ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমিনূর রশীদ বাবর

মানুষ মানুষের জন্য

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২৫ জুলাই ২০১৯

 মানুষ মানুষের জন্য

মানুষ মানুষের জন্য এই অভ্রান্ত বাণী আমরা সকলে জানি, মান্য করি। সভ্যতার পর থেকেই মানুষ এই চেতনা লালন করে আসছে, আর এই চেতনায়ই মানুষ ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। আপদে-বিপদে একজন আরেকজনের সাহায্যে এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। ফি বছরই এখানে বন্যা দেখা দেয়। বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগ মোকাবেলা করার প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্রের, এর পর সমাজের দায়িত্ব। বন্যার সঙ্গে দেশবাসীর পরিচয় অনেক পুরনো। বর্ষা মৌসুমে এ দেশে বন্যা হওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আগে দেখেছি মানুষ বন্যার সময় কলা গাছের ভেলা তৈরি করে এ বাড়ি ওবাড়ি যাতায়াত করত, স্বজনদের খোঁজ খবর নিত। কিন্তু এখন বন্যা হলে এ চিত্র আর দেখা যায় না। এখন বন্যা সাক্ষাত মৃত্যু দূত। বন্যা হলে মানুষ এখন প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছোটাছুটি করে। কিন্তু এ রকম হওয়ার কারণ কি? পূর্বে তো এ রকম বন্যা এত ভয়াবহ, এত প্রলয়ঙ্করী ছিল না। বন্যা আসত মাঠ ঘাট ডুবিয়ে কিছু ফসল ধ্বংস করে চলে যেত। কিন্তু এখন আর সে রকম নয়। এর কারণ কি? এর কারণ হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বৈরী আচরণ এবং অনৈতিক লোভ। প্রকৃতি অকৃপণ হস্তে তার সকল সম্পদ মানবের কল্যাণে দান করেছে। কিন্তু মূর্খ মানব প্রকৃতিকে বোঝে না। প্রকৃতির সঙ্গে বিরোধিতা করে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে চলে। অবলীলাক্রমে পাহাড় ধ্বংস করে, বৃক্ষ নিধন করে। নদী, নালা, পুকুর, ডোবা জবর দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে। শুধু তাই নয় এই সব মূর্খরা সরকারী রাস্তার দুই দিক দখল করে স্থায়ীভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করছে। মৌলভীবাজারের মধ্য দিয়ে যে মনু নদী বয়ে গেছে এ নদীর অবস্থা এখন খুব ভাল নয়। নদীর তলা সাত আট ফুট ভরাট হয়ে গেছে। প্রতি বছর নদী ভরাট হয়ে উপরে ওঠে আর প্রতি বছর একইভাবে বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ উপরের দিকে উঠতে থাকে। এটা কি বন্যা প্রতিরোধের কোন স্থায়ী ব্যবস্থা হলো? এভাবে বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা চলতে থাকলে এক সময় দেখা যাবে এ অঞ্চলের মানুষ সারা বছর নদীর সাত আট ফুট নিচে বসবাস করছে। অপরদিকে বাংলাদেশ সীমানায় বাহান্ন মাইল দীর্ঘ মনু নদী। এই দীর্ঘ মনু নদীর বহু বাঁক আছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে ঐ সব বাঁক ভেঙ্গে প্লাবন সৃষ্টি করে। ইতোপূর্বে নদী শাসনের জন্য সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এলাকার মানুষ শুধু এতটুকু জানে। পরবর্তীতে বরাদ্দের টাকা কি হয় না হয় তার কিছুই জানে না। এ ভাবে বন্যা প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দের টাকা কোন কাজে আসে না। সব লুটে পুটে খেয়ে ফেলে। এ ভাবে চলতে থাকলে বন্যার স্থায়ী কোন সমাধান হবে না। এই চুরির দুঃখে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘মানুষ পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি।’ বাঙালীরা বোধহয় বঙ্গবন্ধুর এই আপ্তবাক্য বুঝতে পারেনি। আর এই না বোঝার কারণে এ দেশের এই দৈন্যদশা। অতএব, এই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হলে এ দেশের জনগণের নৈতিক চরিত্র বদলাতে হবে। চুরি চুট্টামি, লুটপাট বন্ধ করতে হবে। যদি লুটপাট বন্ধ করা যায়, পাহাড় টিলা, নদী দখল বন্ধ করা যায় তা হলেই বন্যা প্রতিরোধ করা যাবে। আর সমাজের মানুষ সকল সময়ই একে অন্যের আপদে বিপদে সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং ভবিষ্যতেও এগিয়ে আসবে। এ সমাজের মানুষ বিপদে আপদে একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়ায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ সম্প্রতি ঢাকার চুড়িহাটের অগ্নিকান্ড, বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকান্ড জনগণ দেখেছে বিপদের সময় মানুষ কিভাবে একে অপরকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। গির্জাপাড়া, মৌলভীবাজার থেকে
×