ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

তারেক শাস্তি পাবেই

প্রকাশিত: ১০:০৫, ১০ জুন ২০১৯

তারেক শাস্তি পাবেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দ্রুত অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয় এবং জঙ্গীবাদ নির্মূলে দলমত নির্বিশেষে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করতে চান তিনি। তাই জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে, সজাগ থাকতে হবে। আজ দেশ সব ধরনের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের সম্মিলিত শক্তিতেই এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ও লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আজ হোক, কাল হোক এক সময় তার শাস্তি কার্যকর হবেই। মিয়ানমারের আপত্তি ও অসহযোগিতার কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই চায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাক। কিন্তু মিয়ানমারের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তারাই আগ্রহী নয়। রবিবার বিকেলে গণভবনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সম্প্রতি টানা ১২ দিনের জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফরের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলে প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সবশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, কূটনৈতিক সম্পর্ক, জঙ্গী-সন্ত্রাসী তৎপরতাসহ নানা ইস্যুতে ঠান্ডা-জ্বরে কিছুটা আক্রান্ত থাকলেও সাংবাদিকদের অসংখ্য প্রশ্নের সাবলীল উত্তর হাসিমুখে দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় মঞ্চে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ছাড়াও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ ও সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমানের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখি আমাদের অনেকের দরদ একেবারে উথলে ওঠে। কিন্তু আপনারা এটা ভুলে যান কীভাবে? একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা। কীভাবে আমরা বেঁচে গেছি। বাঁচারই কথা নয়। এতগুলো মানুষের জীবন তারা নিল ক্ষমতায় থাকতে। একবার না, বারবার এইভাবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বা বাইরে থাকতে হামলা করে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে যারা হত্যা করেছে তাদের নিয়ে এত মায়াকান্না কেন? তিনি বলেন, সেই হত্যাকারী তারপর আবার এতিমের হক আত্মসাতকারী। দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি এদের জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখলে তাহলে আর এদেশের অপরাধীর বিচার হবে কীভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। আমরা আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে। এত বেশি টাকা পয়সা বানিয়ে ফেলেছে তারা, সেখানে খুব বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে। আর যখনই যাই তখনই একটা সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করে। তবে আজ হোক, কাল হোক- এক সময় শাস্তি কার্যকর হবেই। সেটুকু বলতে পারি। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যু প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নরেন্দ্র মোদি আবারও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করি আমাদের সমসাগুলো একে একে সমাধান হবে। শুধু তিস্তা, তিস্তা করে না। আপনারা একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন, আমাদের মেরিটাইম বাউন্ডারির মতো কঠিন একটা সমস্যা আমরা সমাধান করেছি। আমরা আমাদের যে ছিটমহল বিনিময় করেছি। পৃথিবীর বহু দেশে যুদ্ধ বেঁধে যাচ্ছে এই ছিটমহল নিয়ে। আমরা একটা উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা অনেক কঠিন সমস্যা সমাধান করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও কাছে পানির জন্য মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। কারণ আমাদের এটা হচ্ছে ডেল্টা। হিমালয় থেকে নদীগুলো যদি আসে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যেতেই হবে। পানিটা আমরা কতটা ধরে রাখতে পারব সেই ব্যবস্থা যদি আমরা করি তাহলে পানি পানি করে আমাদের চাইতে হবে না। আমরা নিজেরাই ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারব। আমরা তাই করব। বিমান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যখনই বিমানে উঠি তখনই একটা ঘটনা ঘটে। একটা নিউজ হয়। হয়তো পাসপোর্ট আনতে ভুলে যেতে পারে। কিন্তু ইমিগ্রেশন কি করল? কেন দেখে নাই। