ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীন থেকে আসা সেই মদ শুল্ক দিয়ে খালাস

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ৭ আগস্ট ২০১৯

চীন থেকে আসা সেই মদ শুল্ক দিয়ে খালাস

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ঘোষণার চালানে চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজভর্তি পণ্যের কায়িক পরীক্ষায় ২৭টি কার্টনে মিলেছে মদ, বিয়ার ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। তবে এ পণ্যগুলো ভুলক্রমে জাহাজীকরণ হয়েছে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড ও চীনা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চায়না এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ঘোষণাবহির্ভূত পণ্যগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধের মধ্য দিয়ে ছাড়করণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদিকে, বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হওয়ায় নিয়মবহির্ভূতভাবে আমদানি করা পণ্যগুলো আটক রেখে বাকি পণ্য দ্রুত খালাস প্রদান করবে কাস্টমস। কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, পানামার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি কিউ জি শান জাহাজটিতে রয়েছে ৮টি চালানে মোট ৬৬৯ কার্টন পণ্য। ঘোষণা অনুযায়ী সমুদয় পণ্যই হওয়ার কথা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ। কিন্তু দুটি বার্জে কিছু পণ্য খালাস নেয়ার পর তৃতীয় জাহাজে লাইটারিংকালে ধরা পড়ে মদ, বিয়ার ও কয়েক ধরনের খাদ্যদ্রব্য। তখন এক জাহাজ মাদক আমদানি হয়েছে বলে চাউর হয়। এতে নড়েচড়ে বসে কাস্টমস। থামিয়ে দেয়া হয় খালাস কার্যক্রম এবং সাময়িক আটক ও জব্দ করা হয় পুরো চালান। এরপর কাস্টমস গঠিত একটি তদন্ত কমিটি জাহাজের সমুদয় পণ্য পরীক্ষা শুরু করে। সোমবার পর্যন্ত প্রতিটি কার্টনের শতভাগ পণ্যের কায়িক পরীক্ষা শেষ হয়নি। তবে যেটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, ৬৬৯ কার্টনের মধ্যে ২৭টি কার্টনে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য রয়েছে। এরমধ্যে ৬টিতে মদ ও বিয়ার এবং ২১টিতে রয়েছে মাশরুম, চিপসসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বলছে, এগুলো চীনা নাগরিকদের জন্য আনা হয়েছে। আমদানির চালান খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বিপাশা ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল স্বীকার করা হয়েছে। আমদানিকারক জানিয়েছে, ২৭টি কার্টনে চীনা মদ, বিয়ার ও খাদ্যদ্রব্য রয়েছে। এগুলো আনা হয়েছে পায়রায় কর্মরত তিন হাজার চীনা শ্রমিকের জন্য। এ কার্টনগুলো পরে আলাদাভাবে শিপমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভুলক্রমে একই জাহাজে জাহাজীকরণ হয়ে যায়। এখন তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে এগুলো খালাস নিতে রাজি। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড হওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। মেশিনারিজ ঘোষণায় এই প্রতিষ্ঠানের ইতোপূর্বে আমদানি করা চালানেও ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য ছিল কিনা তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাখ্যা চায় এবং এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। মাদকবহনকারী পানামার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি কিউ জি শান জাহাজটির চট্টগ্রাম ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করে। পানামার পতাকাবাহী জাহাজটি গত ২৩ জুলাই বিকেলে বন্দর ৩ নম্বর বার্থের ওভারসাইটে (কর্ণফুলী নদীর দিকে) নোঙ্গর করা হয়। সেখানে একটি বার্জে কার্টন নামানো হচ্ছিল। কিন্তু গোয়েন্দা সূত্রে সেখানে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য রয়েছে এমন তথ্য মেলায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ খালাস বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে পরদিন কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মাদার ভেসেলটি পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড পায়রা এলাকায় একটি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে। সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়নাধীন একটি প্রতিষ্ঠান কেন ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ঘোষণায় মদ ও বিয়ার আমদানি করল সে প্রশ্ন উঠেছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি এর আগেও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ঘোষণায় যে চালানগুলো আমদানি করেছে, সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, চীনা নাগরিকসহ বিদেশী নাগিরকদের জন্য মদ আমদানি নিষিদ্ধ নয়। প্রচলিত শুল্কহারের তুলনায় তাদের জন্য রেয়াত সুবিধাও রয়েছে। অনুমতি নিয়ে তারা আমদানি করতে পারতেন। তা না করে এভাবে কেন আনা হলো সে বিষয়ে তাদের জবাবের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চীনের সাংহাই থেকে আসা এ চালানগুলো খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নাম বিপাশা ইন্টারন্যাশনাল। এগুলো খালাস ও পরিবহনের দায়িত্বে এএমএমএস লজিস্টিক। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই একই মালিক। চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ এলাকার লোকমান টাওয়ারে অফিস। এর আগেও বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির আমদানি করা চালান খালাস ও পরিবহনের দায়িত্ব পালন করেছিল এ প্রতিষ্ঠান। পায়রা এলাকায় পরিবহনের সুবিধার্থে পণ্যগুলো ওভারসাইটে খালাস করা হচ্ছিল বলে যুক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের। কাস্টমস সূত্র জানায়, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির শুল্ক মাত্র ১ শতাংশ। অপরদিকে, মদ আমদানির শুল্ক ৩৯৬ শতাংশ। বিয়ারের শুল্ক মানভেদে ২৯৩ শতাংশ থেকে ৪৪৮ শতাংশ পর্যন্ত। চালানটি যদি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খালাস নিতে সক্ষম হতো তাহলে সরকারের বড় ধরনের রাজস্ব ক্ষতি হতো।
×