ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে মাদকের ভয়াল গ্রাস ॥ বাড়ছে খুুন ও আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১১ জুলাই ২০১৯

 রাজশাহীতে মাদকের ভয়াল গ্রাস ॥ বাড়ছে খুুন ও  আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, সোচ্চার সামাজিক সংগঠন, তারপরেও কমছে না মাদকের ভয়াল গ্রাস। মাদকের বিস্তারের কারণে রাজশাহী অঞ্চলেও বেড়েছে খুন, ছিনতাই ও আত্মহত্যার প্রবণতা। বেশ কয়েকদিন ধরে রাজশাহী অঞ্চলে যে কটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগের পেছনে রয়েছে মাদকের থাবা। মাদকের টাকা না পেয়ে মাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে রাজশাহীতে। শুধু তাই নয়, মাদকের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে তরুণরা। আর মাদকের টাকার জন্য ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন আরও জোরদার না করা গেলে নিয়ন্ত্রণে আসবে না মাদকের আগ্রাসন। রাজশাহীতে সর্বশেষ রবিবার রাতে মায়ের কাছে মাদকের টাকা না পেয়ে মাকেই হাতুড়ি পেটা করেছে ছেলে। গোদাগাড়ী পৌরসভার আরিজপুর গ্রামে লোমহর্ষকর ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শাহাবুদ্দীনের মাদকাসক্ত ছেলে সালেক আহমেদ হাতুািড় দিয়ে পিটিয়ে তার মা সেলিনা বেগমকে (৫০) হত্যা করে। এরপরের দিন সোমবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে মাদকাসক্ত স্বামী তার স্ত্রীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। জানা গেছে, মাদক এখন শহর ছাড়িয়ে বিস্তার লাভ করেছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। এ কারণে শহর অথবা গ্রাম সব জায়গায় প্রতিনিয়ত ঘটছে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরির ঘটনা। রাজশাহী ও আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রায় দিনই ঘটছে খুন, আত্মহত্যা, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার। এদের ৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ার কারণে রাজশাহী ও আশপাশের এলাকার অবস্থা আরও বেশি ভয়াবহ। সীমান্তে প্রতিদিনই ধরা পড়ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল। কিন্তু কোন ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এর আগ্রাসন। রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ভো) বিদ্যালয়ের সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, আমাদের সমাজের জন্য মাদক এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। প্রতিটি পরিবারকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। কোনভাবেই যাতে একটি সন্তানও মাদকের ভয়াল থাবার শিকার না হয়। গত সোমবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে কান্না করছিলেন লিলা বেগম নামের একজন মা। কারণ তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে জামাই। এক সময় কান্না থামিয়ে বললেন, জামাই সোহেল প্রায় নেশা করে বাড়িতে এসে রাখিকে (২৯) মারধর করত। মারতে মারতে অসুস্থ করে দিত। আমার মেয়েকে খুব অত্যাচার করেছে। রাখিকে অনেক বলেছি, ‘সোহেলকে ছেড়ে চলে আয়। সে আসেনি। আমার কথা শুনলে মেয়েটা মরত না। রাখি মারা যাওয়ার ঘটনা রবিবার রাতের। নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার স্বামী সোহেল এর বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রাখিকে। পরে এলাকাবাসী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় মৃত্যু হয় রাখির। রাখির মা লিলা বেগম ও আশপাশের লোকজন জানান, রাখির স্বামী সোহেল মাদকাসক্ত। সামান্য কারণেই রাখির ওপরে সে নির্যাতন করত। শুধু রাখি নয়, এমন ঘটনা এখন ঘটছে অহরহ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এসবের পেছনে একটাই কারণ তা হলো মাদকের আগ্রাসন।
×