ওয়াজেদ হীরা ॥ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ই-কমার্স। ইন্টারনেটের আধুনিক সুবিধায় মানুষ ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছে সবকিছু। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনলাইনে কেনাকাটার আগ্রহ বেশি। তবে অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন অভিযোগও থাকে। তবুও আগ্রহের ভাটা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ঝুট ঝামেলা এড়াতে ও সময় বাঁচাতে দিন দিন আরও আগ্রহ বাড়ছে। কি নেই অনলাইনে খাবার থেকে সাজসজ্জা সবই মিলছে এখন। এমনকি কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সাইটে পাওয়া যাচ্ছে কোরবানির পশু। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেন এক বিরাট কোরবানির হাট। যেখানে গরুর পাশাপাশি কসাই ও অন্যান্য সরঞ্জামও মিলছে। প্রতারণা এড়াতে প্রয়োজনীয় সচেতনতার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গ্রামের হাট বাজারে ইতোমধ্যেই জমজমাট কোরবানির পশুতে। রাজধানী বা অন্যান্য বড় শহরে এখনও শুরু হয়নি পশুর হাট বসানো। রাজধানীতে ঈদের ৫ দিন আগে বসবে কোরবানির হাট। তবে দৃশ্যমান হাট না বসলেও অনলাইনে কোরবানির হাটের বেচাকেনা প্রায় শেষের পথে। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে শেষ হচ্ছে অনলাইনে পশু কেনাবেচা। যদিও পশু থাকা সাপেক্ষে কোন কোন প্ল্যাটফর্ম বিক্রি করবে ঈদের আগ পর্যন্তই। এদিকে, অনলাইনের অপব্যবহারও বাড়ছে। সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন নামে-বেনামে ফেসবুক পেজ খুলে প্রতারণা করছে একটি অসাধু চক্র। ওই সব পেজে যেসব পণ্যের ছবি পোস্ট করা হয়, তার ধারে কাছেও থাকে না ডেলিভারি দেয়া পণ্যের মান। শুধু তাই নয়, একটি পণ্য অর্ডার দিলে, সেই পণ্যের টাকা নিয়ে ডেলিভারি দেয় আরেকটি পণ্য। গত ২৪ জুলাই রাতে অভিযান চালিয়ে এমন একটি প্রতারক চক্রের ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। এছাড়াও বিভিন্ন সময় প্রতারণার কারণে গ্রেফতারের পাশাপাশি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগও জমা পড়ছে। এক্ষেত্রে ই-কমার্সে সচেতনতার কথা বলছেন অনেকেই। ডিবির সূত্র জানায়, অভিযোগের সূত্র ধরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের নেতৃত্বদানকারী উপকমিশনার আশরাফউল্লাহ বলেন, এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ফেসবুক পেজে চাকচিক্য পণ্য পোস্ট করে। যা বাস্তবের পণ্যের সঙ্গে ন্যূনতম মিলও থাকে না। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তাদের কাছে কেউ ২০ হাজার টাকার ফোন অর্ডার করলে, তারা গ্রাহকদের দেয় ৫০০ বা ৬০০ টাকা দামের নকল ফোন। শুধু তাই নয়, কেউ গাউনের অর্ডার দিলে তাদের দেড় শ’ বা দুই শ’ টাকার কাপড় ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে নিম্নমানের পণ্যের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, দিচ্ছি দিব বলে সময় অতিবাহিত করে। পরে ফোন এবং নিজেদের ফেসবুক পেজটি বন্ধ করে দেয় এই চক্র। আবার নতুন করে নতুন সিম এবং ফেসবুক পেজ খুলে আবার নতুনভাবে তারা ব্যবসা শুরু করে। এক্ষেত্রে ভাল প্রতিষ্ঠান এবং ভাল রিভিও দেখে পণ্য ক্রয়ের কথাও বলেন তিনি।
