ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সমীক্ষা দল গঠনের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৯ আগস্ট ২০১৯

গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সমীক্ষা দল গঠনের সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সমীক্ষা দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দিনব্যাপী বৈঠকের পর সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের ফল ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পানি সম্পদ সচিব আনোয়ার বিন কবির এবং ভারতের জলসম্পদ সচিব উপেন্দ্র প্রাসাদ সিং উপস্থিত ছিলেন। দিন ভর বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ পানি সম্পদ ইস্যুতে আলোচনা হয় দুদেশের মধ্যে। একই সঙ্গে গত নয় বছর থেকে না হওয়া দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রীদের বৈঠকের বিষযেও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্র বলছে অভিন্ন সমস্যা সমাধানে শীঘ্রই আলোচনায় বসবে ভারত বাংলাদেশ পানিসম্পদমন্ত্রীরা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে সমীক্ষা করবে। এই সমীক্ষা প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এবং দ্রুতই সমীক্ষা শেষ করা হবে। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রাসাদ সিং বলেন, গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ করে বাংলাদেশের জন্য ব্যবহার করলে ভারতের কোন আপত্তি নেই। তবে এই ব্যারাজের প্রভাব কী হবে এবং কোন স্থানে ব্যারাজ নির্মাণ করলে ভালো হবে সে বিষয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা চালানোর ওপর জোর দেন দুদেশের পানিসম্পদ সচিবরা। উপেন্দ্র সিং বলেন, ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মাণের ফলে বিহারে প্রতিবছর পলি জমে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্যই আমরা সমীক্ষার বিষয় গুরুত্বারোপ করছি। ভারতীয় অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ভারতের অভিন্ন নদীগুলো অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা করা হবে। তিনি বলেন, ফেনী নদী প্রসঙ্গে ভারতীয় সচিব বলেন, নদীটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নদীর পানি ত্রিপুরায় খাওয়ার জলের জন্য এবং ছোট পরিসরে সেচ কাজের জন্যও প্রয়োজন। দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটি এই নদীর তথ্য উপাত্ত নিয়ে শীঘ্রই আলোচনা করবে। রাজবাড়ীর পাংশায় গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প নির্মাণের প্রাথমিক নক্সা চূড়ান্ত করেছিল বাংলাদেশ। তবে ’১৭ সালে পাংশায় গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের প্রকল্প থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। সে সময় জানানো হয় গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। তবে প্রকল্পটি কোথায় হবে তার নক্সা কী হবে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট হতে হবে। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ করার চেষ্টা করছে। কৃত্রিম জলাধার তৈরি করে ওই পানি শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করাই এর প্রধান লক্ষ্য। তবে পশ্চিম বাংলা সরকার গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। তারা বলছে এতে বন্যায় পশ্চিমবঙ্গের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হবে। বৈঠক সূত্র বলছে সত্যিকার অর্থেই ব্যারাজটি কোথায় হলে দুই দেশের কারও কোন ক্ষতি না হয় বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার। এজন্য কাজ করবে সমীক্ষা দল। তবে কত দিনের মধ্যে সমীক্ষা শেষ হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কোন আলোচনা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফেনীসহ সাত অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে সমাধান চায় উভয় দেশ এজন্য যৌথ নদী কমিশনকে কাজ করতে বলা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। এর আগেই এ বিষয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি রয়েছে। বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি এবারের এজেন্ডায় ছিল না। বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়াতে এখন দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর তিস্তা চুক্তি হওয়া না হওয়া নির্ভর করছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের বিষয়ে নমনীয় রয়েছে, তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরোধিতা মুখে পড়ে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। পানি সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের ছয়টি ও ভারতের চারটি এজেন্ডা ছিল। আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা সাতটি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই কাজ এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের কমিটি হয়েছে। এই কমিটি কাজ করবে। তিনি বলেন, ভারতে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হিমালয়ান কম্পোনেন্টে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প করা হলে তা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হবে। দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের এই বৈঠক হয়। প্রসঙ্গত ’১১ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকায় এবং ’১১ সালের ৬ জুন নয়াদিল্লীতে সর্বশেষ বাংলাদেশ-ভারত পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। এর আগে ২০১০ সালের মার্চে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়।
×