ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ গঠন

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৬ আগস্ট ২০১৯

অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ গঠন

নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী ৫ আগাস্ট ॥ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানির মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদদৌলাকে সোমবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে হাজির করা হয়েছে। মামলাটি বিচারিক আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার একমাত্র আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদদৌলার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন গ্রহণ করেছেন। আদালত মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পরবর্তী ধার্য তারিখ ২৭ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর মোঃ শাহ আলম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদদৌলাকে একমাত্র আসামি করে ৩ জুলাই বিকেলে আমলি আদালত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসেনের আদালতে চার্জশীট জমা দেয়। গত ২৬ মার্চ সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদদৌলা তার অফিস কক্ষে নুসরাত জাহান রাফিকে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় গত ২৭ মার্চ নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ-উদদৌলাকে গ্রেফতার করে। এরপর সিরাজ-উদদৌলার অনুসারীরা নুসরাতকে মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়। নুসরাত রাজি না হওয়ায় আলিম পরীক্ষার দিন গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে সিরাজ-উদদৌলার অনুসারীরা আগুন দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। অগ্নিদগ্ধ নুসরাত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গত ১০ এপ্রিল মারা যায়। নুসরাত মারা যাওয়ার পর পুলিশ সদর দফতর নুসরাতের হত্যা মামলা ও শ্লীলতাহানির মামলা পিবিআই -এর কাছে হস্তান্তর করে। নুসরাতের হত্যা মামলা ॥ নুসরাতের হত্যা মামলায় আদালতে আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্ত গ্রহণকারী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিনের জবানবন্দী ও জেরা শেষ হয়েছে। বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণকারী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন নারী ও শিশু নিযাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। মামলার তদন্তকালে ১২ আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। গতকাল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের সাক্ষী ও জেরা শেষ হয়েছে। সোমবার অপর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিনের সাক্ষ্য প্রদান শেষে ঢাকা হাইকোর্টের আইনজীবী ফারুখ আহম্মদ আসামিদের পক্ষে জেরা করছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু জানান- নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের জেরা করার জন্য আসামি পক্ষ ঢাকা হাইকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ফারুখ আহম্মদকে এনেছেন। এ্যাডভোকেট ফারুখ আহম্মদ বিডিআর বিদ্রোহের মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে বাদী ও সাক্ষীদের জেরা করেছিলেন। বিচার শুরুর ২৯ কার্যদিবসে ৭৫ সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদান ও জেরা শেষ হয়েছে। সারাদেশের মানুষ এ মামলার বিচার কাজের শেষে রায় দেখার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবীরা আশা করছেন আগামী এক/দেড় মাসের মধ্যে মামলার বিচার নিষ্পত্তি হতে পারে। বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ধার্য তারিখ রবিবার সকালে ফেনী করাগার থেকে ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হয়েছে। দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারিক মোঃ মামুনুর রশিদের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। এ মামলার চার্জশীটে পিবিআই ৯২ সাক্ষীর নাম উল্লেখ করেছেন। আজ পর্যন্ত বিচার শুরুর ২৯ কার্যদিবসে ৭৫ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হচ্ছে। গতকাল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কাজ শেষে আদালতের কাজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মুলতবি করেছিলেন বিচারক মামুনুর রশিদ। মঙ্গলবার আবার অপর সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হবে। গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত আলিমের আরবী পরীক্ষা প্রথম পত্র দিতে মাদ্রাসায় গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচদিন পর গত ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে সোনাগাজীতে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদদৌলাকে প্রধান আসামিসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। পিবিআই ও পুলিশ এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে হত্যায় সরাসরি জড়িত পাঁচজনসহ বারোজন আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। গত ২৯ মে দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর শাহআলম আদালতে ১৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট জমা দেন। এ মামলায় আটক থাকা চার্জশীটের বাইরের পাঁচজনকে বিচারিক আদালত মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন।
×