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ইমিগ্রেশন খুব কড়াকড়ি করতে বলেছি। আমাদের তো সবাই অনেকেই ভিআইপি। যারাই হোক কাউকে ছাড়া হবে না। আইকা ওয়ার্ড সার্টিফিকেট আমাদের সিকিউরিটি লেভেল ৭০ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে বিমানটাকে নিয়ে যারা খেলেছে তারা এখনও আছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যখনই আমি যেতে চাই তখনই একটা ঘটনা। আমার কাছে শত শত মেইল যাচ্ছে। আপনি আইসেন না, বিমানে আসবেন না। আমি বললাম, বিমানে আসব না মানে? যা হয় হোক, মরলে নিজের প্লেনেই তো মরব। নিজের প্লেনে মরলে মনে করব নিজের মাটিতেই মরলাম। আমি আমার বিমানেই যাব। আমি অন্য কোন এয়ারলাইন্সে যাব না। এবারের ঈদেও জঙ্গী হামলার হুমকি ছিল ॥ এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার ঈদ জামাতের সময় জঙ্গী হামলার হুমকি ছিল। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক চেষ্টায় কোন অঘটন ছাড়াই সব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের জঙ্গী হামলার পর থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও পুলিশ কড়া নজরদারি শুরু করে। কোথাও কোন ধরনের তথ্য পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি বলেন, সবাই জানেন যে, নানা নামে নানাভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নানা ধরনের থ্রেট কিন্তু দিতেই থাকে। সারাক্ষণ কিন্তু এগুলো আসছে। সবটা আমি বলে মানুষকে ভীত করতে চাই না। কিন্তু যতদূর পারি, এগুলোর পেছনে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেয়ার, তা আমরা নিয়ে থাকি। এবার ঈদের আগেও তেমন হুমকি ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’ঈদের জামাতের সময় আমি সত্যিই খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ এমন এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তা যেন কোনমতে না ঘটে।’ তিনি বলেন, তিনি দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, দেশে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সব সময় তার যোগাযোগ থাকে। এবারও বিভিন্ন ঈদ জামাত সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ‘মেসেজ’ চলে গেছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আমাদের পুলিশ বাহিনী, আমাদের র‌্যাব থেকে শুরু করে সকলেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। সেজন্য খুব সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাতগুলো সম্পন্ন হয়েছে। গুলশান হামলার এক সপ্তাহের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতে জঙ্গীদের হামলাচেষ্টার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একবার শোলাকিয়াতে একটা ঘটনা ঘটেছে, আরও চেষ্টা হয়েছে। এবার কিন্তু কেউ কিছু করতে পারেনি। জঙ্গীবাদ দমনে জনগণের সচেতনতাকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, জনগণ কিন্তু যথেষ্ট সচেতন। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এ ধরনের হুমকি মোকাবেলা করতে চাই। দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশেন জনগণের কাছে সব সময় আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন এ ব্যাপারে সজাগ থাকেন, সচেতন থাকেন। কারণ এসব ঘটনা আমাদের উন্নয়নের গতিধারাটা ব্যাহত করবে। দেশের দ্রুত অগ্রযাত্রা যেন কোনভাবেই ব্যাহত না হয় সেজন্য সবার সহযোগিতা চাই। