ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা করবে ওআইসি

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৪ জুন ২০১৯

 মামলা করবে ওআইসি

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে বর্তমানে অবস্থান করছেন সৌদি আরবে। সেখানে তিনি পবিত্র মক্কা নগরীতে ওআইসি তথা ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার ১৪তম সম্মেলনে এশীয় গ্রুপের পক্ষে ভাষণ দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলে ধরেন। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়প্রাপ্ত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মিয়ানমারে সম্মানজনক পুনর্বাসনে তিনি ওআইসির সহযোগিতা কামনা করেন। এদিকে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর অমানবিক পরিস্থিতির জন্য নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর এই জোট। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ওআইসি মহাসচিব বাংলাদেশের কক্সবাজার ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে যে বার্তাটি উঠে এসেছে তা হলো, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গার আইনগত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মামলা করতে ওআইসির সদস্য দেশগুলোর সব রকম সহযোগিতার প্রত্যাশা। এই সাহায্য-সহযোগিতা হতে পারে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এমনকি রাজনৈতিক। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওআইসি। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের উল্লেখ করে বলেন, মূলত এর মাধ্যমেই জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। অতঃপর এই মামলা রুজুর বিষয়ে তিনি স্বেচ্ছা তহবিল সংগ্রহ ও কারিগরি সহযোগিতার জন্য আবেদন জানান ওআইসির কাছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সদর দফতরে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপস্থিতিতে শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক প্রভাব শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে যোগদান করেন। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক গণহত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের বিষয়টি উঠে এসেছে বিস্তারিতভাবে। জাতিসংঘের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেদেশে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ ও বিতাড়নে সেনাবাহিনীর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও দায়দায়িত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। গণহত্যায় সেনাপ্রধানসহ অন্তত ছয়জন জেনারেলকে বিচারের আওতায় আনার কথাও বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অথবা সমমানের কোন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। এর পাশাপাশি সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর তথা সরকার প্রধান আউং সান সুচিকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেনাপ্রধানসহ ২০ জন ব্যক্তি ও প্রতিনিধিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ফেসবুকে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া জরুরী ও অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। ইতোপূর্বে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান, আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের মিয়ানমারে প্রবেশ ও কাজ করার সুযোগ সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। অতঃপর যত দ্রুত এটি বাস্তবায়িত হয় এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেদেশে পুনর্বাসিত হয় ততই মঙ্গল। আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়েরের জন্য ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। অতঃপর যত দ্রুত তা বাস্তবায়িত এবং রোহিঙ্গারা সেদেশে পুনর্বাসিত হয় ততই মঙ্গল। ইসলামিক ঐক্য সংস্থা ওআইসির এক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সমর্থনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অগ্রগতি।
×