদ্মা সেতুর ৪২ পিলারের মধ্যে ৩১ পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাকি ১১ খুঁটির ঢালাইয়ের কাজ চলছে। খুটিগুলো আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠছে। চলতি ২০১৯ সালের মধ্যে সবগুলো খুঁটির কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান। পদ্মা সেতুতে বিদ্যুত বিভাগের ৭ খুঁটি বসতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে এই বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের চুক্তি হয়। শুক্রবার জাজিরা প্রান্তে বিদ্যুতের ৭নং খুঁটিতে পাইলিং শুরু হয়। এখানে বিদ্যুতের জন্য পদ্মায় ৭ খুঁটি বসবে। ৭নং খুঁটিতে ৬ পাইল বসবে। ৭ খুঁটিতে মোট পাইল বসবে ৩৬ । পদ্মা সেতুর ২৪০০ এবং ৩৫০০ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামার দুটি এ পাইলিংয়ের কাজ করবে। শুক্রবার প্রথম ২৪০০ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি ৭নং খুঁটিতে পাইলিং শুরু করে। বর্ষা চলে গেলে ধুমসে স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হবে। সেভাবে এখন প্রস্তুতি চলছে। সেপ্টেম্বরে একাধিক স্প্যান বসানোর কথা রয়েছে। সেতুটির ৪১ স্প্যানের মধ্যে ইতোমধ্যে চীন থেকে ২৫ স্প্যান মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষায়িত কারখানায় এসে পৌঁছেছে। যার মধ্যে ১৪ স্প্যান বসে গেছে। ২ স্প্যান নদীতে স্টোর করে রাখা হয়েছে। বাকি ৯ স্প্যানের ফিটিং সম্পন্ন হয়েছে বা হচ্ছে। এছাড়া আরও একটি স্প্যান মংলায় সপ্তাহখানেক আগে এসে পৌঁছেছে। এটি নদী পথে মাওয়ায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া আরও ৩ স্প্যান চীন থেকে বাংলাদেশের পথে সমুদ্রে রয়েছে বলে দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন। বাকি ১২ স্প্যান চীনে তৈরি করে রাখা হয়েছে। শীঘ্রই বাকি স্প্যানগুলোও মাওয়ায় এসে পৌঁছাবে। দায়িত্বশীল প্রকৌশলী আরও জানিয়েছেন তীব্র স্রোত থাকা সত্ত্বেও ১১ খুঁটিতে ঢালাইয়ের কাজ চলছে। বাকি ৩১ খুঁটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সেতুর দু’প্রান্তের এ্যাপ্রোচ সড়কের (ভায়াডাক্ট) কাজও এগিয়ে চলছে। চলছে রোডওয়ে ও রেলওয়ে স্লাব তৈরির কাজ। পুরো সেতুতে দু’হাজার ৯৩১ রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯। জাজিরা প্রান্তে সেতুর ভায়াডাক্টে (সেতুর গোড়া) রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। বাংলাদেশে প্রথম কোন সেতুতে এসব গার্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তে ২৩৪ ‘টি-গার্ডার’ বসানো হবে। মাওয়া প্রান্তে ২০৪ ‘টি-গার্ডার’ বসানো হবে। পদ্মা সেতুর দু’প্রান্তেই চলছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতু (ভয়াডাক্ট)। সেই সঙ্গে চলছে নদী শাসনের কাজও। এই সেতুর কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। ৪২ পিয়ারের ওপর ৪১ স্প্যানে গড়ে উঠবে পুরো পদ্মা সেতু। ৪২ পিয়ারের মধ্যে ১৪ স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর দু’হাজার ১০০ মিটার এখন দৃশ্যমান। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। তাই আশা করা হচ্ছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
×