ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এমডি নিয়োগ নিয়ে ডিএসই ও বিএসইসির দূরত্ব

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২১ জুলাই ২০১৯

এমডি নিয়োগ নিয়ে ডিএসই ও বিএসইসির দূরত্ব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড কমিশনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের মধ্যেও শেয়ারবাজারের দুই সংস্থার মধ্যে মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ও ট্রেকধারীরা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সাবেক এমডি মাজেদুর রহমানকে আবার পুনর্নিয়োগ দিতে চায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্তা ব্যক্তিরা তাকে পুনরায় নিয়োগ দিতে নারাজ। একইভাবে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) চলছে ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে। সেখানেও সাইফুর রহমান মজুমদারের চাকরি শেষের পর আর নিয়োগ দেয়া হয়নি। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালক নিয়োগসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ডিএসই প্রাথমিক রেগুলেটর হলেও বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যার কারণে ইচ্ছা থাকলেও ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এমডি নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পারছে না। ফলে ভারপ্রাপ্ত এমডি আব্দুল মতিন পায়োটারিকে দিয়েই চলছে ডিএসইর প্রতিদিনের কাজকর্ম। নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে চরম দূরাবস্থাতে দুই বড় সংস্থার কর্মকর্তাদের মধ্যে কোন হেলদোল নেই। উল্টো একাধিক ইস্যুতে ভিন্নভিন্ন মত দেখা গেছে সম্প্রতি। কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি থেকে ডিএসইর সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরে ডিএসইর একান্ত চাওয়াতে চীনের কাছে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দিতে বাধ্য হয় বিএসইসি। যদিও প্রথমদিকে বিএসইসি ভারতীয় কনসোর্টিয়ামের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে চাইছিল। কিন্তু দাম বেশি পাওয়ায় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের একান্ত চাওয়ার কাছে বিএসইসি হার মেনে যায়। এরপরে কপারটেক নামের কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে সর্বশেষ ডিএসই ও বিএসইসির দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। কমিশন কপারটেককে টাকা উত্তোলনের অনুমোদনের পর কপারটেক নির্দিষ্ট সময়ে টাকা উত্তোলন করে। কিন্তু চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিলেও ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ আর্থিক প্রতিবেদনে দুর্বলতার অভিযোগ এনে কপারটেককে তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তালিকাভুক্তির সময় পেরিয়ে গেলেও নানামুখী প্রচেষ্টার পর কপারটেক ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন পায়। তবে আইন অনুযায়ী টাকা উত্তোলনের নির্দিষ্ট ৭৫ দিনের মধ্যে লেনদেন শুরুর দিন পেরিয়ে যায়। তাই অনুমোদন পেলেও ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় কোম্পানিটির লেনদেন শুরু হবে তা ঝুলে আছে। এটি নিয়ে জটিলতা এখনও কাটেনি। জানা গেছে, এর আগে ডিএসই ও বিএসইসির মধ্যে নানা বিষয়ে দূরত্ব ছিল। কিন্তু এবারের দ্বন্দ্ব সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। এই দ্বন্দ্বের কারণে আরও বেশি ঝুলে গেছে সাবেক এমডি মাজেদুর রহমানে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগের অনুমোদন। বিএসইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হজ পালনের উদ্দেশে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন আগামী ২৮ জুলাই সৌদি আরবে যাবেন। হজ পালন শেষে দেশে ফিরবেন ১৮ আগস্ট। এর আগে এমডি নিয়োগ হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে অপর একটি সূত্র বলছে, কমিশন ডিএসইর নতুন ট্রেক ইস্যু করতে আগ্রহী। ইতোমধ্যে ট্রেকহোল্ডারের লাইসেন্সের জন্য ৬ বিদেশী কোম্পানিসহ বেশকিছু দেশী প্রতিষ্ঠান তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইজিএফ প্রাইভেট ব্যাংক, সিডিএফ লন্ডন, ব্ল্যাক রক এবং এবারডিন এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ডিএসই’র ট্রেকহোল্ডারের লাইসেন্স নেয়ার জন্য এলওআই পাঠিয়েছে। এছাড়া ডিএসই’তে এলওআই পাঠিয়েছে চায়নার সিআইটিআইসি সিএলএসএ সিকিউরিটিজ এবং ইউএসএ’র গোল্ডম্যান সাচস গ্রুপ। বর্তমানে ডিএসই’র ট্রেকহোল্ডারের সংখ্যা ২৫০টি। নতুন করে ট্রেক ইস্যুর ক্ষেত্রে ডি-মিউচুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ এর ১৬ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, ডি-মিউচুয়ালাইজেশনের তারিখ হতে ৫ বছর অতিক্রম করার পর ট্রেকহোল্ডারদের যোগ্যতা পরিপালন সাপেক্ষে নির্ধারিত পদ্ধতিতে কোন আবেদনকারীর অনুকূলে ট্রেক ইস্যু করা যাবে। ইতোমধ্যে ডি-মিউচুয়ালাইজেশনের ৫ বছর শেষ হয়েছে। অর্থাৎ নতুন ট্রেক ইস্যুর ক্ষেত্রে আইনের কোন বাধা নেই। নতুন ট্রেক ইস্যুর ক্ষেত্রে আলাদা কোন আইন বা নির্দেশনা এখনও প্রণয়ন করেনি বিএসইসি। তাই স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন ট্রেকহোল্ডারদের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। শীঘ্রই আইনটি জনমত জরিপের জন্য প্রকাশ করা হবে। আর আইন প্রণয়নের পরপরই নতুন ট্রেক ইস্যু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে বর্তমান ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ নতুন ট্রেক ইস্যুর পক্ষপাতি নয়। এর আগে ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ডিএসইতে এমডি হিসেবে কে এ এম মাজেদুর রহমান ডিএসইতে যোগ দেন। ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ মাজেদুর রহমানকে নিয়োগের জন্য বিএসইসির কাছে সুপারিশ করে। ডিএসই কর্তৃপক্ষের সুপারিশের আলোকে বিএসইসি এ অনুমোদন দেয়। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই সেই হিসেবে মাজেদুর রহমান তার মেয়াদ শেষ করেন। এই মেয়াদ শেষের আগেই মে মাসের শেষদিকে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ তাকে পুনরায় নিয়োগ দেয়ার কথা বলে কমিশনকে জানায়। এখনও তা পাস হয়নি।
×