ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের হারে জমে উঠল বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২৩ জুন ২০১৯

 ইংল্যান্ডের হারে জমে উঠল বিশ্বকাপ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ শুক্রবার হেডিংলি ছিল চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে টার্নিং পয়েন্ট। হট ফেবারিট ইংল্যান্ড জিতে গেলে সেমিফাইনালের পথ সুগম হয়ে যেত তাদের। আর শ্রীলঙ্কার আশা প্রায় শেষ হয়ে যেতো। তবে লঙ্কানদের নিয়ে কেউ যেমন ভাবেনি, ইংলিশরাও সম্ভবত তেমন সমীহ করেনি তাদের। সেই শ্রীলঙ্কা লো-স্কোরিং ম্যাচে ইংলিশদের হারিয়ে অনেক হিসেব-নিকেশই পাল্টে দিয়েছে। পয়েন্ট টেবিলে ওপরের ৬টি দলের পয়েন্ট যথাক্রমে ১০, ৯, ৮, ৭, ৬ ও ৫। এ কয়টি দলের জন্যই সেমির চারটি জায়গা উন্মুক্ত হয়ে গেছে। যদিও পাঁচ ও ছয় নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের জন্য পথটি বেশ দুর্গম, কিন্তু দু’টি করে ম্যাচ জিতেও এমনকি এ দু’টি দলের জায়গা হতে পারে সেমিতে। বিভিন্ন সমীকরণ তেমনটাই বলছে। তবে বাংলাদেশ দু’টি ম্যাচ জিতে সেমিতে যেতে হলে বড় ব্যবধানে জয় পেতে হবে এবং নেট রানরেটে যে কোন এক বা দুটি দলের চেয়ে এগিয়ে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে টানা তিন ম্যাচ জিতলেই সম্ভবনা অনেক বেশি বেড়ে যাবে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলা। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই আকর্ষণ বেড়ে গিয়ে জমে উঠেছে বিশ্বকাপ। এবার ইংল্যান্ডে চলমান বিশ্বকাপের আগে থেকেই অনেক বিশ্লেষক বলছিলেন ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড সেমি খেলার ক্ষেত্রে হট ফেবারিট। তবে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা সেখানে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। বাস্তবে বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর পর প্রোটিয়া-পাকরা যেন আগেভাগেই ছিটকে পড়েছিল। সেখানে সম্ভাবনাময় দল হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর টাইগারদের সম্ভাবনাও ম্লান হয়ে গিয়েছিল। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছিল ক্রিকেটবোদ্ধাদের বিশ্লেষণ অনুসারেই সেমির লাইনআপ চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যতম ফেবারিট ইংল্যান্ড অপ্রত্যাশিতভাবে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাওয়াতে অনেককিছুই ওলট-পালট হয়ে গেছে। এখন পয়েন্ট টেবিলের ওপর থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের পয়েন্ট বিন্যাসটা পর্যায়ক্রমিকভাবে- ১০, ৯, ৮, ৭, ৬ ও ৫। তাই এ ৬ দলের জন্যই উন্মুক্ত হয়ে গেছে সেমিতে ওঠার সুযোগ। তবে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলটিই আছে নিরাপদ অবস্থানে। সমীকরণে অনেক গরমিল হয়ে গেলেও তাদের বাদ পড়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। বাকি দলগুলোর মধ্যে এমনকি নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ভারতও শেষ পর্যন্ত ছিটকে যেতে পারে প্রাথমিক রাউন্ড থেকেই। এমনকি ৩ পয়েন্ট করে পাওয়া পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাবনাও আছে যদি তারা বাকি থাকা সবগুলো জিতে যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্য তলানির এ তিনটি দলের মধ্যে যে কোন দুই দলেরই সম্ভাবনা থাকবে। সেদিক থেকে রবিবার পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে প্রোটিয়ারা হেরে গেলে তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। সম্ভাবনা বাড়বে পাকদের। কারণ প্রোটিয়া-উইন্ডিজ কিংবা উইন্ডিজ-পাক লড়াই শেষ হয়ে গেছে আগেই। শুক্রবার ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর বিশ্বকাপে খেলা বাকি আর ১৮টি। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৩, নিউজিল্যান্ড ৪, ইংল্যান্ড ৩, ভারত ৫, শ্রীলঙ্কা ৩, বাংলাদেশ ৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ ও পাকিস্তানের ৪ ম্যাচ বাকি। এই ম্যাচগুলোর প্রতিটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেমিতে ওঠার পথ মসৃণ করতে হলে সবগুলো ম্যাচেই জেতার আপ্রাণ চেষ্টা করবে দলগুলো। বাকি থাকা ম্যাচগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় চারটি দলের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে অন্যতম হট ফেবারিট ইংল্যান্ড। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর আর কোন বিশ্বকাপেই তারা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারেনি। এ তিনটি দলের বিপক্ষেই শেষ তিনটি ম্যাচ আছে ইংলিশদের। শীর্ষ ওয়ানডে দল হয়েও নিচু র‌্যাঙ্কিংয়ের শ্রীলঙ্কার কাছে পরাজয়ে এখন তাই অন্তত বাকি তিন ম্যাচের একটিতে জিততেই হবে তাদের। আর সবগুলো ম্যাচই হেরে গেলে লাভ হবে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের। সেমিতে ওঠার ক্ষেত্রে তখন দুটি করে ম্যাচ জিতলেও হবে এ দল দু’টির। একই পরিস্থিতি হতে পারে কিউইদেরও। তারা বাকি ৪ ম্যাচ খেলবে উইন্ডিজ, পাক, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। কঠিন এই ম্যাচগুলোর সব হেরে গেলে ছিটকে যাবে এই মুহূর্তে পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কিউইরা। ভারতীয় দল বাকি থাকা ৫ ম্যাচের মধ্যে দু’টি জিতলে এবং শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলে উল্টো তাদেরই বিপদ আছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড বাকি সব ম্যাচ জিতলেও ইংল্যান্ডের জন্য সমস্যা তৈরি হবে। ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ সব ম্যাচ জিতলে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বাদ পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এর মধ্যে দুর্বলতম আফগানিস্তানেরই শুধু সেমিতে ওঠার কোন সম্ভাবনাই নেই। তবে তারা একটি ম্যাচ জিতে গেলে পরিস্থিতির অনেকটাই জটিলতা কমে যাবে। কারণ ভারতের বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচটি শেষে তাদের বাকি থাকবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ। এর মধ্যে যে কোনটি আফগানরা জিতে গেলে পরাজিত দলের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে অনেকখানি। অর্থাৎ এই মুহূর্তে সেমিতে ওঠার লড়াইয়ে ৯টি দলই আছে। এর মধ্যে সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার। তবে শুক্রবারের ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে শ্রীলঙ্কা হেরে গেলে এত জটিলতা বাড়তো না। সেক্ষেত্রে সেমিতে ওঠার লড়াইটা বাংলাদেশসহ ওপরের চারটি দলেরই থাকতো। তবে তখন শেষ ৩ ম্যাচে অবশ্যই জিততে হতো বাংলাদেশকে এবং তারপরও সমীকরণের মারপ্যাঁচে পড়তে হতো।
×