ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মশা নিয়ন্ত্রণকারী সব পণ্য বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড দামে

ডেঙ্গুর টেস্ট কিটস ও রিএজেন্ট আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতি

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৬ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গুর টেস্ট কিটস ও রিএজেন্ট আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতি

এম শাহজাহান ॥ ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের টেস্ট কিটস ও রিএজেন্ট আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ জনস্বার্থে সরকারী সহায়তা বৃদ্ধি এবং স্বল্প খরচে চিকিৎসা দিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের মশারি, কয়েল, এ্যারোসল ও ওডোমাসসহ মশা নিয়ন্ত্রণকারী সব ধরনের মেডিক্যাল পণ্য রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। চাহিদা বাড়লেও মশা নিয়ন্ত্রণকারী পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে হু হু করে বাড়ছে মশা নিয়ন্ত্রণকারী পণ্যের দাম। কোন কোন ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি দামে ভোক্তাদের এসব পণ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এদিকে, টেস্ট কিটস ও রিএজেন্ট আমদানি সহজ ও শুল্কমুক্ত করে এনবিআর তাদের প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধায় ডেঙ্গু চিকিৎসার সব ধরনের কিটস আমদানি করা যাবে। ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমদানিকৃত কিটসের সমুদয় আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, আগাম কর এবং অগ্রিম আয়কর অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে উল্লিখিত পণ্যসমূহ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদিত পরিমাণ আমদানিতে এই সুবিধা কার্যকর হবে। আমদানিকৃত পণ্যসমূহ মানসম্মত কিনা তা ওষুধ নিয়মিত মনিটরিং করবে প্রশাসন অধিদফতর। জানা গেছে, সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ভঙ্গ করে দেশে এখন ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে। এডিসবাহী মশা থেকে দ্রুত ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু জ্বর। ইতোমধ্যে বেশকিছু ডেঙ্গু রোগী মৃত্যুবরণ করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। জ্বর হলেই সাধারণ মানুষ ছুটে যাচ্ছে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি উচ্চমূল্যে বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। এরপরও কোন কোন হাসপাতালে বেড পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মশা নিয়ন্ত্রণকারী সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানের ৪-৫ হাত সাইজের একটি মশারি আগে ২০০-২৫০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে এ্যারোসল দেড় থেকে দিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এসিআই মাঝারি সাইজের একটি এ্যারোসল আগে দেড়শ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরপরও এসব পণ্য পেতে ছুটে যেতে হচ্ছে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। মশা মারার কয়েল, ইলেক্ট্রিক ব্যাট, স্প্রে ক্রিম, লোশন ও মশারির চাহিদা বহুগুণ বেড়েছে। এছাড়া দোকানে ওডোমাস লোশন ও কোন কোন ব্র্যান্ডের স্প্রে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব পণ্যের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্প্রে লোশন ও রিফিল আনলে দু-এক দিনে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আগে মাসের পর মাস দোকানে এসব পণ্য পড়ে থাকলেও বিক্রি করা যেত না। শাহবাগের ২০টি ওষুধের দোকান ঘুরেও ওডোমাস লোশন খুঁজে পাননি মহাখালীর বাসিন্দা আজাদ হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, মশার হাত থেকে বাঁচতে তিনি ওডোমাস লোশনের খোঁজ করছেন। কিন্তু তিনি তা পাচ্ছেন না। ওই মার্কেটের ওষুধ বিক্রেতা আবু বকর জানান, সরবরাহ না থাকায় তারা ক্রেতাদের চাহিদা মতো মশা নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রীর যোগান দিতে পারছেন না। সরবরাহ না থাকায় মশার সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। বাজারে মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাটের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে এই ব্যাট ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এখন তা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ৫০টি ব্র্যান্ডের কয়েল বাজারে আছে। পাইকারি বিক্রেতারা দাবি করছেন, তারা কয়েলে বাড়তি দাম না রাখলেও মানুষের আতঙ্ক, প্রয়োজন আর চাহিদার সুযোগ নিচ্ছেন এলাকার খুচরা বিক্রেতা ও দোকানিরা। প্রায় সব কোম্পানির কয়েলই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, ডেঙ্গুসহ আরও কয়েকটি রোগের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকার ছয়টি সরকারী হাসপাতালকে জরুরী ভিত্তিতে প্রায় ৩৭ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে এই বরাদ্দ দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা টাকা, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটকে ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ হাসপাতালকে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা, মুগদা জেনারেল হাসপাতালকে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, সরকারের এই উদ্যোগের ফলে দেশে দ্রুত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে।
×