ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেদহীন স্বস্তির ঢাকা, ফাঁকা রাস্তায় মনের মতো ঘুরে বেড়ানো

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৯ জুন ২০১৯

মেদহীন স্বস্তির ঢাকা, ফাঁকা রাস্তায় মনের মতো ঘুরে বেড়ানো

মোরসালিন মিজান ॥ ঢাকা এখন মেদহীন। ওজন অনেক কমে গেছে। মানুষের গিজগিজ নেই। যানজটহীন ফাঁকা রাস্তা। ফুরফুরে বাতাস বইছে। যেখানে খুশি যাওয়া যাচ্ছে। ফিরে আসতেও সময় লাগছে না। এই তো চাই। সুযোগ বুঝে যে যার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঈদের আনন্দটা এভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। গত বুধবার সারাদেশে একযোগে উদ্যাপিত হয় ঈদ-উল-ফিতর। এ উপলক্ষে সরকারী ছুটি ছিল তিন দিনের। এর সঙ্গে যোগ হয় শুক্র ও শনিবারের ছুটি। অনেকে আরও দুই একদিনের বাড়তি ছুটি নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ৯ থেকে ১৫ দিনের ছুটি। এই সুযোগে বহু মানুষ ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছেন। সিলেট কক্সবাজার রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি বান্দরবানসহ পর্যটন এলাকাগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। অনেকে আবার দেশের বাইরে বেড়াতে গিয়েছেন। এসবেরই প্রভাব পড়েছে ঢাকায়। ধারণা করা হয়, রাজধানী শহরের জনসংখ্যা এখন প্রায় পৌনে ২ কোটি। আর ঈদে ঢাকা ছেড়ে গেছে ১ কোটির বেশি মানুষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। তারা বলছেন, এখন যারা ঢাকায় আছেন তারা শহরের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও কম। অবশ্য এত হিসাব-নিকাশ না করলেও চলে। আশপাশে তাকালেই চোখে পড়ে নানা পরিবর্তন। বড় করে নিশ্বাস নেয়ার সুযোগ পেয়েছে অসংখ্য মানুষের পদভারে দেবে যাওয়া মেগাসিটি। এখনও বাসা বাড়ির দরজায় তালা। খুব কম বাড়িতেই আলো জ্বলছে। সেই কোলাহল নেই। সিঁড়ি ভাঙ্গার শব্দ নেই। উপভোগ করার মতো নির্জনতা। শূন্য ঢাকার সবচেয়ে পরিষ্কার ছবিটি দেখা যায় রাস্তায় নামলে। আগের তুলনায় প্রশস্ত মনে হচ্ছে রাস্তাগুলোকে। কোন কোন রাস্তা যেন খেলার মাঠ। রানওয়ে। যানজটও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! সেইসঙ্গে নেই শব্দ দূষণ। অহেতুক ভেঁপু বাজিয়ে শহর মাথায় তুলছে না কেউ। কানে আসছে না হাইড্রোলিক হর্ন। অনেক পেরেশানি দূর হয়ে গেছে। বিরাজ করছে একটা শান্ত পরিবেশ। যানজট মানুষ জট না থাকায় গতি পেয়েছে শহর। শনিবার দুপুরে বাইকে চড়ে ফার্মগেট থেকে সেগুনবাগিচা যেতে সময় লাগল মাত্র ১৪ মিনিট। রিক্সাযোগে শাহবাগ থেকে জিগাতলা যেতে লাগল ২০ মিনিটের মতো। যাতায়াতের সময় লক্ষ্য করা গেল, সব রাস্তাই ফাঁকা। গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। ব্যক্তিগত গাড়িও খুব বেশি চোখে পড়ল না। গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা বলে, ১ ঘণ্টারও কম সময়ে গোটা শহর অন্তত একবার চক্কর দেয়া যাবে। ফাঁকা ঢাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ছবিটাই বেশি দেখা যাচ্ছে। ভিআইপি সড়কে উঠে যাচ্ছে রিক্সা। ছুটে চলেছে ঘোড়ার গাড়ি। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের সামনে কিছু সময়ের জন্য থেমেছিল একটি টমটম। কথা প্রসঙ্গে কিশোর চালক বলল, ‘অন্য সময় পুরান ঢাকায় চালাই। কিন্তু এখন ধরেন গাড়ি নাই। রাস্তা খালি। তাই নতুন নতুন ঢাকায়ও দৌঁড়াইতাছি। দৌঁড়ানোর সুযোগ পেয়ে ঘোড়াও খুশি বলে জানায় সে! টিএসসি এলাকায় যথারীতি বসেছে ঈদ আড্ডা। এখানে কথা হয় দুই বন্ধু সুমন ও বোরহানের সঙ্গে। সুমন এসেছিলেন লালবাগ থেকে। সবুজবাগ থেকে এসেছিলেন বোরহান। দু’জনই রিক্সায় চড়ে এসেছেন বলে জানান। সুমন বলেন, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকে শুধু রিক্সায় চড়ছি। হুড খোলা রিক্সায় বসে চারপাশ দেখতে দেখতে যাওয়া আসা। বেশ লাগছে। সময়ও বেশি নষ্ট হচ্ছে না। সবদিক থেকে মেদ কমায় শহরের মুখটাকে ভাল করে দেখা যাচ্ছে। মতিঝিলের কথাই ধরা যাক, বাণিজ্যিক এলাকাটি বর্তমানে সব ধরনের কোলাহল মুক্ত। শাপলাচত্বরে ফুটে থাকা শাপলাটি চমৎকার দৃশ্যমান হচ্ছে। ফুটপাতগুলোও হাঁটার উপযোগী। দখলদাররা নেই। ঢাকার বাতাস সতেজ। গায়ে এসে লাগছে। নিশ্বাস নেয়া যাচ্ছে বুক ভরে। তবে আজ রবিবার থেকে বদলাতে শুরু করবে ছবিটা। আজ থেকে সকল সরকারী-বেসরকারী অফিস খুলছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানপাটও চালু হয়ে যাবে পুরোদমে। দেখতে দেখতে বাড়বে ব্যস্ততা। ছোটাছুটি। আবারও শুরু হবে জীবন সংগ্রাম। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ক্লান্ত হবে মানুষ। আবারও অপেক্ষা করবে ঈদের জন্য।
×