ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে চীনা মুদ্রার দরপতন

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৮ আগস্ট ২০১৯

বিশ্ব অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে চীনা মুদ্রার দরপতন

চীনের মুদ্রা ইউয়ানের মানগত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন পয়েন্টে নেমে এসেছে। এর প্রধান কারণ চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপ। এ পদক্ষেপটি বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র করে তুলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউয়ানের দরপতন বাজারের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো চীনা মুদ্রার মান মার্কিন ডলারের চেয়ে সাত ইউয়ান কমে গেছে। এর মধ্যেই সোমবার নতুন করে আবারও চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপে মার্কিন সিদ্ধান্ত আসে। যা দুই দেশের বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও বেগবান করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ৩০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে চীনের সব আমদানি পণ্যে শুল্কারোপই এর প্রধান লক্ষ্য। চীন কীভাবে তার মুদ্রাকে অবমূল্যায়ন করে? ইউয়ান দিয়ে অবাধে বাণিজ্য করার কোন সুযোগ নেই। চীন সরকার মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের লেনদেনও সীমাবদ্ধ রাখে। বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো পিবিওসি (পিপলস ব্যাংক অব চায়না) স্বাধীন নয়। এ কারণে ইউয়ানের দামে বড ধরনের তারতম্য হলে ব্যাংকটিকে জবাবদিহিতা করতে হয়। ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের চীন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভান্স-প্রিটার্ড বলছেন, সর্বশেষ মার্কিন শুল্কারোপের সঙ্গে সমন্বয় করতে ইউয়ানের অবমূল্যায়নের বিষয়টিকে মুদ্রা বিনিময়ে এক প্রকার কার্যকরী অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও মুদ্রাটি দুর্বল হয়ে যায়নি। দুর্বল ইউয়ানের প্রভাব কতটুকু ॥ দুর্বল ইউয়ান চীনা রফতানিকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। এ কারণে ওই পণ্যগুলো বিদেশী মুদ্রায় কিনতে গেলে দাম কম পড়ে। মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে এটি, আমেরিকাতে আসা চীনা আমদানির ওপর উচ্চ শুল্কের প্রভাবকে ভারসাম্য করার প্রয়াস হিসাবে দেখা হয়। দুর্বল ইউয়ান চীনে পণ্য আমদানি আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে। এ কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে এবং চীনা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মুদ্রাধারীদের অন্যান্য সম্পদে বিনিয়োগের জন্য চাপ দেবে। ২০১৫ সালে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখতে তিন বছরে মার্কিন ডলারের তুলনায় তার মুদ্রাকে সর্বনিম্ন হারে ঠেলে দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল যে, এ পদক্ষেপটি বাজার সংস্কারকে সমর্থন করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তবে সর্বশেষ প্রতি ডলারে সাত ইউয়ান স্তরে লেনদেন হয়েছিল বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার সময়। যুক্তরাষ্ট্রকে কেন এটি খেপিয়ে তুলেছে ॥ বেজিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চীনা পণ্যগুলোকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে রফতানির জন্য চীনকে তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ করেছে, যদিও তা অস্বীকার করে আসছে বেজিং। ইউয়ানের সর্বশেষ দরপতনকে বাণিজ্য যুদ্ধের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরও চীন বলছে যে, তারা ‘প্রতিযোগিতামূলক অবমূল্যায়নে’ জড়িত হবে না। মুদ্রা কারসাজি এত বিতর্কিত কেন ॥ মুদ্রার কারসাজিতে বৈশ্বিক ব্যবসায়ের নিয়মগুলোকে লঙ্ঘন করতে দেখা যায়। তার মধ্যে একটি হলো- কৃত্রিমভাবে মুদ্রার বিনিময় হারকে স্ফীত করে বা সংকোচন করা। মুদ্রাস্ফীতি এড়াতে বা মূলধন প্রবাহকে হ্রাস করতে রফতানিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য এটি নক্সা করা যেতে পারে। এমরি ল রিভিউতে লরেন্স হাওয়ার্ডের একটি গবেষণাপত্র জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে মুদ্রা কারসাজির মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। বিশ্বজুড়ে মুদ্রার হেরফেরটি সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হারিয়ে যাওয়া লাখ লাখ চাকরির জন্য এবং এমনকি ইউরোপে ক্ষুদ্র, তবে তাৎপর্যপূর্ণ, চাকরির সংখ্যা হ্রাস হওয়ার জন্য দায়ী। ইউয়ানের পরবর্তী চিত্র কী ॥ বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন যে, ইউয়ানের মান আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। ওয়ান্ডা বাজার কৌশলবিদ এডওয়ার্ড মোয়া বলেছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে আরও ৫ শতাংশ ইউয়ানের দরপতন হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, বছর শেষে ইউয়ান প্রতি মার্কিন ডলারের ৭.৩০-তে ঠেকতে পারে। যেটা কিনা ৬.৯০ হতে পারে বলে আগে ধারণা করা হয়েছিল। সূত্র : বিবিসি
×