স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ট্যানারি মালিকদের কাছে পুঁজি হারিয়ে চরম অর্থ সঙ্কটে পড়েছে এবার রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এমন বেহাল অবস্থা কখনও হয়নি। নিজের প্রায় আটকোটি টাকা বিভিন্ন ট্যানারিতে পাওনা থাকলেও এবারের ঈদে কোরবানির চামড়া কেনার টাকা নেই বলে আক্ষেপ করছেন রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘ট্যানারি ব্যবসায়ীরা কোন টাকা ফেরত দিচ্ছে না। রাজশাহী অঞ্চলে ১২৭ জন ব্যবসায়ী থাকলেও বর্তমানে ব্যবসা করছেন মাত্র ৮-১০ জন। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্যানারি ও বড় বড় চামড়ার আড়তে বাকিতে মালামাল দিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই টাকা কবে নাগাদ ফেরত আসবে তারও নিশ্চয়তা নেই। পুঁজি হারিয়ে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার মতো এখন অনেকেই কোন রকমে আশায় বসে আছি’।
গত কয়েক বছর থেকেই কমেছে চামড়ার দাম। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে সন্তুষ্ট নন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। এছাড়া গত চার বছরে ট্যানারি মালিকদের কাছে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন। পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত চামড়ার দাম কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এরপরেও ট্যানারি মালিকদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া না কেনার অভিযোগও রয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ করেছেন রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ। তিনি বলেন, চামড়ার দাম বর্তমানে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, ২০১৪ সালের দিকে যে চামড়া ২৫শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে, ওই মানের চামড়া বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। ট্যানারি ব্যবসায়ীর কাছে এই হাসান আলীর পাওনা রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এবার রাজশাহীর ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে টাকার যোগান না থাকায় সরকার নির্ধারিত দরেও চামড়া কিনতে পারবেন না তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরের বকেয়া বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাবেন। এছাড়া চামড়ার দাম নির্ধারণের পরও সেই দামে কেনেন না ট্যানারি মালিকরা। ফলে চামড়া নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়তে হয় তাদের। এ কারণে অনেকে চামড়ার ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহীতে প্রতি কোরবানি ঈদে প্রায় ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার গরু-মহিষ এবং ১০ হাজার ভেড়া এবং এক লাখ ছাগল কোরবানি হয়ে থাকে। রাজশাহী জেলায় প্রায় ৩৫-৪০টি চামড়ার আড়ত রয়েছে। এ আড়তগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চামড়া কেনেন ট্যানারি মালিকরা।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ বলেন, রোজার ঈদের পর থেকে চামড়ার দাম আরও কমে গেছে। সরকার নির্ধারিত দাম নগদে পাওয়া গেলেও ভাল। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: