ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিতসুবিশি-স্যামসাং পাচ্ছে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজ

প্রকাশিত: ১০:০৩, ২৮ জুন ২০১৯

 মিতসুবিশি-স্যামসাং পাচ্ছে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজ

আজাদ সুলায়মান ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাবে টিকেছে মিতসুবিশি ও স্যামসাং নিয়ে গঠিত এডি কনসোর্টিয়াম। জাইকার অর্থায়নে এ প্রকল্পের দরপত্রে মাত্র দুটি জাপানী কোম্পানি কারিগরি মূল্যায়নে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এ দুটির মধ্যে এডি কনসোর্টিয়াম আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে সিমুজি নামের অপর একটি জেভি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাব ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। এখন চলছে মিতসুবিশি ও স্যামসাংয়ের আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের কাজ। সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সদর দফতরের উভয় কোম্পানির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আর্থিক দরপত্র খোলা হয়। এতে দেখা যায়, জাপানের মিতসুবিশি ও কোরিয়ার স্যামসাং-এর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ প্রতিষ্ঠান এডি কনসোর্টিয়াম আথিক প্রস্তাবে টিকে গেছে। সিভিল এভিয়েশন প্রাথমিকভাবে এ প্রস্তাবটিই গ্রহণ করেছে। এখন চলছে আর্থিক মূল্যায়ন। এ জন্য সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীর নেতৃত্বে একদল প্রকৌশলী দিনরাত মূল্যায়নের কর্মব্যস্ততায় রয়েছেন। তাদের সহায়তা দিচ্ছে পরামর্শক কোম্পানি নিপ্পন কই। চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে চলছে আর্থিক মূল্যায়নের কাজ। দ্রুততার সঙ্গে মূল্যায়নের পর সেটা সিভিল এভিয়েশনের পর্ষদ সভায় অনুমোদনের পর জাইকার কাছে পাঠানো হবে। জাইকার অনুমোদনের পর সেটা যাবে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায়। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর দেয়া হবে কার্যাদেশ। তিন ধাপের এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বড়জোর মাস দুয়েক সময় লাগতে পারে। অর্থাৎ যে কোন মূল্যে আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে থার্ড টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হবে। প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, মিতসুবিশি স্যামসাং জেভি এডি কনসোর্টিয়ামই পেতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত এ প্রকল্পের ঠিকাদারিত্ব। আর্থিক মূল্যায়নে অনেকগুলো ফ্যাক্টর আমলে নিতে হবে। দরপত্রের প্রাক্কলিত ব্যয়ের সঙ্গে প্রস্তাবিত আর্থিক পরিমাণের কেমন পার্থক্য ঘটে, প্রকল্পে ব্যবহৃত বিদেশী মালামাল আমদানির ট্যাক্স পরিশোধের নীতিমালা কি হবে, দরপত্রে উল্লেখিত দরের মোট অঙ্কে কোন ধরনের গড়মিল দেখা দেয় কি না এসবই পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করা হবে। হাজার হাজার পাতার এ দরপত্রের প্রতিটি লাইন পড়ার মতো কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের । এদিকে আর্থিক মূল্যায়নের পাশাপাশি চলছে টার্মিনাল নির্মাণের সাইট তৈরির কাজ। বলাকার দক্ষিণ প্রান্তের বিশাল অঞ্চলের সীমানা দেয়াল তৈরি শেষ। ভেতরে চলছে মাাটি ভরাটের কাজ। শাহজালাল বিমানবন্দরের বর্তমান টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু করে আরও দক্ষিণে পদ্মা অয়েলের সীমানা পর্যন্ত এ বিশাল জায়গায়জুড়ে নির্মিত হবে থার্ড টার্মিনাল। এ জন্য স্থানান্তর ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে কার্গো ভিলেজ, ভিভিআইপি কমপ্লেক্স, হ্যাঙ্গার ও পদ্মা ওয়েল ডিপো। হ্যাঙ্গার স্থানান্তরের কাজও এগিয়ে চলছে জোর গতিতেই। জানা গেছে, অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান জাইকার সঙ্গে বেবিচক ও বিমান মন্ত্রণালয়ের একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল। সে চুক্তি অনুযায়ী দাতা দেশ জাপানের নিজস্ব প্রকিউরমেন্ট রুলস ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট এইড (ওডিআই) অনুযায়ীই এ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান, যাচাই-বাছাই, কার্যাদেশ দেয়া ও অন্যান্য সব কিছু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী জনকণ্ঠকে বলেন, এটা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর সঙ্গে দেশের সার্বিক উন্নতির বিষয়টি জড়িত। যে কোন মূল্যে যত দ্রততম সময়ে সম্ভব থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু ও শেষ করতে হবে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। এর আগে ২০১৫ সালে বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। ২০১৭ সালের ১১ জুন এ প্রকল্পের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় বেবিচক। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। এর মধ্যে অন্যতম বাধা ছিল টার্মিনালের দক্ষিণপ্রান্তে বিশাল বাগান পরিষ্কার করা, বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ ও হ্যাঙ্গার স্থানান্তর প্রকল্পের কাজে স্বার্থান্বেষী মহলের মামলা মোকদ্দমা। নইলে এতদিনে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যেত। বহুল আলোচিত এ থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে দরপত্র আহ্বান করে সিভিল এভিয়েশন। ১৯ মার্চ দরপত্র খোলা হয়। তার আগের দিন একটি স্বার্থান্বেষী চক্র এই প্রকল্প নস্যাৎ করতে আদালতে মামলা ঠুকে দরপত্র বাতিল করার হুমকি দিয়ে কমিশন খাওয়ার জন্য মাঠে নামে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনী লড়াইয়ে সব বাধা অতিক্রম করেই সিভিল এভিয়েশন তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। এতে জাপানের সিমুজি ইটাল থাই এবং মিতসুবিশি স্যামসাং-এর এডি কনসোর্টিয়াম নামের দুটি প্রতিষ্ঠান কারিগরি দরপত্রে প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে। আর আর্থিক অফারে টিকে যায় মিতসুবিশি-স্যামসাংয়ের কোম্পানি এডি কনসোর্টিয়াম।
×