ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ১০ হাজার ৮শ’২৭টি খামার

কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানোর প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১৩ জুলাই ২০১৯

কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানোর প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের শরিফুল ইসলাম ১২টি দেশী গরু পালন করছেন। প্রতিদিন একটি গরুর পেছনে তার ব্যয় হয় ১শ’ ৩৫ টাকা করে। গরুকে তিনি খেতে দেন খৈল, ভুষি, কুড়া, ফিড ও কাঁচা ঘাস। গতবার ঈদে ভাল দাম পেয়েছিলেন। এবারও সেই আশা করছেন তিনি। তার খামারের গরু মানভেদে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। একই গ্রামের জাহাঙ্গীর পালন করছেন ২টি গরু। তিনিও আশা করছেন গরু দুটি ভাল দামে বিক্রি করবেন। তারা জানান, গরু খামার ব্যবসায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেকেই এ পেশায় আসতে উৎসাহিত হবেন। পশুর উপযুক্ত দাম পাওয়া গেলে ভারত থেকে গরু আনার দরকার হবে না। স্থানীয় খামারিরাই দেশের মাংসের জোগান দিতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। শুধু ওই দুই খামারি নয়, যশোর জেলায় এবার কোরবানি উপলক্ষে ১০ হাজার ৮শ’২৭টি খামারে ৭০ হাজার ৬শ’২৪টি গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৩১ হাজার ৬শ’ ২২টি ও ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৩৯ হাজার ২টি। গত বছর ১১ হাজার ৫শ’টি খামারে ৫৯ হাজার ৫শ’টি গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে গরু ছিল ৩৩ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া ছিল ২৬ হাজার ৫০০টি। জানা গেছে, অধিকাংশ খামারি নিজেদের গচ্ছিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে কোরবানির পশু পালন করছেন। ভারতে গরু আমদানি কমলে দেশীয় গরু পালন বৃদ্ধি পাবে, খামারিরাও লাভবান হবে বলে দাবি করেছেন খামারি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্যমতে, এবারের কোরবানিতে জেলায় ৬০ হাজার গরু ও ছাগলের চাহিদা রয়েছে। সেই হিসেবে জেলার ৮ উপজেলায় ৭০ হাজার ৬শ’ ২৪টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার ৬শ’ ২৪টি বেশি গরু ও ছাগল রয়েছে। একজন আদর্শ খামারি হিসেবে শার্শার ত্রিমোহিনীর আসাদুর রহমান। তিনি নিজ উদ্যোগে গরুর খামার করেছেন। খামারে যেয়ে দেখা যায় গরুর মাথার ওপর ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা, মশা মাছির উৎপাত থেকে রক্ষার জন্য টাঙানো রয়েছে মশারি। খাবারের তালিকায় আছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য আর সার্বক্ষণিক চলছে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা। ২৪ ঘণ্টা এমন পরিচর্যা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এসব খামারে বেড়ে ওঠা গরুগুলোও হয়ে উঠছে হৃষ্টপুষ্ট ও সুন্দর। খামার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় গরুর চাপে অন্তত পাঁচ বছর তারা এ খাতে কোন সুফল পাননি। অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন তবে এবার সুফল আসতে শুরু করেছে বলেন খামারিরা। কেননা গত বছর তেমন একটা ভারতীয় গরু আসেনি। এদিকে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা জানান, যেখানে আগে পুটখালি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার গরু আসতো। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ ও বিজিবির কড়াকড়িতে এখন গরু আসছে না। চুরি করে আসলেও তা নগণ্য। এতে পূর্বে যে গরুর দাম ৪০ হাজার টাকা ছিল এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে লাখ টাকারও বেশি। সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপনেশ্বর রায় বলেন, উপজেলার খামারগুলো কোরবানিতে পশু বিক্রি করতে প্রস্তুত রয়েছে। এখান থেকে ৬ হাজার ৫শ’ ৫৪টি গরু-ছাগল এবারের কোরবানি ঈদে বাজারজাত করতে পারবে খামারিরা। তিনি জানান, তার নিয়ন্ত্রণে খামারগুলোতে সকল গরু সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান। এ ব্যাপারে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার ভবতোষ কান্তি সরকার জানান, এবারের কোরবানির ঈদে চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত প্রায় ১০ হাজার ৬শ’ ২৪টি গরু ও ছাগল উদ্বৃত্ত থাকবে। আমরা খামারিদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছি। কেউ যাতে পশুর শরীরে ক্ষতিকারক ইনজেকশন পুশ না করে সেদিকে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। কোরবানির প্রতিটি হাটে আমাদের মেডিকেল টিম থাকবে। ভারতীয় গরু না আসলে আমাদের কোন প্রভাব পড়বে না জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হলে খামারিরা লাভবান হবেন।
×