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোন তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ খুন করে কেউ কি বেহেশত থেকে মেসেজ দিয়েছে ॥ সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মানুষ খুন করার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় ধারণা করা হতো কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা জঙ্গী হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইংরেজী মিডিয়ামের ছাত্রদেরও হঠাৎ মনে হলো, বেহেশতে যেতে হবে, মানুষ খুন করতে হবে। কোথায় লেখা আছে মানুষ খুন করলে বেহেশতে পাঠানো হবে? কেউ কি মানুষ খুন করে বেহেশতে পৌঁছে মেসেজ দিয়েছে?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওআইসি সম্মেলনে আমার লিখিত বক্তব্যে অনেক কিছু ছিল না। আমি লিখিত বক্তব্যের বাইরেও অনেক কথা বলেছি। আমি বলেছি, ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যদি কোন দ্বন্দ্ব থাকে, কেন আমরা আলোচনা করে এসবের সমাধান করতে পারছি না? ওআইসির এ ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নেয়া দরকার। আমাদের সমস্যাগুলো যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি, তাহলে আত্মঘাতী সংঘাত আর রক্তপাত হয় না। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশেও মানুষ খুন করে খুনীরা বলে, এই তো আমরা বেহেশতের কাছে পৌঁছলাম। বেহেশতে কে পৌঁছতে পেরেছে? যারা মানুষ খুন করেছে, তারা কি একজনও বেহেশতে পৌঁছতে পেরেছে? এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় তো বহু মেসেজ দেয়, কেউ কি পাঠিয়েছে যে, ‘আমি মানুষ খুন করে এখন বেহেশতে বসে আঙ্গুর ফল খাচ্ছি?’ দেখা যাচ্ছে, মুসলমানই মুসলমানদের হত্যা করছে।’ শেষ বিচার আল্লাহ করবেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে ভাল মুসলমান, কে ভাল মুসলমান না, কে সঠিক, কে সঠিক না, কে ভাল কাজ করছে, কে করছে না- তার বিচার করার দায়িত্ব আল্লাহ ও রাসুল আমাদের দেননি। কেন মানুষ আল্লাহর ক্ষমতা কেড়ে নেবে? পবিত্র কোরানে আল্লাহ বলেছেন, শেষ বিচার তিনি করবেন। সেখানে নিরীহ মানুষ মারলে বেহেশত পাওয়া যাবে, সেটা তো কোথাও লেখা নেই। আল্লাহ কি কাউকে মানুষ মারার ক্ষমতা দিয়েছেন?’ মুসলমান দেশগুলোর মধ্যেই খুনোখুনি হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আত্মঘাতী হচ্ছি। লাভবান কে হচ্ছে? যারা অস্ত্র বানাচ্ছে, তারা। যারা অস্ত্র দিচ্ছে, তারা। ওআইসিকে বলেছি, মুসলমান মুসলমানের রক্ত নিচ্ছে। এটা ওআইসিকে বন্ধ করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে আমার বাবাও মাথানত করেননি, আমিও করব না। যা সত্য তা-ই বলে যাব।’ রোহিঙ্গা ইস্যু ওআইসিতে তুলে ধরেছি ॥ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে সৃষ্ট সঙ্কটের বিষয়টি ইসলামী দেশগুলোর (ওআইসি) সম্মেলনে তুলে ধরেছি। সম্মেলনে এশিয়ার পক্ষ থেকে আমি বক্তব্য দিয়েছি। এতে জঙ্গীবাদ ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি। ভালভাবে তুলে ধরি এসব বিষয়। মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার বিষয়েও কথা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী জুলাইয়ে চীন সফরে যেতে পারি। আশা করি তখন রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। সবাই চায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাক। কিন্তু মিয়ানমারের সাড়াটা পাই না। তারাই আগ্রহী নয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী আছে। সবসময় টহলসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর সমস্যা দেখছি- ভলান্টিয়াররা (স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা) চায় না কোন রিফিউজি তাদের স্বদেশে ফিরে যাক। তালিকা যখন করলাম প্রত্যাবাসনের জন্য, তখন তারা (রোহিঙ্গারা) আন্দোলন করল তারা ফেরত যাবে না। এর পেছনে কারা কেন উস্কানি দেয়? অনেক সংস্থা চায় না তারা ফিরে যাক। কারণ গেলে তাদের চাকরি থাকবে না। ফান্ড আসবে না। কক্সবাজারে আরামে থাকা হবে না। প্রথমে জাপান সফরের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান সফরে কিছু চুক্তি সই করেছি। কয়েকটি প্রকল্পে তারা বিনিয়োগ করছে। ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি সই হয়েছে। ঢাকার হলি আর্টিজানে নিহত জাপানীদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে তাদের সমবেদনা জানানোর বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাপান সফর শেষে সৌদি সফরের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান থেকে সৌদি আরব যাই। যাওয়ার সময় পাইলট যখন জানালেন, আমরা চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে যাচ্ছি, তখন মনে হলো, কোথায় যাচ্ছি? নিজের দেশে নেমেই যাই, পরের দিন যাই (সৌদি আরবে)। তিনি এ সময় বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটাকে আন্তর্জাতিক রুটের সঙ্গে সংযুক্ত করার কাজ চলছে। এখানে জ্বালানি নেবে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলো। শুধু জ্বালানিই নেবে না, সুযোগ পেলে ঘুরবেও। যদি আমরা সেভাবে সি-বীচটাকে দেখাতে পারি। তিনি বলেন, কিছু কিছু এলাকা বিদেশী পর্যটকদের জন্য ডেডিকেটেড (তাদের উপযোগী) করে দেব। এটা করতে পারলে আমরা পর্যটনে আরও এগিয়ে যাব। সরকারপ্রধান সৌদি আরবে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেয়ার পর মক্কায় ওমরাহ পালন এবং মদিনায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর রওজা জিয়ারতের কথা তুলে ধরেন। সৌদির পর ফিনল্যান্ড সফরের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এটি শান্তিপূর্ণ দেশ। আইসিটিতে তারা খুবই এক্সপার্ট। এ খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশাল সোশ্যাল সেফটিনেট নিয়ে কাজ করছি ॥ সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশাল সোশ্যাল সেফটিনেট নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আসন্ন বাজেটেও এ বিষয়ে গুরুত্ব থাকবে। সন্তানসম্ভবা মা, দরিদ্র মা, কর্মজীবী মা প্রত্যেককে আলাদা ভাতা দেয়া হচ্ছে। বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত মাকে ভাতা দিচ্ছি। বিনাপয়সায় এতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বই দিচ্ছি যে অনেক দেশে ওই পরিমাণ জনসংখ্যাও নেই। প্রতিবন্ধীদের ভাতা, শিশুদের টিফিন দেয়াসহ তার সরকারের হাতে নেয়া নানা সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেয়ার উদাহরণ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একজন মানুষও যাতে না খেয়ে না মরে এবং সে যেন কর্মবিমুখ না হয়, এ কারণে ভাতার পরিমাণ এমন হবে যাতে সে ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে। তাকে কিছু না কিছু কাজ করতে হবে। কাজেই কর্মবিমুখ যেন না হয় সেটাকে মাথায় রেখে ভাতা নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম কল্যাণ বাজেট দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। তারা শিশু, দারিদ্র্য, গার্হস্থ্য, সহিংসতা মানসিক স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। আসন্ন বাজেটে আমাদের তেমন কল্যাণমূলক কিছু থাকবে কিনা বা কী কী বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হবে? এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দুই (নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ) দেশের আকার, জনসংখ্যা ইত্যাদির তুলনা করতে হবে। বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ, অথচ মানুষ ১৬ কোটি। তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডের মতো প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ দেশে যদি ১৬ কোটি মানুষ বসিয়ে দেয়া হয়, তারা কতটুকু কী করতে পারবে? এই প্রশ্নটা কেউ করে না, কিন্তু করা উচিত। আর তুলনা করলে সেটাও করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুমৃত্যু হার, মাতৃমৃত্যু হার কমিয়েছে। দারিদ্র্য কমিয়েছি। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছি। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। যত লেখার আছে লিখুক না ॥ সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিবেক যদি ঠিক থাকে যে, আমি সঠিক আছি, সেটাই হচ্ছে আমার কাছে বড়। তাতে কে কি লিখল সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথার কিছু নেই। কারোর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন যে, সম্পাদক এ কথাটা বলছেন। যদি সত্যিই এরকম অবস্থা হতো, তো উনি কি এই কথাটুকু বলার সাহস পেতেন, তিনি লিখতে পারেন না? যদি তার ওপরে সত্যি কোন চাপ থাকত। তাহলে এই কথাটাই বলার সাহস পেত কি না? আমার প্রশ্ন সেখানে। তিনি বলেন, কেউ তো চাপ দেয়নি। তবে হ্যাঁ, আপনি বলছেন যে, কোন একজন সম্পাদক, এটা ঠিক গণতান্ত্রিক একটা পথ থাকলে তাদের ভাল লাগে না। তাদের ভাল লাগে, যদি কোন অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকে, এমার্জেন্সি সরকার হোক বা মিলিটারি সরকার হোক, এরকম কিছু হলে তখন তারা ফরমায়েশি লেখা লিখতে পারে। তার এই কথা থেকে আমার মনে হয়, যে ভদ্রলোক এই কথাগুলো বলছেন তিনি কে? একবার এক টেলিভিশনের কোন একটা টকশোতে সে বলছিল, কোন একটা মিথ্যা নিউজ দেয়া হয়েছিল বলে তাকে ধরছিল কেউ। তখন উনি বলছিলেন, আমি কি করব, আমাকে ডিজিএফআই যেটা সাপ্লাই দিয়েছিল, আমি সেটাই ছাপিয়ে দিয়েছি, লিখে দিয়েছি। তার মানে দাঁড়াচ্ছেটা কি? আপনি যদি ওই কথার সঙ্গে এই কথাটার লিঙ্ক করেন, তাহলে ডিজিএফআই এখন তাকে কোন লেখা দিচ্ছে না। কাজেই উনি লিখতে পারছেন না। আমি তো এটাই বুঝব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি ফরমায়েশিটা লিখতে পারেন। উনার ওই বক্তব্যকে স্মরণ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উনি বলেছেন, ওখানে ডিজিএফআই যে তথ্য দিয়েছে, সেটাই উনি লিখেছেন। আমরা তো ডিজিএফআই দিয়ে কোন তথ্য দেয়াচ্ছি না! তাই এখন উনি নিজেই লিখতে পারছেন না। তার মানে কোন ফরমায়েশি লেখা না হলে ওনি লিখতে পারেন না। এটাই তো দাঁড়াচ্ছে। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি। উনি লিখুক না, উনার যা খুশি তাই লিখে যাক। লিখে তো যাচ্ছেই। আমি কি বলতে পারব কোনদিন আমি এসব পত্রিকার কোন সহযোগিতা পেয়েছি। জীবনেও না। আর বাংলাদেশে আসার পর থেকে কয়টা পত্রিকা ছিল আমাদের পক্ষে। পারলে সবাই আমার বিরুদ্ধেই লিখেছে। কাজইে আমরা এটাতে অভ্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি সবসময় মনে করি, আমর বিবেক যদি ঠিক থাকে যে, আমি সঠিক আছি, সঠিক বলছি, সঠিক করছি, সেটাই হচ্ছে আমার কাছে বড়। তাতে কে কি লিখল, সেটা দিয়ে নয়। তিনি আরও বলেন, আমি আমার দেশকে ভালবাসি, দেশের মানুষকে ভালবাসি। আমি যা কাজ করি দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করি, এই বিশ্বাসটা যদি আমার থাকে, তাহলে কে কোনটা ভাল বলল, মন্দ বলল, কি করল এটা নিয়ে তো আমার মাথাব্যথার কিছু নেই। আমি যেটা আমার এখানে বসে আমি যেটা দেখতে পারব, সেটা তো সবাই দেখতে পারবে না। তাহলে তো আমার জায়গায় তারা বসত, তাদের জায়গায় আমি থাকতাম। আমরা যে এতদিন বিরোধী দলে ছিলাম, সরকারে আসছি, এটা তো চতুর্থবার। বাংলাদেশ কি এগিয়ে যাচ্ছে না। এই সুফলটা কি সবাই পাচ্ছে না। বাংলাদেশের মর্যাদাটা কি বিশ্বে একটু উন্নত হচ্ছে না। হচ্ছে তো, এটাই সবাই জানে। এই যে সারাবিশ্ব আজকে তাকায় প্রশংসা করে, এটা কি সকলের ভাল লাগে না। ভাল লাগবে না তাদের, যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। যাদের ওই স্বাধীনতা বিরোধীদের পদলেহন করার অভ্যাস ছিল। তাদের ভাল লাগবে না। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ যে যেখানেই যাচ্ছে, সে বাংলাদেশ সকলের কাছে একটা দৃষ্টান্ত। সবাই অবাক হয়ে এটাই জিজ্ঞেস করে, এতো মানুষকে নিয়ে কিভাবে আপনারা এগোচ্ছেন। সরকারপ্রধান বলেন, কারও লেখায় আমি বাধা দেইনি তো। উনি লিখুক না। যত খুশি লিখবে। লিখছে তো। কিন্তু হঠাৎ বলে ফেললেন উনি লিখতে পারছেন না। আমি তো মনে করি, উনি ফরমায়েশি লেখা পাচ্ছেন না। উনি যদি চান ডিজিএফআই উনাকে সাপ্লাই দিক, উনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুক। তাহলেই সাপ্লাই দেবে। এর বাইরে আমি আর কি বলব।
×