ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালিত

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১০ আগস্ট ২০১৯

 নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানানোর মধ্য দিয়ে শুক্রবার পালিত হয়েছে বিশ্ব আদিবাসী দিবস। রাজধানীসহ দেশের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। কর্মসূচীগুলোর মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষাসহ শোষণ-নির্যাতন ও ভূমি লুণ্ঠনরোধ এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের জোর দাবি জানানো হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ও ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মিলনায়তনে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) কেন্দ্রীয় সংসদ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাগাছাসের কর্মসূচীর শুভ উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। আর ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মিলনায়তনে বাগাছাস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লিংকন দিব্রা’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিক উল্লাহ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, সিডিআই পরিচালক থিউফিল নকরেক, বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক নিখিল মানখিন ও প্রসাদ চাম্বুগং, আদিবাসী কালচারাল একাডেমির পরিচালক সাইলেন রিছিল প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাগাছাস কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনুপ হাদিমা। একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় জগন্নাথ হল মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা নানা দাবি সম্বলিত ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের অস্তিত্ব রক্ষার আহ্বান জানিয়ে কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়নে আদিবাসীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও যোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আদিবাসীদের রয়েছে অগাধ আনুগত্য ও ভালবাসা। আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হয়ে মনোকষ্ট নিয়ে স্থবির না হয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে আদিবাসীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ড. রফিক উল্লাহ খান বলেন, দাবি আদায়ে মাঝ পথে থেমে গেলে হবে না। নতুন উদ্যোমে দাবি নিয়ে দাঁড়াতে হবে। দাবি আদায়ের আন্দোলন হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দেন ড. রফিক উল্লাহ খান। আদিবাসীদের ওপর শোষণ নির্যাতনের খ-চিত্র তুলে ধরে সিডিআই পরিচালক থিউফিল নকরেক বলেন, অধিকার আদায় ও সমস্যা সমাধানে কোন সরকারই আন্তরিক নন। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে সব সময়ই আদিবাসীদের প্রতি বৈরী মনোভাব কাজ করে। বাংলাদেশে আদিবাসীদের মানবিক পরিস্থিতি ভাল নয়। তাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। টাঙ্গাইলের মধুপুরের গারোদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ৪ হাজারের বেশি মিথ্যা মামলা দিয়েছে বন বিভাগ। এমন মামলার শিকার হয়ে শত শত গারো পরিবারের পুরুষ সদস্য ঘর ছাড়া হয়ে আছে বলে অভিযোগ করেন থিউফিল নকরেক। আলোচনা সভায় অন্য বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও সরকার কখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবস উদ্যাপন করেনি। সরকার আদিবাসী জনগণের আত্ম পরিচয়ের অধিকার অস্বীকার করেছে, যা দেশে-বিদেশে রাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে। দেশের আদিবাসী জনগণের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, তাদের ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ, ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। শুধু কৃষি কাজে নয়, মুক্তিযুদ্ধ ও কৃষক আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের উন্নয়নের সব কাজে আদিবাসীদের অবদান রয়েছে।
×