ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বাহিনী প্রধানের কক্সবাজারে ক্যাম্প পরিদর্শন

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসা ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১১ জুলাই ২০১৯

 রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে  আসা ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে বিপর্যয়কর ও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলেছে মিয়ানমার থেকে আগত কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত এসব রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ে যাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তার বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক, পুলিশের আইজি, র‌্যাবের ডিজি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের পরপরই তিন বাহিনী প্রধানের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি দীর্ঘায়িত হওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তিন বাহিনীর প্রধানের সুপারিশ অনুযায়ী অপরাধপ্রবণ রোহিঙ্গাদের বিরত রেখে নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে পরিকল্পনা নেবে সরকার। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী ও (র‌্যাব) মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ে যাতে বহুমুখী অপরাধে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে না পরে, তা কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে সরকারের কাছে সুপারিশ করাই তিন বাহিনী প্রধানের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের উদ্দেশ্য সরকারের উচ্চপর্যায় সূত্রে জানানো হয়, মঙ্গলবার সকালে বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছেন তিন বাহিনী প্রধান। এরপর বেলা তিনটায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান তারা। তারা বুধবার দুপুরে ঢাকায় ফিরে এসেছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে স্থানীয়দের জনজীবনে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে সন্ত্রাসী কর্মকা- না ঘটতে পারে এবং রোহিঙ্গাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে না পারে তিন বাহিনী প্রধান ঢাকায় এসে সুপারিশমালা তৈরি করবে। তিন বাহিনী প্রধানের সুপারিশমালা সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে পেশ করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায় তিন বাহিনী প্রধান মঙ্গলবার সারাদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে কক্সবাজারে রাত কাটান। তাদের সঙ্গে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খোন্দকার গোলাম ফারুকও ছিলেন। বুধবার দুপুর আড়াইটায় তারা ঢাকায় ফেরার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চতুর্দিকে ঘিরে বেড়া দেয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি, নিরাপত্তাজনিত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা সুপারিশ আকারে সরকারের কাছে পেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ওই সূত্রের দাবি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা যাতে দেশের মূল জনস্রোতে মিশে যেতে না পারে সেজন্য টেকনাফ থেকে উখিয়া পর্যন্ত বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট। পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এসব চেকপোস্টে তল্লাশি চালান। তবে এত সতর্কতার পরও রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য এলাকায়। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন পেশায়। উখিয়ার ফলিয়া পাড়া সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ভোরে রোহিঙ্গাদের কাজের সন্ধানে বের হতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্য টাকার বিনিময়ে তাদের অবাধে বাইরে যেতে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গারা আসার পর বোরকার বিক্রি বেড়ে গেছে। ক্যাম্পের নারীরা বোরকা পরেন। বোরকা পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাওয়ার সুবিধা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বোরকা পরে পাসপোর্ট করতে গিয়ে দালালসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন রোহিঙ্গা তরুণী। ঢাকার সূত্রাপুর থানার পুলিশ একটি হোটেল থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করার ঘটনার নজিরও আছে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার কোন না কোন স্থানে ছেলে ধরা (শিশু চোর) রোহিঙ্গা সন্দেহে এলাকাবাসীর গণপিটুনি বা লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন এ দেশেরই বয়স্ক ভিক্ষুক ও মানসিক রোগীরা। রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়িয়ে পাহাড়-জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারা এখন লোকাল ভাষা শিখে গেছে। পোশাক লোকালদের মতো পড়ছে। চেকপোস্ট দিয়ে দুই-চারজন যারা আসছে তারা স্পষ্টভাবে জায়গার নাম বলছে। সাধারণভাবে ধরা পড়লে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হলেও ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়লেই শুধু রোহিঙ্গাদের জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে। যেসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার পরও রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে পালানো ঠেকানো যাচ্ছে না, ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র, নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা।
×