সবক্ষেত্রেই এমন প্রতারণা হতে পারে। সম্প্রতি কোরবানির গরু অনলাইনে কেনার পর তার লেজ কাটা দেখে আর নিতে চাননি ক্রেতা ইয়াজুল কবির। পরবর্তীতে যদিও বিষয়টি মীমাংসা হলেও কিছুটা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ক্রেতার। অগ্রিম টাকা কিছুটা দেয়ার কারণে আর ফেরত পাননি। সব প্রতিষ্ঠান অগ্রিম টাকাও নেন না। আবার সব অনলাইনে প্রতারণা কওে না সেটিও বলছেন ক্রেতারা। এক্ষেত্রে ক্রেতাদেরই বেশি সচেতনতার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। অনলাইনে কোনবানির হাট বিষয়ে জানা গেছে, কোরবানির আগের এই সময় যথারীতি হাটে-ঘাটে-মাঠে থাকে যানজট আর জনজট। এর ওপর দালালদের খপ্পর, ছিনতাইয়ের ভয়, জাল টাকা ইত্যাদি নানা ঝামেলা তো আছেই। সে সব ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাইরে থেকেও ক্রেতারা এখন ভিড় করছেন ভার্চুয়াল কোরবানির হাটে। কোরবানির পশু কেনা ও জবাই করার মধ্য দিয়ে কোরবানি সম্পন্ন করার এই কাজকে আরও সহজতর করে দিয়েছে প্রযুক্তি।
ঈদের কয়েকদিন আগে কিংবা ক্রেতার পছন্দমতো সময়ে কোরবানির পশু বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে অনলাইনে হাট বসিয়েছে ই-কমার্স সাইটগুলোতে। ক্রেতা আকর্ষণের জন্য কোরবানির পশুর নানা ভঙ্গিও ছবি জুম ইন, জুম আউট করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে অধিকাংশ সাইটে। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য পশুর বয়স, দাঁতের সংখ্যা, ওজন, চামড়ার রং, জাত, জন্মস্থান এবং প্রাপ্তিস্থানও দেয়া থাকছে। ক্রেতারা চাইলে স্বচক্ষে পশু দেখতে যেতে পারেন। আর ছবি দেখেই ক্রয় করতে চাইলে বিক্রেতা সেই পশু পৌঁছে দেন ক্রেতার ঘরে। শুধু ওয়েবসাইট নয়, এর পাশাপাশি বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজেও চলছে কোরবানির পশু কেনাবেচা।
ক্লাসিফায়েড অনলাইন ও ই-কমার্স সাইটগুলোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজ খুলে চলছে কোরবানির পশু বিক্রি। কোথাও কোথাও কোরবানির পশু বেচাকেনা নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে আসেন মোকাররম হোসেন। ই-কমার্স সংশ্লিষ্টরা বলছেন দু’একজন এসব করে ফায়দা নিতে পারে তবে সার্বিকভাবে এটি জীবনকে সহজ করেছে। জানা গেছে অনলাইনে বিভিন্ন পশুর ছবি দেয়া থাকে তার পাশে মূল্যও দেয়া থাকে। তাই দামাদামী না করে পছন্দ হলে কোরবানির পশু চলে আসবে বাসায়। তখন মূল্য পরিশোধ করতে হয়। কিছু কিছু সাইটের পশু কিনতে গেলে অগ্রিম কিছু টাকা দিতে হয়। দেশের বাজারে দীর্ঘদিন থেকেই গরুর মাংস প্রক্রিয়াজাত করে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করে আসা দেশীয় প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল মিট। প্রতিষ্ঠানটি কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করে সাইটটির মাধ্যমে। বেঙ্গল মিট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেঙ্গল মিটের নিজস্ব ফিডলেটে অন্তত তিন মাস থেকে এক বছর পেশাদার ভেটেরিনারি ও পশুপালকের পর্যবেক্ষণে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর খাবার ও প্রাকৃতিক উপায়ে পালিত কোরবানির পশু। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং রেজওয়ানউল্লা খান জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের প্রায় ৮শ’ গরু অনলাইনে বিক্রি করব। প্রায় ২শ’ মতো বিক্রি হয়েছে। বন্যা, ডেঙ্গুসহ নানা কারণে ঈদের দিকে এখনও মানুষ মনযোগী হয়নি। যদিও আশা করছি এই সপ্তাহেই বিক্রি শেষ করতে পারব।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: