ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বকেয়া বেতন দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, ধাওয়াধাওয়ি

প্রকাশিত: ১১:১১, ৯ আগস্ট ২০১৯

বকেয়া বেতন দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, ধাওয়াধাওয়ি

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ জেলার ফতুল্লার ভুইঘর এলাকায় বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে একটি রফতানিমুখী গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কুতুবপুর ইউনিয়নের ভুইঘরের রঘুনাথপুর জাজ এ্যাপারেলস গার্মেন্টের শ্রমিকদের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ২০ শ্রমিক আহত হয়। এসময় শ্রমিকরা কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করেছে। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে ৪৩ রাউন্ড শটগান, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পাঞ্চল পুলিশ-৪ এর পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম। শ্রমিকদের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্করোড অবরোধের কারণে এর প্রভাব ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও পড়ে। ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক ছাড়াও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় বলে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানায়। পুলিশ ও গার্মেন্টস শ্রমিকরা জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভুইঘর রঘুনাথপুর এলাকায় অবস্থিত জাজ এ্যাপারেলস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা এক মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস এবং উৎসব ভাতার দাবিতে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় শিল্পপুলিশ ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের অনুরোধ না রেখে বেতন বোনাস ছাড়া রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে নিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। রাস্তা অবরোধের কারণে লিংক রোডের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা পরও শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ তুলে না নিলে শিল্পপুলিশ ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে শ্রমিকদের ধাওয়া দেয়। এতে করে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ালশেল, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে শ্রমিকদের দাবি জাজ এ্যাপারেলসের প্রায় ৮শ’ শ্রমিক কাজ করছে। তাদের বেশির ভাগ শ্রমিক দুই থেকে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পাবে। কিন্তু মালিক পক্ষ বেতন বোনাস পরিশোধ না করে নানা টালবাহানা শুরু করে। তাই শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে। জাজ এ্যাপারেলসের শ্রমিক সাহাবুদ্দিন ও নাজমাসহ কয়েকজন জানান, গার্মেন্টসের শ্রমিকদের দুই তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। মালিক পক্ষ আজ কাল করে এই বেতন বকেয়া করে। বৃহস্পতিবার দুপুরের খাবারের পর শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস প্রদান করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু দুপুরের খাবারের পর শ্রমিকদের জানানো হয় শনিবার বকেয়া বেতন বোনাস প্রদান করা হবে। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে। কিন্তু পুলিশ আমাদের লাঠিচার্জ করে শটগানের গুলি ছোড়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-৪ পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা পুলিশ ও শিল্পপুলিশ মিলে ৪৩ রাউন্ড টিয়ার সেল, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছোড়ে। শ্রমিকরা প্রায় ৪০ মিনিটের মতো সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মিরপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ ॥ বেতন ভাতা-ঈদ বোনাসের দাবিতে রাজধানীর মিরপুর এক নম্বর সেকশনের সনি সিনেমা হলের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পোশাক শ্রমিকরা। এদিকে ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ও বৃষ্টির কারণে এমনিতেই রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধের ফলে মিরপুর সড়ক ও আশপাশের ভয়াবহ যানজটের ফলে ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় মিরপুরের এক নম্বর এলাকার মল্লিক টাওয়ারের জারা জিন্স নামে একটি গার্মেন্টসে শ্রমিকরা রাস্তা নেমে সনি সিনেমা হলে সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। এতে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালান। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গার্মেন্টস মালিক, বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। পুলিশ জানায়, মিরপুরের এক নম্বর এলাকার মল্লিক টাওয়ারের জারা জিন্স নামে একটি গার্মেন্টেসে তার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস না দিয়ে কালক্ষেপণ করছিল। এ কারণে বুধবার রাতে একবার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে অবরোধ করে। পরে পুলিশ মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তা সমাধানের জন্য অনুরোধ করে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেতন-ভাতা না দেয়ায় শ্রমিকরা ফের সড়কে নেমে আসেন। বিক্ষোভের মুখে মালিকপক্ষ আত্মগোপন করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বুধবার রাতেই জারা গার্মেন্টসের মালিক রিয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করতে বলা হয়েছে। তবে মালিকপক্ষ নানা অজুহাতে টালবাহানা করছে। বেতন- বোনাস না দেয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ওই গার্মেন্টসের শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে মালিকপক্ষ আত্মগোপন করে। পরে পুলিশ তাকে খুঁজে বের করে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে বলেছে। দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার হারুন উর রশীদ জানান, আমরা শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। ডিএমপি মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, মালিক-শ্রমিক ও বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার হবে বলে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে দেয়া হয়। এরপর দুপুর ২টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে শ্রমিকরা তখনও ওই গার্মেন্টসের সামনে বেতন ও বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
×